ডেস্ক নিউজ : ‘আমার বাবাকে কারা নিল? আমি বাবাকে দেখতে চাই, কথা বলতে চাই। সবার বাবা আছে, আমার বাবা কই? আমার আর ভালো লাগে না। আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন। ’ গতকাল শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘মায়ের ডাক’ আয়োজিত ‘গুম, খুন আর না’ শীর্ষক সভায় কথাগুলো বলছিলেন ২০১৩ সালে গুম হওয়া মো. সোহেলের মেয়ে সাবা ইসলাম।
সভায় নিখোঁজ পরিবারের সদস্যরা তাঁদের স্বজনদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান। এতে গুমের শিকার অর্ধশতাধিক ব্যক্তির স্বজন অংশ নেন। তাঁদের কারও বুকে সন্তানের, কারও বুকে বাবার, কারো বুকে স্বামীর আবার কারও বুকে ভাইয়ের ছবি ঝুলছিল। এ সময় স্বজনহারা মানুষ কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। গুমের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পরিবারের সদস্যদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান।
বাবাকে ফিরে পেতে শাহীনবাগ এলাকা থেকে সভায় উপস্থিত হয় হাফসা ইসলাম। হাফসা জানায়, তার বাবা সাজেদুল ইসলাম সুমন ২০১৩ সালে নিখোঁজ হন। তখন সে খুব ছোট। হাফসা এখনো বাবার অপেক্ষায় থাকে। যখন তার বাবা নিখোঁজ হন, তখন সে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। এখন একাদশ শ্রেণিতে পড়ছে। হাফসা বলে, ‘আমার বাবার চেহারাটাই মনে আছে। ছবি দেখে আর কিছু মনে করতে পারি না। ’একই বছর নিখোঁজ হন বংশালের ১২ বছর বয়সী শিশু শাকিলা সুলতানার বাবা মো. সোহেল। তিনি বংশাল থানা ছাত্রদলের সহসভাপতি ছিলেন। বাসা থেকে তাঁকে তুলে নেওয়া হয় বলে জানায় পরিবারের অন্য সদস্যরা।
২০১৯ সালে বাবা ইসমাইল হোসেন বাতেনকে হারানো আনিসা ইসলাম বলেন, ‘আমার বাবা কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। ২০১৯ সালের ১৯ জুন বাবাকে মিরপুরের দোকান থেকে একটি বাহিনীর লোকজন নিয়ে যায়। এরপর সংশ্লিষ্ট সব স্থানে লিখিত অভিযোগ করা সত্ত্বেও কোনো সুরাহা হয়নি। আমি জানতে চাই, আমার বাবার দোষ কী?’
সভায় স্বজনদের ফিরে পাওয়ার দাবি জানান ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি রামপুরা থেকে গুম হওয়া ছাত্রলীগ নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন তপুর মা সালেহা বেগম। ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর রাজধানীর তেজগাঁওয়ের শাহীনবাগ থেকে গুম হওয়া সাজিদুল ইসলাম সুমনের বোন মারুফা আক্তার, ২০১৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি গুম হওয়া নূর আলমের স্ত্রী রীনা বেগম, ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল রাজধানীর সানারপার থেকে গুম হওয়া ইকবালের স্ত্রীর ভাই মোস্তফা কামালসহ অন্তত ৩৫টি পরিবারের সদস্য।
কিউএনবি/আয়শা/২১ অগাস্ট ২০২২, খ্রিস্টাব্দ/দুপুর ২:২৮