মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৫৩ পূর্বাহ্ন

৫-১১ বছর বয়সি শিশুদের করোনা টিকা দেওয়া শুরু

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৫ আগস্ট, ২০২২
  • ১৯৩ Time View

ডেস্ক নিউজ : দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে সুরক্ষায় ৫ থেকে ১১ বছর বয়সি শিশুদের ভ্যাকসিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ১১ আগস্ট পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন দেওয়া হলেও পুরোদমে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হচ্ছে আজ থেকে।

প্রথমে ১২টি সিটি কর্পোরেশন এলাকার স্কুলে করোনার টিকা দেওয়া হবে। পরে সারাদেশে ৫-১১ বছর বয়সি সব শিশুকে এই টিকা দেওয়া হবে। 

বুধবার ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আলেয়া ফেরদৌসী শিখা সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২৫ আগস্ট সকাল ৯টা থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১৫টি কেন্দ্রে এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ছয়টি কেন্দ্রে দেওয়া হবে শিশুদের প্রথম ডোজের ভ্যাকসিন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, শিশুদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি ফাইজারের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। সেই ভ্যাকসিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এনে ইতোমধ্যে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এর আগে, ১১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) এই কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। 

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ঢাকায় যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেওয়া হবে ভ্যাকসিন-
করোনার টিকা নেওয়ার পর প্রাপ্তবয়স্কদের অনেকেই জ্বর-শরীর ব্যথায় ভুগেছেন। তাই শিশুদের ক্ষেত্রে করোনার টিকা কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করবে কিনা অথবা কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে কিনা সেটি নিয়ে দুশ্চিন্তায় অভিভাবকরা। 

এ বিষয়ে যুগান্তরের সঙ্গে কথা হয় একাধিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের। তারা প্রায় একই রকম তথ্য দিয়ে বলেন, করোনা টিকায় শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। দেশে পরীক্ষামূলকভাবে যেসব শিশুকে এ টিকা দেওয়া হয়েছে, তাদের কোনো সমস্যা হয়নি।

দেশের প্রথিতযশা মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবিএম আবদুল্লাহ বুধবার এ বিষয়ে যুগান্তরকে বলেন, করোনার টিকা শিশুদের এ ভাইরাস থেকে সুরক্ষা দেবে। যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলোতে বহু আগে থেকেই শিশুদের টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। আমাদের দেশেও এগারোর্ধ্ব বয়সিদের টিকা দেওয়া হয়েছে। কোনো নেতিবাচক ফল তো পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া ৫ থেকে ১১ বছর বয়সি যেসব শিশুকে পরীক্ষামূলকভাবে করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করার রিপোর্ট আমরা পাইনি।
তিনি বলেন, করোনার টিকা শিশুকে শারীরিকভাবে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে— এমন আশঙ্কা থেকে ভ্যাকসিন গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকাটা আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হবে। কারণ মহামারি শেষ হয়ে যায়নি। এখন যেহেতু স্কুল-কলেজ পুরোদমে খুলে গেছে, শিশুরা একজন অন্যজনের সংস্পর্শে আসছে, তাই টিকা নিয়ে নেওয়াটাই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে। 

কোন কোন শিশুরা টিকা নিতে পারবে না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যাদের জ্বর আছে তাদের টিকা পরে নেওয়াই ভালো। টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, সামান্য জ্বর-অ্যালার্জি হতে পারে। এটি তেমন কিছু না, দু’একদিন গেলেই ঠিক হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের সম্মানিত সচিব এবং বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের সভাপতি ডা. বিল্লাল আলম বুধবার টেলিফোনে যুগান্তরকে বলেন, পাইলটিং করেই ৫ থেকে ১১ বছর বয়সি শিশুর করোনার টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাদের পরীক্ষামূলক দেওয়া হয়েছে তারা ভালো আছে, তাদের শরীরে এন্টিবডি তৈরি হয়েছে।  সুতরাং শিশুদের টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই।

শিশুদের করোনার টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে তিনি বলেন, বড়দের মতো শিশুরাও সুরক্ষা পাবে। একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, মহামারির শুরুতে দেশে মৃত্যুহার কত ছিল, এখন কত। টিকা নেওয়ার কারণে মৃত্যুহার কমে এসেছে। করোনা আক্রান্ত হলেও টিকা নেওয়ার কারণে ফুসফুস আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে। এটি শিশু-প্রাপ্তবয়স্ক সবার ক্ষেত্রেই। এতে মৃত্যুঝুঁকিও কমবে।

