ডেস্কনিউজঃ ঈদুল আজহার আর মাত্র একদিন বাকি। কোরবানির পশু কিনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। একইভাবে জেলার গরুর খামারিরা তাদের গরু বিক্রি নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। বাজারে ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি। বড় গরুর চাহিদা কম থাকায় বিপাকে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খামারিরা।
অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে অধিকাংশ বড় গরু। সিলেট ও সুনামগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলে বন্যার কারণে ব্যাপারিরা না আসায় বড় গরু বিক্রি হচ্ছে না বলে জানান বিক্রেতারা। ফলে এবারও ব্যাপক লোকসান গুনতে হচ্ছে গো-খামারিদের।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় চাহিদা রয়েছে ৫৩ হাজার পশুর। এ ছাড়া, আরও প্রায় ২৫ হাজার পশু সাতক্ষীরা থেকে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়েছে।
সরেজমিনে আবাদের হাটের ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশি ২ মণ বা আড়াই মণ ওজনের ছোট-ছোট গরুর বেশ চাহিদা রয়েছে। সাতক্ষীরার খামারে পালন করা বড় জাতের ফ্রিজিয়ান গরু সাধারণত সিলেট অঞ্চলে বিক্রি হয়। সিলেট অঞ্চলের ব্যাপারীরা সাতক্ষীরার আবাদের হাট, পারুলিয়া হাটসহ অন্যান্য হাট থেকে বড় জাতের গরু কিনে নিয়ে যান। কিন্তু সিলেট অঞ্চলে বন্যা হওয়ায় বড় জাতের গরু কেনাবেচা নেই বললেই চলে।
এবিষয়ে আবাদের হাটে ৪টি বড় জাতের গরু নিয়ে আসা আব্দুল হাকিম বলেন, গতবারের চেয়ে গো-খাদ্যের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। খরচ অনুপাতে মণপ্রতি বিক্রি হওয়া লাগে ৩০ হাজার টাকা। সেখানে ২৪ হাজার টাকার বেশি কেউ দাম বলছে না। তা-ছাড়া তার কমপক্ষে ৮ মণ ওজনের সবচেয়ে বড় গরুটা কিনতে কেউ আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
গরু কিনতে আসা ইকবাল হোসেন লাভলু জানান, গতবার গরুর দাম ছিল ২০ হাজার টাকা মণ। আর এবার ২৫ থেকে ২৬ হাজার টাকা মণ। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আবার কোরবানিও করতে হবে। তাই দেড়মণ ওজনের ছোট একটি দেশি গরু কিনেছি।
গরু ব্যবসায়ী বাহারুল ইসলাম জানান, খামার থেকে ফ্রিজিয়ান জাতের গরু কিনে এনেছি। লাভ তো দূরের কথা, বড় গরু কেউ ছুঁয়েই দেখছে না। সিলেট অঞ্চল থেকে প্রত্যেক বছর প্রচুর ব্যাপারি আসতো বড় গরু কিনতে। কিন্তু এবার ওই অঞ্চলে বন্যা হওয়ায় কোনো ব্যাপারি আসেনি। তাই বড় গরুর ক্রেতা নেই।
আবাদের হাট গরুর হাটের ইজারাদার হাবিবুর রহমান বলেন, পশু কেনা-বেচা এবার সেভাবে জমেনি। অন্যবার প্রতিদিন কমপক্ষে ৪শ’ গরু বিক্রি হতো। আর এবার বড়জোর টেনে-টুনে ১ থেকে ২শ’ গরু বিক্রি হচ্ছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এবিএম আব্দুর রউফ জানান, জেলায় পশু সংকট নেই। কয়েকমাস আগে থেকে আমরা খামারিদের দিকে নজর রেখেছি, যাতে অনুনোমোদিত ওষুধ খাইয়ে কেউ গরু মোটাতাজা করতে না পারে। গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবছর গরুর দাম অন্যবারের চেয়ে একটু বেশি বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সাল পর্যন্ত সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী ১৩টি পয়েন্ট (খাটাল) দিয়ে ভারত থেকে আসত হাজার-হাজার গরু। সাতক্ষীরা থেকে এসব ভারতীয় গরু দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি হতো। বাংলাদেশে গরু রপ্তানিতে বিজেপি সরকারের কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকায় সাতক্ষীরায় ভারতীয় গরু আসা বন্ধ হয়ে গেছে।
বিপুল/০৮.০৭.২০২২/ দুপুর ২.৩১