শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ০৮:২২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
ইন্দোনেশিয়ার পর্যটন দ্বীপ বালিতে ফেরি ডুবে ৫ জনের মৃত্যু, বহু নিখোঁজ বড় অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে দেশ, এখনই নিয়ন্ত্রণ জরুরি স্ত্রীর কিডনিতে জীবন ফিরে পেয়ে পরকীয়ায় জড়ালেন স্বামী! চকবাজারে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আহত শিক্ষার্থীর মৃত্যু দৌলতপুরে তুচ্ছ ঘটনায় প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত : আটক-১ মনিরামপুরে ফ্যাসিষ্ট মাদকবিক্রেতা সন্ত্রাসীরা কোন প্রকার ছাড় পাবেনা মনিরামপুরে শিক্ষককের ১৫ দিনব্যাপী আইসিটি প্রশিক্ষনের সমাপনী অনুষ্ঠান পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় চৌগাছা পৌরসভায় বৃক্ষ রোপন কর্মসূচি জুমার নামাজ পড়তে না পারলে করণীয় ‘গরুর মাংস খান রণবীর’, ভারতজুড়ে বির্তকে-সমালোচনার ঝড়

তুরস্কের বায়রাক্টার টিবি-টু ড্রোন কী? কেন কিনছে বাংলাদেশ?

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ৩১ জুলাই, ২০২২
  • ১৫৭ Time View

ডেস্ক নিউজ : তুরস্কের কাছ থেকে বায়রাক্টার টিবি-টু ড্রোন কিনছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি এ নিয়ে ড্রোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী। এই ক্রয় চুক্তির বিষয়ে নিশ্চিত করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর।

বাংলাদেশ এই প্রথম সামরিক অস্ত্র বহনে ও হামলায় সক্ষম ড্রোন কিনতে যাচ্ছে।

এই ড্রোন এর আগে বিশ্বের বেশ কয়েকটি যুদ্ধে ব্যবহৃত হতে দেখা গেছে। বিশেষ করে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধে এই ড্রোনের কর্মক্ষমতা অনেক দেশে আগ্রহ তৈরি করেছে।

গত কয়েক বছর ধরেই তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ক বাড়ছে। দেশটি থেকে কামানের গোলা, রকেট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, সাঁজোয়া যান, মাইন থেকে সুরক্ষাকারী যান কিনেছে বাংলাদেশ।

তুরস্কের কাছ থেকে বাংলাদেশ কতোগুলো ড্রোন কিনছে, কবে নাগাদ সেগুলো পাওয়া যাবে তার বিস্তারিত জানা যায়নি।

কিন্তু বায়রাক্টার টিবি-টু ড্রোন সম্পর্কে কী জানা যায়? কেন এই ড্রোনের প্রতি বিশ্বের সামরিক বাহিনীগুলোর আগ্রহ বাড়ছে?

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে মোড় ঘুরিয়েছে বায়রাক্টার টিবি-টু ড্রোন

তুরস্কের বাইকার টেকনোলজি কোম্পানি ২০১৪ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে বায়রাক্টার টিবি-টু ড্রোন উৎপাদন ও বিক্রি করতে শুরু করলেও রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধে এই ড্রোন বিশেষ নজর কেড়েছে।

এই ড্রোন ব্যবহার করেই রাশিয়ার মস্কভা যুদ্ধজাহাজ, অস্ত্রের গুদাম, কয়েকটি কমান্ড সেন্টার এবং রাশিয়ান লক্ষ্যবস্তুতে সফলভাবে হামলা করেছে ইউক্রেন। যাতে রাশিয়ার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

নিকট অতীতে সিরিয়া ও লিবিয়ার সংঘাতে এবং অতি সম্প্রতি নাগর্নো কারাবাখের যুদ্ধে এই ড্রোনের কার্যকর প্রয়োগ দেখা গেছে। এর পরই এই ড্রোনের চাহিদা বেড়ে গেছে।

