এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে যশোরের চৌগাছায় গরু-ছাগল মোটা-তাজা করতে ব্যস্ত সময় পার করছে খামারিরা। তবে এ বছর কোরবানির পশু দাম নিয়ে বিক্রেতা ও ক্রেতারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। গতবারের চেয়ে পশু খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণেই এবার পশুর দাম কিছুটা বেশি হবে বলে আশা করছেন বিক্রেতারা। অন্যদিকে পরপর দুই বছর করোনা মহামারী ও চলমান বন্যার কারণে মানুষের আর্থিক সক্ষমতা অনেকটা কমে যাওয়ায় বেশি দামে পশু কিনে কোরবানি দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছে কোরবানি দাতারা। এদিকে গো-খাদ্যের চড়া দাম ও বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে গড়া এসব খামারের মালিকরা বলছেন, উপযুক্ত দাম না পেলে তাদের লোকসান গুনতে হবে।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের তথ্যমতে, উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও পৌর শহরের খামারীরা এ বছর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বানিজ্যক ছোট-বড় ৩ হাজার সাতটি খামারে ১৫ হাজার গরু প্রস্তুত করেছেন। এছাড়া ছাগল প্রস্তুত করা হয়েছে ৭ হাজার ৯শটি। এসব গরু-ছাগল স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে ৫০ ভাগই বিক্রি হবে অন্য জেলায়। এ এলাকার গরু-ছাগল কোরবানির জন্য চাদপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লাহ, ঢাকা-চিটাগাংসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ চাহিদা রয়েছে। শুধুমাত্র কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে এ উপজেলায় যে পরিমাণ গরু এবং ছাগল প্রস্তুত করা হয় তা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের চাহিদার বড় একটি অংশ পূরণ হবে।
উপজেলা স্বরুপদাহ ইউনিয়নের আড়শিংড়ি গ্রামের আব্দুল লতিফ অনেক বছর ধরে কোরবানির গরু মোটাতাজা করে আসছেন। এবারো সন্তানের মতো পরম যত্নে কোরবানির জন্য সাতটি গরু প্রস্তুত করেছেন তিনি। কালো রঙের বিশাল দেহী গরুটির নাম রাখা হয়েছে কালা পাহাড়। আর একটির নাম ধলা পাহাড়। অন্য গুলোর নামবাবু, ডন, জনি, সাবু ও ইরানি বলে ডাকেন তিনি। খামানরী পৌর শহরের বিশ্বাস পাড়া গ্রামের মাসুদ সহেল জানান, এক বছর আগে আটটি গরু কিনেন তিনি। এরপর গরু আটটিকে পরিমাণ মতো বিচালী, কাঁচা ঘাস, গমেরভুসি, ছোলা, ডাল, ভুট্রারগুড়া, ধানের কুড়া ও পালিশ খাওয়ায়ে লালন পালন করেছেন। প্রতিদিন নিয়ম করে তিন বেলা গোসল করানো হয়। নিয়মিত ডাক্তারও দেখানো হয়। পরিবারের অন্যরাও ব্যাস্ত থাকেন গরু আটটি লালন পালনে। মাসুদ সহেল গরুগুলো বিক্রি করতে চান চট্রগ্রামে নিয়ে গিয়ে। তিনি বলেন, এক বছর আগে প্রতিটি গরু এক লাখ দশ থেকে বিশহাজার টাকায় কেনা। প্রতি মাসে খাদ্য লেগেছে ২৫ হাজার টাকা। বর্তমানে প্রতিটি গরুর দাম প্রায় দুই লাখ ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা।
এছাড়া উপজেলার প্রাই সকল বাড়ীতেই গরু মোটা-তাজা করা হয়েছে। এ উপজেলায় প্রায় প্রত্যেক বাড়িতে দুই একটি গরু রয়েছে। দেশীয় গরু হিসেবে ঢাকা-চিটাগাংসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কোরবানির জন্য এখানকার গরুর রয়েছে বিশেষ চাহিদা। এখানকার খামারি ও কৃষকরা কোরবানির ঈদের পরে কমদামে ছোট গরু কিনে লালন পালন শুরু করে। দু একটি করে গরু কিনে শুরু করেন অনেকে। পরে মোটাবিনিয়োগ করে এসব খামারে ও বাড়িতে বাড়িতে পারিবারিক আদলে গরুকে মোটাতাজা করেন তারা। উদ্দেশ্য, সামনের কোরবানির ঈদে বিক্রি করে একবারে হাতে টাকা পাওয়া ও কিছু লাভের আশা। কিন্তু গরুর সব রকম খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ও দেশে হঠাৎ বন্যা হওয়ায় এ বছর লাভ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন খামারিরা।
শুধু গরু নয় কোরবানির জন্য ছাগলও বানিজ্যক ও পারিবারিক ভাবে পালন করছেন এ উপজেলার অনেক কৃষক নারী-পুরুষ। পৌর শহরের পুরাতন থানা পাড়ার বিলকিস বেগম এবারের কোরবানির জন্য দুইটি বিশাল আকারের খাশিছাগল প্রস্তুত করেছেন। নাম রেখেছেন রাজা ও বাদশা। গত কোরবানি ঈদের পর ৪০ হাজার টাকা দিয়ে ছাগল দুটি কিনে সন্তানের মতো পরম যত্নে লালন পালন করেছেন তিনি। এবারের কোরবানি ঈদে ছাগল দুটি বিক্রি করতে চান লাখ টাকায়। গেল দুই বছর করোনা ভাইরাসের কারণে চরম লোকশান গুনতে হয়েছে উপজেলার গো-খামারিদের। এ বারের কোরবানিতে সেই লোকশান কিছুটা হলেও পুশিয়ে নিতে চান তারা। কিন্তু দেশে হঠাৎ বন্যায় তা নিয়ে রিতিমত তাদের কপালে দুচিন্তার ভাজ পড়েছে।
উপজেলা প্রাণী স¤পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রভাষ চন্দ্র গোস্বামী বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর উপজেলায় গরু লালন-পালনের সংখ্যা বেড়েছে। তবে হঠাৎ দেশে বন্যা হওয়ায় কিছুটা মন্দপ্রভাব পড়বে কোরবানি পশুর দামের উপর। এদিকে ইতি মধ্যে এলাকার ব্যাপারীরা আমাদের নিকট থেকে প্রত্যায়ন নিয়ে গরু ট্রাক বোঝাই করে চাদপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লাহ, ঢাকা-চিটাগাংসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হাটে নিয়ে যাচ্ছেন।
কিউএনবি/আয়শা/২২.০৬.২০২২ খ্রিস্টাব্দ/রাত ৯:২৩