ডা. বিল্লাল আলম আরও বলেন, ৫ বছরের বেশি সব শিশুই টিকা নিতে পারবে। তবে যাদের ইনজেকশন নিলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি হওয়ার ইতিহাস রয়েছে, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে টিকা নেবে। সর্দি, অ্যালার্জি বা সামান্য জ্বর করোনার টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা নয় বলে মত এ মেডিসিন বিশেষজ্ঞের।
এদিকে ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক মাহফুজ আহমেদ ৫-১১ বছরের শিশুদের টিকা নেওয়ার বিষয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শিশুরাও ফাইজারের টিকা নিয়েছেন। আমাদের ৫-১১ বছর বয়সি শিশুরাও কাল থেকে এই টিকা নেবে। এই টিকার কোনো ক্ষতিকর প্রভাব নেই।  

শিশুদের কোভিড টিকা নেওয়ার উপকারিতা নিয়ে বারডেম হাসপাতালের অধ্যাপক ও শিশুরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আবিদ হোসেন মোল্লা বলেন, করোনার টিকা শিশুদের কোভিডের সংক্রমণ ও কোভিডে আক্রান্ত শিশুদের দ্রুত মারাত্মক অসুস্থ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিসহ নানা রকম জটিলতা এবং কোভিডপরবর্তী স্বাস্থ্য সমস্যা কমিয়ে দিতে সাহায্য করবে।

তিনি বলেন, যেসব শিশুর আগে থেকেই স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন হাঁপানি, ডায়াবেটিস, স্থূলতা ইত্যাদি থাকে, তাদের জন্য কোভিড টিকা নেওয়া খুবই জরুরি। কারণ  কোভিড সংক্রমণ হলে তাদের গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি অনেক বেশি।

কোভিড টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে আবিদ হোসেন মোল্যা বলেন, অন্য টিকার মতো করোনা টিকা নেওয়ার পরও ছোটখাটো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। তবে তা টিকার লাভের তুলনায় নেহাতই নগণ্য। যে কোনো টিকার মতোই এতেও টিকা দেওয়ার জায়গায় ব্যথা ছাড়াও ক্লান্তি লাগা, মাথাব্যথা, জ্বর, বমি বা বমি বমি ভাব ইত্যাদি হতে পারে। সাধারণত এগুলো এক থেকে দুদিন থাকার পর এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসমূহ বিরল।
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ৫-১১ বছর বয়সি সব শিশুকে টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

টিকাদান লক্ষ্যমাত্রা
১. সারাদেশের প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ ৫-১১ বছর বয়সী শিশুকে ভ্যাকসিন দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
২. ২৫ আগস্ট থেকে পরবর্তী ১৪ দিনব্যাপী ১২টি সিটি করপোরেশনের ৫৫টি জোন ও ৪৬৫ টি ওয়ার্ড এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
৩. প্রতিদিন ১ হাজার ৮৬০টি টিকাদান টিম কাজ করবে।
৪. ২৫ আগস্ট ১২টি সিটি করপোরেশনের ১৮৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিকাদান কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

ভ্যাকসিনের ধরন
১. শিশুদের উপযোগী ফাইজার ভ্যাকসিন।
২. ডোজের সংখ্যা- ২
৩. ডোজের পরিমাণ ০.২ এমএল
৪. প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের ব্যবধান- ৮ সপ্তাহ বা ৫৬ দিন

টিকাদানের জন্য রেজিস্ট্রেশন
১. সুরক্ষা ওয়েবপোর্টাল বা অ্যাপের মাধ্যমে ৫-১১ বছর বয়সসীমার শিশুদের রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে। রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে ১৭ ডিজিটের ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করতে হবে।
২. যে শিশুদের জন্ম সনদপত্র নেই, তাদের অভিভাবকরা জন্ম সনদপত্র সংগ্রহ করে রেজিস্ট্রেশন করবেন।
৩. বিদেশি পাসপোর্টধারী শিশুদের সুরক্ষা ওয়েবপোর্টাল বা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধিত হওয়ার পূর্বে নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নির্ধারিত ‘এক্সেল ছকে’ তথ্য দিতে করতে হবে।
কীভাবে ভ্যাকসিন পাবে

কোভিড-১৯ টিকা রেজিস্ট্রেশন কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে নিজ নিজ স্কুলে ও পরবর্তীতে কমিউনিটি পর্যায়ে (স্কুল বহির্ভূত শিশু) নিকটস্থ কেন্দ্র থেকে ভ্যাকসিন নিতে পারবে।

সূত্র : যুগান্তর

কিউএনবি/অনিমা/২৫.০৮.২০২২/সকাল ১০.২০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit