মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন

জিলহজ্ব মাসের প্রথম ১০ দিনের বিশেষ আমল

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ২ জুলাই, ২০২২
  • ১২৪ Time View

ডেস্ক নিউজ : মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য জিলহজ্ব অত্যন্ত সম্মানীত একটি মাস। এই মাসে রয়েছে অনেক ফজিলত। ১২টি মাসের মাঝে চারটি মাসকে পবিত্র কোরআনে সম্মানিত মাস হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে জিলহজ্ব মাস অন্যতম। বাংলাদেশে ১ জুলাই থেকে জিলহজ্ব মাস শুরু হয়েছে। সে হিসেবে কোরবানির ঈদ অনুষ্ঠিত হবে ১০ জুলাই।

পুরো জিলহজ্ব মাস গুরুত্বপূর্ণ হলেও এ মাসের প্রথম ১০ দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। পবিত্র কোরআনের সূরায়ে ফজরের শুরুতে আল্লাহ্ তায়ালা বলেন- “কসম প্রভাতের এবং ১০ রাতের।” (সুরা : ফজর, আয়াত : ১-২)

এখানে যে ১০ রাতের কথা বলা হয়েছে, তা কোন কোন তাফসিরকারক এ আয়াতের মাধ্যমে জিলহজের প্রথম ১০ রাতকে বুঝিয়েছেন।

জিলহজ্ব মাসের প্রথম ১০ দিন সম্পর্কে রাসূল ই পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা’আলার নিকট জিলহজ্জের প্রথম ১০ দিনের ইবাদত অপেক্ষা অধিক পছন্দনীয় আর কোন ইবাদত নেই। [সহিহ্ বুখারী খণ্ড ২, ৪৫৭]

এই ১০ দিনের মধ্যে শেষের দুদিন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যাকে হাদিসের পরিভাষায় ‘ইয়াওমে আরাফা’ ও ‘ইয়াওমে নাহর’ বলা হয়। এ ছাড়াও দুটি ইবাদত এ মাসের প্রথম দশককে বৈশিষ্ট্য মণ্ডিত করে তোলে। যে দুটি ইবাদত জিলহজ্ব মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে আদায় করা সম্ভব নয়। একটি হলো হজ্ব, অপরটি হলো কোরবানি।

এ মাসে আছে ‘আরাফাহ’র দিন। যেদিন ইসলাম হয়েছে পরিপূর্ণ। আল্ কুরআনে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আল আমিন বলেছেন- “আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। “[সূরা মায়িদা ৩]

জিলহজ্বের চাঁদ ওঠার পর করণীয়
জিলহজ্ব মাসের চাঁদ উঠার পর থেকে কোরবানি করার পূর্ব পর্যন্ত, চুল, গোঁফ, নখ ও শরীরের বিভিন্ন স্থানের লোম বা পশম না কাটা মুস্তাহাব।

এ সম্পর্কে উম্মে সালমা রাদওয়ানুতালা আনহা থেকে বর্ণিত হয়েছে- নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি জিলহজ্বের চাঁদ দেখে এবং কোরবানির ইচ্ছা করে, সে যতক্ষণ কোরবানি না করে, ততক্ষণ পর্যন্ত যেন চুল বা নখ না কাটে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩৬৫৬)। তবে এ আমল মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়।

তাকবির ও তাসবিহ পড়া
রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ‘এ ১০ দিনে নেক আমল করার চেয়ে আল্লাহ্ সুবাহহুনতালার কাছে বেশি প্রিয় ও মহান কোনো আমল নেই। তাই এই দিনগুলোতে তাকবির (আল্লাহু আকবার), তাহমিদ (আলহামদু লিল্লাহ), তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ও তাসবিহ (সুবহানল্লাহ) পড়া সুন্নত। (বায়হাকি, শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩৪৭৪)

তাকবীরে তাশরীক বলা- যিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখের ফজর থেকে ১৩ তারিখের আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর একবার তাকবীর বলা ওয়াজিব। পুরুষের জন্য আওয়াজ করে, আর মহিলাদের জন্য নীরবে।
তাকবীর হল- “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাহু, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ”। {ফাতওয়া শামী-তৃতীয় খন্ড, ৬১ পৃষ্ঠা, সালাত অধ্যায়, ঈদ পরিচ্ছেদ, ইলাউস সুনান, সালাত অধ্যায়, তাকবীরাতুত তাশরীক পরিচ্ছেদ, ৮ম খন্ড, ১৪৮ পৃষ্ঠা}

আরাফার দিন রোজা
আরাফার দিন রোজা রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘আমি আল্লাহ্ সুবাহনহুতালার কাছে আশাবাদী, আরাফার দিনের রোজা আগের ও পরের এক বছরের গুণাহের কাফফারা হবে।’ (মুসলিম)। তবে আরাফায় অবস্থানকারী হাজিদের জন্য রোজা রাখা মুস্তাহাব নয়। কেননা রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফায় অবস্থান করেছিলেন রোজাবিহীন অবস্থায়।

হজ্ব ও ওমরাহ সম্পাদন করা
হজ্ব ও ওমরাহ এ দুটি হলো সর্বশ্রেষ্ঠ আমল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-“এক ওমরাহ থেকে আরেক ওমরাহ মধ্যবর্তী গুণাহের কাফফারাস্বরূপ আর কবুল হজের প্রতিদান কেবলই জান্নাত।’ (বুখারি, হাদিস : ১৭৭৩; মুসলিম, হাদিস : ৩৩৫৫)

কোরবানি আদায় করা
যাদের উপর কোরবানি ওয়াজিব তারা অবশ্যই কোরবানি আদায় করবেন। ১০, ১১ অথবা ১২ই যিলহজ্বের যে কোন একদিন, কোন ব্যক্তির মালিকানায় যদি নিত্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ, অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা বা এর সমমূল্যের সম্পদ থাকে, তাহলে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। পুরুষ-মহিলা সকলের উপরই এ বিধান প্রযোজ্য। {ফাতওয়া শামী-৯/৪৫৩, ৪৫৭ ফাতওয়া আলমগীরী-৫/২৯২, সুনানে ইবনে মাজাহ-২২৬}

আর যাদের উপর কোরবানি ওয়াজিব নয়, তাদেরও কোরবানি করার চেষ্টা করা উচিত। আগ্রহ ও ইচ্ছা থাকলে নিঃস্ব ব্যক্তিকেও আল্লাহ্ তাআলা সামর্থ্যবান করে দিতে পারেন। বাহ্যিক সামর্থ্য ও আর্থিক সচ্ছলতা তো আল্লাহ্র হাতে। সে কারণেই কোরবানি ওয়াজিব না হলেও কোরবানি করার চেষ্টা করা উচিত।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি সক্ষমতা থাকা সত্বেও কোরবানি করলো না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটেও না আসে।” {সুনানে ইবনে মাজাহ-২২৬}

কিউএনবি/অনিমা/০২ জুলাই ২০২২, খ্রিস্টাব্দ/সকাল ৯:৪২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit