শহিদ আহমেদ খান সাবের,সিলেট প্রতিনিধি : নাগরী গবেষক ও শিক্ষানুরাগী এম এ জলিল চৌধুরীর জীবন ও কর্ম নিয়ে ‘নাগরী গবেষক শিক্ষানুরাগী এম এ জলিল চৌধুরী স্মারকগ্রন্থ’র প্রকাশনা অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) রাত আটটায় সিলেট কেন্দ্রিয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাহত্য আসর কক্ষে প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জলিল চৌধুরী ইন্সটিটিউট অব এডুকেশন রিসার্চ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, এম এ জলিল চৌধুরী একজন মানবিক ও গুণী মানুষ ছিলেন। শিক্ষাবিস্তারে তিনি সীমাহীন কাজ করেছেন। কর্মজীবনের বাইরে তিনি সিলেটি নাগরী লিপি নিয়ে অনেক কাজ করেছেন। নাগরী লিপি নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি তিনিই সর্বপ্রথম কম্পিউটারে নাগরী ফ্রন্ট উদ্ভাবন করেন। সেই ফ্রন্ট দিয়ে জলিল চৌধুরী অন্তত ১৫টি বই প্রকাশ করেছেন।
বক্তারা আরও বলেন, শেষ জীবনে তিনি শারিরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। তারপরেও তিনি মানসিকভাবে অনেক শক্ত ছিলেন। অসুস্থতা নিয়েও লেখালেখি করেছেন। উত্তরাধীকারি সূত্রে তিনি একজন মরমী সাধক ছিলেন। তিনি তাঁর পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে যুক্তরাজ্যে বসবাস করলেও তিনি ছুটে আসতেন গ্রামের বাড়িতে। জন্মভূমির প্রতি তাঁর মমত্ববোধের কারণে নিজ এলাকায় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন। সে প্রতিষ্ঠানে সপ্তাহে দুইদিন নাগরী লিপি নিয়ে ক্লাস করান শিক্ষকরা। এছাড়াও মসজিদ মাদরাসায় অনেক সহযোগিতা করে গেছেন তিনি।
বক্তারা বলেন, সিলেটের ঐতিহ্য নাগরী লিপি কেবল সিলেট নয় ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনাসহ খুলনা অঞ্চলেও এর চর্চা হতো। যারা প্রচলিত শিক্ষায় পিছিয়ে ছিল তারা নাগরী লিপি পড়তো। আগেরকার সময়ে প্রতিটি ঘরে ঘরে নাগরীলিপিতে পুথি পড়া হতো। কিন্তু এখন হারিয়ে যাচ্ছে এ লিপি।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, এখন আর নাগরী ভাষা শেখার প্রয়োজন নেই। তবে এটা যেন হারিয়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নাগরী লিপি বাঁচিয়ে রাখতে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাঁরা আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন আজীবন। সিলেটে নাগরী লিপি সংরক্ষণে একটি মিউজিয়াম স্থাপিত হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরে এটি উদ্বোধন হতে পারে। এ মিউজিয়ামে জলিল চৌধুরীর মত নাগরী গবেষকদের স্মৃতি ও গবেষণাপত্র জায়গা পাাবে।
এম এ জলিল চৌধুরীর পত্নী ও জলিল চৌধুরী ইন্সটিটিউট অব এডুকেশন রিসার্চের চেয়ারম্যান ফাতেমা জলিল চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. নাজিয়া চৌধুরী। অনুষ্ঠানে মূখ্য আলোচক হিসেবে নাগরী লিপির আদ্যোপান্ত তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন নাগরী লিপি ও লোকসাহিত্য গবেষক মোস্তাফা সেলিম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক, লেখক ও মাসিক আল ইসলাহ’র সম্পাদক সেলিম আউয়াল।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এম এ জলিল চৌধুরীর ভাতিজা খায়রুল ইসলাম চৌধুরী, জালালাবাদ গ্যাসের ডিজিএম ফয়জুল আকতার চৌধুরী, জলিল চৌধুরী ইন্সটিটিউট অব এডুকেশন রিসার্চের অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ, জলিল চৌধুরীর জামাতা যুক্তরাজ্য প্রবাসী শাহ আখলাকুর রহমান ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী কাজী মাসুদ। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য রাখেন জলিল চৌধুরীর একমাত্র ছেলে যুক্তরাজ্য প্রবাসী মহিব চৌধুরী।
কিউএনবি/আয়শা/১০ অগাস্ট ২০২২, খ্রিস্টাব্দ/রাত ৮:৫৮