আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমের শত্রুতা দীর্ঘদিনের। ইউক্রেন অভিযানের পর তা নতুন মাত্রা পেয়েছে। কঠোর সমালোচনার পাশাপাশি মস্কোর ওপর একের পর এক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ অব্যাহত রয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়াকে সংঘাতকে সামনে রেখে চলতি সপ্তাহে (২৬ জুন) জার্মানিতে শুরু হয় শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি৭ সম্মেলন।
কিন্তু আল্পস পর্বতের পাদদেশের প্রাকৃতিক নৈসর্গে শুরু হওয়া সম্মেলনের প্রথম দিনেই রাজনীতি ফেলে পরনিন্দায় মেতে ওঠেন এর নেতারা। শত্রুদেশের নেতার শরীর আর পোশাক নিয়ে করেন একের পর এক কুরুচিকর মন্তব্য। এবারের সম্মেলনে সবচেয়ে গুরুত্ব পায় ইউক্রেনে যুদ্ধ। আর এই বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে জি৭ নেতারা রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের একটি ছবি নিয়ে হাসি-ঠাট্টায় মেতে ওঠেন।
ঘটনার শুরুটা বেশ নাটকীয়ই। সেদিন এয়ার কন্ডিশনহীন হোটেলের লম্বা কনফারেন্স কক্ষে পাতা গোলটেবিলে বসেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলজ, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি।
সামনে কয়েক ডজন সাংবাদিক ও ফটোগ্রাফার। টেবিলে বসেই হোটেলের এসি না থাকার ঐতিহ্য নিয়ে ঠাট্টা শুরু করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস। জ্যাকেট খুলব নাকি রাখব? বলেই হাসতে হাসতে সবার দিকে একবার তাকান। আবার বলেন, ‘আমরা কি আমাদের কাপড় খুলতে পারব?’ তার এ কথায় সবাই হাসতে থাকেন। ঠোঁট টিপে মিটিমিটি হাসেন ডানে বসা মার্কি প্রেসিডেন্ট বাইডেনও।

বরিসের ঠাট্টায় কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান ছাড়া আর কেউ ফোড়ন না কাটলেও উপভোগ করেন সবাই। বরিসের কথার সূত্র ধরেই ট্রুডো বলেন, ‘আমরা ছবি তোলার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করি।’ সঙ্গে সঙ্গেই হেসে ওঠেন বাকিরা।
ট্রুডোকে সমর্থন করে বরিস এরপর আবারও বলেন, আমাদের দেখাতে হবে যে আমরা পুতিনের থেকে শক্তিশালী। ট্রুডো উত্তরে বলেন, আমরা খালি গায়েই ঘোড়ার পিঠে চড়ার প্রদর্শনী করব। এবার যোগ দেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন। ঠাট্টার ছলে বলেন, ঘোড়ায় চড়াই সবচেয়ে উত্তম। শেষে প্রধানমন্ত্রী বরিস বলেন, ‘তাদেরকে আমাদের পেশি দেখাতে হবে।’
কয়েকদিন দেরি হলেও জি৭ নেতাদের এ হাসি-ঠাট্টার কঠোর জবাব দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। বৃহস্পতিবার উন্নত দেশগুলোর নেতাদের সেই কুরুচিকর মন্তব্যের জবাব দিয়ে তিনি বলেছেন, আমি ঠিক জানি না, তারা ঠিক কতটুকু কাপড় খুলতে চেয়েছিলেন। কোমর পর্যন্ত নাকি কোমরের নিচে। তবে আমি মনে করি, সেটা করলে তাদের জঘন্য দেখাত।
জি৭ নেতারা আসলে পুতিনের ২০০৯ সালের একটি ছবির দিকে ইঙ্গিত করে এমন বাজে মন্তব্য করেন। পুতিনের ওই ছবিতে দেখা যায়, মাথায় কাউবয় টুপি, আর পরনে খাকি প্যান্ট। সাইবেরিয়ার তুবা অঞ্চলে খালি গায়ে ঘোড়ার পিঠে চড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি।
জি-৭ সম্মেলনে নেতাদের অশালীন মন্তব্য ঘিরে বেশ সমালোচনা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের অন্যতম শিল্পসমৃদ্ধ দেশগুলোর মঞ্চে, কাউকে উদ্দেশ করে হাসি-ঠাট্টা করা সুরুচির পরিচয় দেয় না। এরকম গুরুত্বপূর্ণ একটি সম্মেলনে এমন আচরণ গ্রহণযোগ্যতা পায় না। রাজনীতির বিশ্বমঞ্চে এমন চিত্র খুবই বেমানান।
কিউএনবি/আয়শা/৩০.০৬.২০২২ খ্রিস্টাব্দ/রাত ৯:০২