মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৫০ অপরাহ্ন

কুড়িগ্রামের লটকনের স্বাদ ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে

শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম ।
  • Update Time : বুধবার, ২০ জুলাই, ২০২২
  • ২৩২ Time View

শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম : গাছের মগডালে থোকায় থোকায় ঝুলছে লটকন। লোভনীয় এই সুস্বাদু ফলটির দিকে তাকালেই জিভে জল এসে যায়। এর আস্বাদন পায়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। কুড়িগ্রাম জেলায় এবার ব্যাপক হারে চাষ করা হয়েছে লটকন। ফলন বিপর্যয়ের কারণে কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়লেও এবার দ্বিগুণের উপর দাম পাওয়ায় তাদের মুখের চওড়া হাসি কপাল পর্যন্ত ঠেকেছে।

ভিটামিন ‘সি‘ সমৃদ্ধ এই ফল চাষ করতে লাগে না কোন ক্ষতিকর রাসায়নিক সার বা কীটনাশক। একটু যত্ন এবং আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করতে পারলেই প্রচুর অর্থ উপার্জন করা যায়। এই ফলের প্রধান শত্রু পিঁপড়া ও আঁচা। এদের থেকে দূরে থাকতে হলেএকটু ডালপালা ছাটাই করতে হবে, সময়মতো স্প্রে ও সার দিতে হবে। তাহলেই পিঁপড়া ও আঁচা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

কুড়িগ্রাম জেলায় প্রায় ৮ থেকে ৯ শতাধিক কৃষক লটকন চাষে সম্পৃক্ত বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। আর এই ব্যবসার সাথে ৫০-৬০ জন ব্যাপারী জড়িত বলে জানা গেছে।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের সন্নাসী গ্রামের কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, কুড়িগ্রাম জেলার লটকনের চাহিদা রয়েছে দেশ জুড়ে। এখানকার লটকনের স্বাদ, সাইজ ও মান ভাল হওয়ায় প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা ছুটে আসেন এখানকার লটকন কিনতে। গত বছর আমরা ১ হাজার ২শ’ থেকে ১ হাজার ৪শ’ টাকা মণ দরে লটকন বিক্রি করেছি। এবার লটকনের মন ২ হাজার ৬শ’ টাকা থেকে ৩ হাজার ২শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি করতে পারছি। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য এবার লটকনের ফলন ভাল হয়নি। ফলন ভাল হলে চাষীরা প্রচুর পরিমাণে লাভবান হতো।

একই এলাকার শিবরাম গ্রামের চাষী জয়নাল মিয়া জানান, আমরা শুনেছি ১১ থেকে ১২টা দেশে আম রপ্তানী হয়। দেশের বাইরে লটকনেরও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কৃষি বিভাগ ও সরকার যদি চেষ্টা করতো তাহলে দেশের লটকন বাইরে বিক্রি করে আমরা লাভবান হতে পারতাম। তবে আমাদের কষ্টের জায়গা হলো স্থানীয় কৃষি বিভাগ এই সেক্টরটিকে ঠিকমতো দেখভাল করেন না। এর কারণে প্রায় সময় ফলন বিপর্যয়ের মুখে পড়ে চাষীরা। এসময় পরামর্শ দেয়ার মতো কাউকে পাওয়া যায় না।

কাঁঠালবাড়ী বাজারের পাইকার ও দেবালয় গ্রামের তাজুল ইসলাম জানান, আগে আমরা নিজেরাই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে গিয়ে লটকন বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন সবকিছুতে মূল্যবৃদ্ধির কারণে সেটা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে এক ক্যারেট লটকনের দাম ছিল একশ টাকা এখন সেটা পরিবহণে খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে তিনশ টাকায়। এছাড়াও লটকন সংগ্রহ করতে শ্রমিকদের একশ টাকা দিলেই হতো। এখন দিতে হচ্ছে চারশ টাকা করে। ফলে আমরা আগের তুলনায় কম লাভবান হচ্ছি। আর সব ক্ষেত্রে সরকার অনুদান দিলেও এই ক্ষেত্রে কোন অনুদান দেয়া হয় না।

সিরাজগঞ্জ থেকে লটকন কিনতে আসা পাইকার আব্দুল কুদ্দুস জানান, এখানকার লটকন খুব সুস্বাদু, দামও তুলনামূলক কম। নরসিংদীর লটকন ৩ হাজার ৫শ’ টাকা মণ। এখানকার লটকন ৩ হাজার টাকার মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে। এখানকার লটকন কিনতে ঢাকা, বগুড়া, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহ, সিলেট, যশোর, বরিশাল, কুয়াকাটা, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এসেছে।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শামসুজ্জামান জানান, কুড়িগ্রাম জেলার মধ্যে সদর উপজেলা, রাজারহাট, ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী ও উলিপুর উপজেলায় লটকন চাষ করা হয়। বিশেষ করে সুপারী গাছের সাথে এই লটকন অল্প খরচে চাষ করে কৃষকরা লাভবান হয়। তবে তারা যদি একটু যত্নবান হতো, আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করতো তাহলে এই খাত থেকে তারা প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারতো।

বিদেশে রপ্তানীর ব্যাপারে তিনি জানান, প্রাপ্যতা ও মান অর্জন করতে পারলে অবশ্যই বিদেশে পাঠানো সম্ভব। আমরা সেই জায়গা থেকে এখনো বেশ কিছুটা দূরে রয়েছি।

বিপুল/ ২০.০৭.২০২২/ রাত ৮.৫৩

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit