বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ০৭:২৭ পূর্বাহ্ন

দুর্গাপুরে বন্যা পরবর্তি দূর্ভোগে এলাকাবাসী

তোবারক হোসেন খোকন দুর্গাপুর(নেত্রকোনা)প্রতিনিধি ।
  • Update Time : শনিবার, ১৮ জুন, ২০২২
  • ১৬১ Time View

তোবারক হোসেন খোকন দুর্গাপুর(নেত্রকোনা)প্রতিনিধি : ‘‘সোমেশ্বরী নদী আমরার বাড়ীত আইয়া পড়ছে, কইনো যাইতাম ওহন। যাউনের কোনো ঠিহানা যানা নাই। বাড়ি-ঘরের অর্ধেক ভাইঙ্গা গেছে। বাহিটা হয়তো কদিনের মধ্যেই যাইবোগা, অহন আর কোন ট্যাহা পয়সাও নাই কুছতা কিইন্না খাইতাম’’ কথা গুলো বলছিলেন নেত্রকোনা জেলার চন্ডিগড় ইউনিয়নের মউ গ্রামের মো. তারা মিয়া। তিনি আরো বলেন, সারা জীবনের কামাই দিয়া নতুন ঘর বানাইছিলাম, এইডাও বন্যায় শেষ হইয়া গেলো।

বন্যা পরবর্তি দুর্ভোগ নিয়ে শনিবার উপজেলা বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, বন্যার পানি কমলেও বন্যায় আক্রান্তদের দুর্গতির সীমা নেই। এ বছর টানা বর্ষন ও ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ি আগাম বন্যায় দুর্গাপুর উপজেলার পৌরসভাসহ ৭টি ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করে উপজেলা বাসীদের আউশ ফসলের বীজতলা, পুকুরের মাছ, মুরগীর খামার, গবাদী পশু, শাক-সব্জি, রাস্তা-ঘাট, বাড়ী-ঘর সহ সমস্ত কিছু বিনষ্ট করে দিয়েছে। পানিতে ডুবে থাকা ফসল, ঘর-বাড়ির যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ করার মতো ক্ষমতা তাঁদের অনেকেরই নেই। যে সামান্য রোজগারের পুঁজি তাঁদের ছিল, সেগুলো করোনার কারণে কাজ-কর্ম না থাকায় সে পুজিও শেষ হয়েছে অনেক আগেই। অনেকেই ঋণ নিয়ে নতুন করে ব্যবসা শুরু করলেও এবারের বন্যায় সব শেষ করে দিয়ে গেলো।

কৃষি কাজের শ্রমিক ছিলেন মনসুর আলী, এখন কর্মহীন হয়ে বাড়িতে অলস সময় কাটাচ্ছে। তিনি বলেন, কাজ কাম নেই, কিন্তু পেট তো রোগ-বালাই চিনে না, তাকে সময় মতো খাউন দিতে অইবো, কিন্তু কোথায় পাবো তাই বাধ্য হয়ে প্রতিবেশীর কাছ থেকে কিছু টাকা সুদে নিয়েছিলাম। এখন টাকা দেবো কীভাবে? লাভ না দিলে কেউ টাকা দেয় না। এলাকার খোদেজা, মাকসুদা সহ অনেকেই একই ধরনের কথা বলে। বন্যায় ক্ষুদ্র ব্যবসাকারী যাদের দোকান ভাসিয়ে নিয়ে গেছে, বজলু মিয়া, আজু রহমান, রেজাউল ইসলাম, আগবর আলী, আজিজুল হক, সিদ্দিক মিয়া, রবিউল্লাহ, সাহাদুল এবং
আরসাদুল মিয়ার সব শেষ হয়ে গেছে।

বন্যা দুর্গত জনসাধারনের মধ্যে সরকারিভাবে তালিকা সংগ্রহ করে আপদ কালিন সময় কিছু সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বা বিনা সুদে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা করলে হয়তো অনেক সুবিধা বঞ্চিতদের অনেক সমস্যা থেকে রক্ষা পেয়ে মেরুদন্ড সোজা করে চলতে পারবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। সেইসাথে দুর্গাপুর উপজেলাকে বন্যা দুর্গত এলাকা হিসেবে ঘোষনা দেয়ার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবী জানানো হয়। বন্যা কবলিত এলাকায় ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসন, দুর্গাপুর পৌরসভা শুকনো খাবার ও পানি বাহিত রোগের ঔষধ বিতরণ করছেন।

এ ব্যাপারে ইউএনও মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান এ প্রতিনিধি কে বলেন, এলাকায় বন্যার খবর পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয় কে নিয়ে বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি। নিম্নএলাকার পানিবন্ধি পরিবারের মাঝে জরুরী ভিত্তিতে খাদ্য সহায়তাও করা হয়েছে। নদী ভাঙন ও বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। সরকারি কর্মকর্তাদের বিভিন্ন এলাকা নিয়োগ করে জরুরী কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। আশা করছি পরিস্থিতি সামলে নিতে পারবো।

বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে পৌর মেয়র আলা উদ্দিন আলাল এ প্রতিনিধি কে বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় পৌরসভার পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। নি¤œএলাকার পানিবন্ধিদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। আমি আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে পৌরসভার বন্যা কবলিত এলাকা গুলোতে শুকনো খাবার বিতরণ অব্যাহত রেখেছি। মহান আল্লাহ্ সহায় থাকলে সকল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারবো ইনশাহআল্লাহ্।

কিউএনবি/আয়শা/১৮.০৬.২০২২ খ্রিস্টাব্দ/সন্ধ্যা ৬:২৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

June 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit