বিশ্বজিত সরকার বিপ্লব, গৌরনদী প্রতিনিধি : ভোজন বিলাসীদের কাছে বরিশালের গৌরনদীর দধি-মিষ্টি ছাড়া ভোজন রসনা পুরোটাই যেন অসমাপ্ত থেকে যায়। ঐতিহ্যগত কারনে ক্রেতা সাধারনের কাছে গৌরনদীর দধি-মিষ্টি লোভনীয় সামগ্রী হয়ে দাঁড়িয়েছে। লোভনীয় এ খাবার দেখলেই জিবে জল আসেনা এমন ভোজন বিলাসীদের খুঁজে পাওয়াই যাবে না। গৌরনদীর দধি, মিষ্টি ও ঘি’র ঐতিহ্য এখন শুধু দেশেই নয়; আন্তর্জাতিক ভাবেও খ্যাতি অর্জন করেছে এখানকার লোভনীয় দধি, মিষ্টি ও ঘি। ফলশ্রুতিতে সুদূর আমেরিকায়ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গৌরনদী মিষ্টান্ন ভান্ডার নামের প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে পুরো আমেরিকায় গৌরনদী মিষ্টান্ন ভান্ডারটি বেশ সুনাম কুড়িয়েছে।নতুন জামাইকে আদর কিংবা অফিসের বস্কে খুশিসহ যেকোন কাজের তদবিরের জন্য প্রায় দের’শ বছরের পুরনো দেশের একমাত্র ঐতিহ্যবাহী বরিশালের গৌরনদীর দধি, মিষ্টি ও ঘি’র কোন বিকল্প নেই। সারাদেশে গৌরনদীর দধি, মিষ্টি, ঘি’র যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। বিবাহ, বৌ-ভাত, জন্মদিন, মৃত্যুবার্ষিকীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন তদ্বিরে গৌরনদীর দধির জন্য দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসেন গৌরনদীতে। প্রতিদিন শত শত মন দধি, মিষ্টি এখান থেকে ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা, দিনাজপুর, সিলেটসহ দেশের বিভিন্নস্থানে চালান দেয়া হয়।
দেশের বাইরেও ব্যাপকভাবে গৌরনদীর দধি, মিষ্টি, ঘি’র সুনাম রয়েছে। গৌরনদীর দধির প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ১০/১৫ দিনেও স্বাভাবিক আবহাওয়ায় নষ্ট হয় না। যেকোন যানবাহনে সহজে বহন করা যায়। শুকনো মিষ্টি এক মাসে ও ঘি এক বছরেরও নষ্ট হয় না।চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে অধিক মুনাফার কথা না ভেবে গুণগত মান ও সুনামকে ধরে রাখতে গৌরনদীর ঐতিহ্য দধি-মিষ্টি ও ঘি তৈরি করে আসছেন মেসার্স গৌর নিতাই মিষ্টান্ন ভান্ডারের প্রতিষ্ঠাতা স্বর্গীয় শচিন ঘোষ,তার পুত্র গৌরঘোষ এখন ব্যবসা পরিচালনা করেন,তিনি বলেন বংশপরস্পরায় গৌরনদীর ঐতিহ্যবাহী ভোজ্যপণ্যে দধি, মিষ্টি ও ঘি’র গুণগত মান ধরে রেখেছি। সবসময় সেরা এবং সুনাম রক্ষা করে পন্য তৈরী করি তাই আমাদের এই সব ভোজ্যপন্যে সারা দেশে সমান লোভনীয়,আমাদের প্রতিষ্ঠান একাধিকবার বিভিন্ন পদকপ্রাপ্ত হয়েছে,জেলার দীর্ঘমেয়াদী সেরা করদাতা হিসেবে একাধিকবার ওই প্রতিষ্ঠানটি পদকপ্রাপ্ত হয়েছে। স্বর্গীয় সুশীল ঘোষ প্রতিষ্ঠিত গৌরনদী বন্দরের শ্রী গুরু মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী বলরাম ঘোষ। বলরাম ঘোষ বলেন, বাবার (সুশীল ঘোষের) পাশাপাশি গত ২৭ বছর ধরে আমি এ পেশার সঙ্গে জড়িত আছি। সম্প্রতি বাবার মৃত্যুর পর আমিই বাবার পেশাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছি।
তিনি আরও বলেন, আমার বাবা সুশীল ঘোষ ১’শ ২০ প্রকারের লোভনীয় মিষ্টি তৈরি করতে পারতেন। বর্তমানে তাদের প্রতিষ্ঠানে ২০ প্রকারের মিষ্টান্ন দ্রব্য তৈরি করা হয়। গৌরনদী ঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডারের প্রতিষ্ঠাতা ননী ঘোষ, পরিচালনা করছেন তার পুত্র শ্যামল ঘোষ তিনি বলেন,আমাদের প্রতিষ্ঠানে তৈরি হয় দধি, চমচম, পোরাবাড়ীচমচম, কালোজাম, শুকনো মিষ্টি, লাদেন মিষ্টি, বড় রসগোল্লা, রসমালাই, রসমঞ্জরি, ছানার সন্দেশ, ক্ষীরপুরী, মাওয়া, ছানার জিলাপি উল্লেখযোগ্য।আমরা গৌরনদী থেকে তৈরী করে গৌরনদীতেই দুইটি প্রতিষ্টানে বিক্রি করি এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় পাইকারী বিক্রি করে থাকি।এ ছাড়াও গৌরনদী বাজার ও বাসষ্টান্ডে গড়ে উঠেছে অসংখ্য মিষ্টির দোকান।সেখানেও বিক্রি হচ্ছে প্রচুর পরিমান দধি মিষ্টি দ্রব্য।
সূত্র মতে, প্রায় দের’শ বছর পূর্বে ডাওরী ঘোষ নামের এক ঘোষ প্রথম গৌরনদীতে তৈরি করেন এ লোভনীয় খাবার। পরবর্তীতে বংশপরস্পরায় গৌরনদীর ঐতিহ্যবাহী ভোজ্যপণ্যের ধারা ধরে রেখেছেন গৌরনদীর মিস্টি ব্যবসায়ীরা। তারা ঐতিহ্যবাহী দধি, মিষ্টি, ঘি তৈরি করে সারাদেশে সরবারাহ করে বেশ সুনাম কুঁড়িয়েছেন। সুদূর আমেরিকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গৌরনদী মিষ্টান্ন ভান্ডার নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে পুরো আমেরিকায় গৌরনদী মিষ্টান্ন ভান্ডারটি বেশ সুনাম কুড়িয়েছে।
কিউএনবি/অনিমা/১১.০৬.২০২২ খ্রিস্টাব্দ/সন্ধ্যা ৬:৩১