বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:০৭ অপরাহ্ন

ব্রহ্মপুত্র নদী গর্ভে ২৫ বার বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব মহিউদ্দিন

রাশিদুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি ।
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৭ জুলাই, ২০২২
  • ১৩৯ Time View

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : পুরো নাম মহিউদ্দিন। বাবা শিতল শেখ। বয়স ৮৫’র কোটায়। ২ মেয়ে, কোন ছেলে সন্তান নেই। বিয়ে হওয়ায় ২ মেয়ে স্বামীর সংসারে। এই বয়সে মহিউদ্দিন কমপক্ষে ২০ থেকে ৫৫ বার বাড়ি ভাঙার দৃশ্য দেখেছেন। ব্রহ্মপুত্রের ভয়াল থাবায় প্রতি বছর গ্রাম থেকে গ্রাম, মাঠ-ঘাট প্রান্তর বিলীন হয় চোখের নিমিষেই। এবার আগাম বন্যায় হারিছেন থাকার শেষ সম্বল টুকু। আশ্রয় নিয়েছেন দূর-সম্পর্কের মামার বাড়িতে। মামা আব্দুল জলিলও বয়সের ভাওে ন্যুয়ে পড়েছেন। মহিউদ্দিন শারীরিক প্রতিবন্ধী। জরাজীর্ণ ঘর আর কর্দমাক্ত মেঝে আশ্রিত বাড়িতেও থাকবার কোন উপায় নেই মহিউদ্দিনের। সারা ঘরে পায়ের টাকনু পর্যন্ত কাদা।

একপাশে উনুনটা কাদামাখা। চৌকির উপরে কিছু লাকড়ি ও কিছু ধানের খড়। পানি আর না উঠলে আরও ৩ সপ্তাহে এই ঘরে বসবাসের কোন উপায় নেই। খাবারের কোন নিশ্চয়তা নেই। কাজ করতেও পারেন না। দুই পায়ে হাঁটুর নিচে বিশেষ রোগ থাকার কারনে হাঁটতেও পারে না সঠিকভাবে। আশেপাশে কেউ কোনদিন খাবার দিলে পেটে দানাপানি পড়ে না হলে উপোষ যেন নিত্য সঙ্গী তার জীবনে। গত কয়েক সপ্তাহ থেকে অতি বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আশা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায় কুড়িগ্রাম সদও উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চরে বসবাস করা মানুষের ঘর-বাড়ি।

পানি কিছুটা কমলেও এখন দুর্ভোগ কমেনি বানভাসি মানুষের। মহিউদ্দিনের জীর্ণ শীর্ণ দেহটা যেন আর চলতেই চায় না। পৃথিবীরতে হাজারো মানুষের হাজারো চাওয়া কিন্তু মহিউদ্দিনের পৃথিবীতে আর কোন চাওয়া পাওয়া ও লেনদেন নেই। নেই কোন অভিযোগ কারো কাছে। ব্রহ্মপুত্র নদীর সাথে মিতালি মহিউদ্দিনের বহু দিনের। এই নদে জন্ম-নদে বেড়ে ওঠা। একসময় স্বপ্ন ছিল, ছিল বেঁচে থাকার প্রেরণা। কিন্তু দু’চোখে আজ শুধুই হতাশা। যে নদের সাথে তার জন্ম থেকে শত্রু-মিত্র খেলা। সে নদের ধারে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন প্রতিনিয়ত। দিন যায় রাত আশে পূর্ব আকাশে আবারও আলো আসে মানুষের জীবন হয় আলোকিত। কিন্তু মহিউদ্দিনের জীবনের আলোটা যেন নিভে গেছে অনেক আগেই।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/০৭ জুলাই ২০২২, খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৪:৩৯

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit