ডেস্ক নিউজ : দিন যতই যাচ্ছে, ততই বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধন হচ্ছে। মানুষ পৃথিবী ছাড়িয়ে আকাশ-মহাকাশে যাত্রা করছে। মানুষ তার উদ্ভাবনী শক্তির মাধ্যমে আকাশচুম্বী প্রাসাদ নির্মাণ করছে। বড় বড় দালান-কোঠা তৈরি করছে। ভোগ-বিলাসের বাহারি আয়োজনে মেতে উঠছে। কিন্তু মহান আল্লাহর শক্তি ও ক্ষমতার সামনে এসব যে কিছুই নয়, তারই একটি দৃষ্টান্ত হয়ে গেল তুরস্কে ঘটে যাওয়া স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্পটি। দিনের কর্মযজ্ঞ শেষে ক্লান্ত-শ্রান্ত বদনে মানুষ বিছানায় আরাম করছে। ভোর তার আগমনী বার্তা পৌঁছানোর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। এমন মুহূর্তে ঘটে গেল এক প্রলয়ংকরী ভূমিকম্প।
নিমিষেই বিধ্বস্ত হয়ে গেল হাজারো আকাশচুম্বী প্রাসাদ। চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল মানুষের অহংকার। ধ্বংসাবশের নিচে চাপা পড়ল হাজারো নারী-পুরুষ শিশু কিশোর। সবার আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠলো। নড়েচড়ে বসল পুরো পৃথিবী। সকলে সহযোগিতার হাত বাড়ালো। এখনো পুরো দমে চলছে উদ্ধারের কাজ। আমরা মনেপ্রাণে দোয়া করি আল্লাহপাক ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ও জাতিকে হেফাজত করুন। আমীন।
এখন আমাদের মনে কৌতূহল জাগতে পারে এসব ভূমিকম্প কেন হয়? এর উদ্দেশ্যই কি? কুরআন ও সুন্নাহর বর্ণনা থেকে বোঝা যায়, এগুলোর উদ্দেশ্য হল মানব জাতিকে সতর্ক করা, যাতে তারা অন্যায় ও পাপ কাজ বর্জন করে। নিজেদের শুধরে নেয়। আল্লাহর প্রতি ধাবিত হয়। আপন কৃতকর্মে অনুতপ্ত হয়ে তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহর কাছে কাকুতি-মিনতি করে। এসব ছোটখাটো ঘটনা প্রত্যক্ষ করে মহাপ্রলয় কারী কেয়ামতের কথা স্মরণ করে।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, এখনো কি এই জনপদের অধিবাসীরা এ ব্যাপারে নিশ্চিন্ত যে, আমার আজাব তাদের ওপর রাতের বেলায় এসে পড়বে অথচ তখন তারা থাকবে ঘুমে অচেতন। (সুরা আল আ’রাফ-৯৭)
তারা কি আল্লাহর পাকড়াওয়ের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হয়ে গেছে? বস্তুত আল্লাহর পাকড়াও থেকে তারাই নিশ্চিন্ত হতে পারে, যাদের ধ্বংস ঘনিয়ে আসে। (সুরা আল আ’রাফ- ৯৯)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় শায়খুল ইসলাম আল্লামা তাকি উসমানি বলেন, আয়াতে উল্লেখিত মাকর শব্দের অর্থ হলো- এমন গুপ্ত কৌশল, যার উদ্দেশ্য যার বিরুদ্ধে তা প্রয়োগ করা হয় সে বুঝতে পারে না। আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে এমন কৌশলের অর্থ হচ্ছে, তিনি মানুষকে তাদের পাপাচার সত্ত্বেও দুনিয়ায় বাহ্যিক সুখ-সাচ্ছন্দ্য দিয়ে থাকেন, যার উদ্দেশ্য হয় তাদেরকে অবকাশ দেওয়া। তারা যখন সেই অবকাশের ভেতর উপর্যুপরি পাপাচার করেই যেতে থাকে, তখন এক পর্যায়ে আকস্মিকভাবে তাদেরকে পাকড়াও করা হয়।
সুতরাং সুখ-সাচ্ছন্দ্যের ভেতরও নিজ আমল সম্পর্কে মানুষের গাফেল থাকা উচিত নয়। বরং সর্বদা আত্মসংশোধনে যত্নবান থাকা চাই। অন্তরে এই ভীতি জাগরুক রাখা চাই যে, সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হলে এই সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য আমার জন্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে প্রদত্ত সুযোগ ও অবকাশও হতে পারে।
ভূমিকম্প কেন হয়?
মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, যে বিপদ-আপদই তোমাদের ওপর আসুক না কেন, তা হচ্ছে তোমাদের নিজেদের হাতের উপার্জন।’ (সুরা শূরা: ৩০)
বস্তুত সমাজে যখন অন্যায়-পাপাচার, জুলুম নির্যাতন বেড়ে যায়। মানুষ বেপরোয়া হয়ে যায়। আল্লাহর সীমারেখা লঙ্ঘন করে। বান্দার হক নষ্ট করে। তখনই আল্লাহ তায়ালা ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক বিভিন্ন দুর্যোগ দিয়ে থাকেন।
এ প্রসঙ্গে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক দীর্ঘ হাদিসে ইরশাদ করেন- ১. যখন গণিমতের মাল ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত হবে। ২. আমানতের খেয়ানত করা হবে, ৩. জাকাত আদায়কে জরিমানা মনে করা হবে, ৪. দুনিয়ার স্বার্থের জন্য ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করা হবে, ৫. পুরুষ স্ত্রীর অনুগত হয়ে মায়ের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করবে, ৬. বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে, আর পিতার সঙ্গে করবে দুর্ব্যবহার, ৭. মসজিদে উচ্চস্বরে শোরগোল (কথাবার্তা) হবে, ৮. পাপাচারী সমাজের নেতা হবে, ৯. নিম্নশ্রেণির লোকেরা দেশের শাসক হবে, ১০. ব্যক্তিকে সম্মান করা হবে তার অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য, ১১. গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের সয়লাব হবে, ১২. প্রকাশ্যে মদপান করা হবে, ১৩. পূর্ববর্তী উম্মতদের (সাহাবা, তাবে-তাবেঈন) প্রতি অভিসম্পাত করা হবে… ওই সময় তোমরা রক্তিম বর্ণের ঝড়ের (অ্যাসিড বৃষ্টি), ভূকম্পনের, ভূমিধসের, রূপ বিকৃতির (লিঙ্গ পরিবর্তন), পাথর বৃষ্টি প্রভৃতির জন্য অপেক্ষা করো।
একের পর এক বালা মুসিবতের অপেক্ষা করো যেমন মুক্তার দানা ছিঁড়ে ফেলা হলে তার দানাগুলো একের পর এক পড়ে যায়।( সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং ১২১১)
তাই ভূমিকম্পসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচতে হলে আমাদের পাপ বর্জন করতে হবে। অন্যায়ের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। দান-সদকার প্রতি অগ্রসর হতে হবে। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন। আমীন।
লেখক: মুফতি ও মুহাদ্দিস শেখ জনূরুদ্দীন (র.) দারুল কুরআন মাদ্রাসা, চৌধুরীপাড়া, ঢাকা।
কিউএনবি/আয়শা/০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩/সন্ধ্যা ৭:০৮