বিশ্বের ১৪টি দেশ তুরস্ক থেকে এই ড্রোন কিনেছে। এদের মধ্যে ইউক্রেন ছাড়াও আছে আজারবাইজান, ইথিওপিয়া, লিবিয়া. মরক্কো, পোল্যান্ড, কাতার, তুর্কমেনিস্তান। আরও ১৬টি দেশ ড্রোন কেনার জন্য চুক্তি করেছে বলে কোম্পানির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

কেন চাহিদা বাড়ছে বায়রাক্টার ড্রোনের

বায়রাক্টার টিবি-টু নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বাইকারটেক ডটকমের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এটি হচ্ছে এমন এক ধরনের যুদ্ধাস্ত্র যা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, নজরদারি এবং হামলায় অংশ নিতে পারে।

এই ড্রোনে একটি অত্যন্ত উন্নত প্রযুক্তির ইলেকট্রো-অপটিক্যাল ক্যামেরা আছে। তার সাথে আছে ডাটা-লিংক সিস্টেম এবং দুই থেকে চারটি পর্যন্ত বিস্ফোরক – যা প্রিসিশন-গাইডেড অর্থাৎ উড়ে গিয়ে নির্ভুল নিশানায় লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারে।

এর ফলে এটা দিয়ে আগে থেকে লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করা যায়, এবং তার পর দিক-নির্ণয় করে চলতে সক্ষম বোমা দিয়ে তাদের ওপর আঘাত হানা যায়।

বাইরাকটার টিবি টু ড্রোন

এটি জনপ্রিয় হওয়ার আরেকটি কারণ হলো, মূল কমান্ড সেন্টার থেকে দূরে কোথাও একটি কন্টেইনার বা ট্রাকে মোবাইল বেজ স্থাপন করে সহজে ড্রোন পরিচালনা করা যায়। ফলে মিশনের প্রয়োজনে যেকোনো স্থানে নিয়ে গিয়ে ড্রোন উড্ডয়ন বা হামলা চালানো যায়।

২০১৪ সাল থেকে তুরস্কের সেনা বাহিনী ও ন্যাশনাল পুলিশ এই ড্রোন ব্যবহার করছে।

বায়রাক্টার টিবি-টু সম্পর্কে যেসব তথ্য জানা যায়:

বায়রাক্টার টিবি-টু ড্রোনে চারটি লেজার গাইডেড স্মার্ট রকেট সংযুক্ত করা যায়, যা লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুলভাবে আঘাত করতে পারে।

ড্রোনটি ঘণ্টায় ১২৯ কিলোমিটার থেকে শুরু করে ২২২ কিলোমিটার গতিতে উড়তে পারে।
বেজ স্টেশন থেকে তিনশো কিলোমিটার দূর পর্যন্ত ড্রোনটি চালানো যায়।
এর ভেতরে একমন কিছু সেন্সর রয়েছে, যার ফলে জিপিএসের ওপর পুরোপুরি নির্ভর না করে ন্যাভিগেশন করতে পারে।
সর্বোচ্চ সাতশো কেজি ওজন নিয়ে ড্রোনটি উড়তে পারে। মোট জ্বালানি ধরে ৩০০ লিটার।
ড্রোনটি টেক-অফ, ল্যান্ডিংসহ পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হতে পারে। এর কম্পিউরাইডজ সিস্টেমে তিনটি অটো পাইলট প্রোগ্রাম রয়েছে।
বায়রাক্টার টিবি-টু ১৮ হাজার ফিট উচ্চতায় থেকে কার্যক্রম চালাতে পারে। তবে আকাশে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ফিট পর্যন্ত উড়তে এবং সর্বোচ্চ ২৭ ঘণ্টা তিন মিনিট ওড়ার রেকর্ড রয়েছে।
ড্রোনে থাকা রিয়েল ইমাজেরি টাইম ট্রান্সমিশন সিস্টেমের ফলে একাধিক ব্যবহারকারী একই সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে উচ্চমানের ভিডিও দেখতে পারে।
ওয়েব ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন হওয়ার কারণে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ট্যাবলেট বা মোবাইলেও নজরদারি করা সম্ভব।
তবে এসব ড্রোনের একটি দুর্বল দিক হলো, এগুলো আকারে বড় আর তুলনামূলক গতি কম। ফলে এগুলো গুলি করে নামানো সহজ।

ড্রোন কিনে বাংলাদেশের কী লাভ হবে?

সম্প্রতি বাংলাদেশের দৈনিক প্রথম আলোর সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসান তুরান জানিছেন, তুরস্কের ড্রোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বাইকার টেকনোলজির সঙ্গে ড্রোন কেনার ব্যাপারে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী একটি চুক্তি করেছে।

এই চুক্তির ব্যাপারে নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর জনসংযোগ পরিদপ্তর আইএসপিআর।

ভবিষ্যতের সমরাস্ত্র ও যুদ্ধের কৌশল কেমন হবে?

বাংলাদেশ পিস এন্ড সিকিউরিটিজ স্টাডিজ এর প্রেসিডেন্ট, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব) এ এন এম মুনীরুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ”সামরিক সক্ষমতার যে আধুনিয়কান করা হচ্ছে, সব দেশে, তার মধ্যে ড্রোন একটা প্রধান প্রযুক্তি হয়ে আসছে। সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যে ক্ষমতা ও ব্যয় করা হচ্ছে, তাতে এটা খুবই আকর্ষণীয় সরঞ্জাম। বিশেষ করে নাগার্নো-কারাবাখে ড্রোনের যে ভূমিকা দেখা গেছে, তাতে অনেক দেশই এখন ড্রোনের প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করেছে।”

”সেই কারণে বাংলাদেশও এর প্রতি ঝুঁকছে। বিশেষ করে টার্কিশ বখতিয়ার ড্রোন ক্ষমতা ও বাজেটের দিক থেকে খুব ভালো একটি পছন্দ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যে সরঞ্জাম আধুনিকায়ন করার প্রক্রিয়া বা বরাদ্দ রয়েছে, তাতে এ ধরনের ড্রোন খুবই উপযোগী হবে,” তিনি বলছেন।

তবে বাংলাদেশের যেখানে কারও সঙ্গে যুদ্ধ বা বৈরিতা নেই, সেখানে এসব ড্রোন কতটা কাজে আসবে, জানতে চাইলে মি. মুনীরুজ্জামান বলছেন, ”যুদ্ধ না থাকলেও সামরিক বাহিনীর প্রস্তুতি বা সক্ষমতা প্রয়োজন রয়েছে। সেখানে ড্রোন অবশ্যই অনেক সহায়তা করবে। কোন দেশের সঙ্গে যুদ্ধ না থাকলেও বাহিনীগুলোর প্রস্তুত থাকার দরকার আছে। এভাবে সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা বজায় রেখেই শান্তি নিশ্চিত করা যায়। সেই প্রস্তুতির অংশ হিসাবেই বাংলাদেশের ড্রোন কেনার দরকার, তাই বাংলাদেশ কিনছে বলে আমি মনে করি।”

বায়রাক্টার টিবি-টু ড্রোনের দাম

এই পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঁচশোর বেশি বায়রাক্টার টিবি-২ ড্রোন সরবরাহ করা হয়েছে বলে কোম্পানি জানিয়েছে।

তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ধরনের ড্রোনের ক্রেতা বাড়ছে বলে কোম্পানি জানিয়েছে।

তুরস্কের কাছ থেকে কত টাকায় বা কতগুলো ড্রোন বাংলাদেশ কিনতে যাচ্ছে, তা জানা যায়নি।

তবে একেকটি ড্রোন অন্তত ১০ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যে তুরস্ক বিক্রি করে থাকে। যদিও ইউক্রেনের কাছে একেকটি বিক্রি করা হয়েছে সাত লাখ মার্কিন ডলারে।

এই দামে কেনা হলে বাংলাদেশের জন্য প্রতিটি ড্রোনের দাম পড়বে কম বেশি ১০ কোটি টাকা।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

কিউএনবি/অনিমা/৩১.০৭.২০২২/ রাত ১১.২১

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit