বাদল আহাম্মদ খান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি : শিরোনাম ‘মহানন্দে’। পরীক্ষায় নকলের বিরুদ্ধে সংবাদ। এতে চটেন কলেজ শিক্ষার্থীরা। ইত্তেফাক সংবাদদাতার বিরুদ্ধে শ্লোগান। বাড়িতে হামলার প্রস্তুতি। পাহারায় রেখে ঠেকিয়ে দেন স্থানীয় যুবকরা। এগিয়ে আসে প্রশাসন। মো. আরজু মিয়ার তখন যুব বয়স। তিনি এখনো আছেন দৈনিক ইত্তেফাকে। বয়স ৬৪ বছর। ল্যাপটপ আর ক্যামেরা কাঁধে এখনো মাঠে ছুটে বেড়াতে দেখা যায় তাঁকে। বিটিভি, ইউএনবি’র দায়িত্বেও আছেন তিনি। চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে ছুটে চলেন পুরো জেলা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংবাদিক আরজু মিয়া বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। জেলার প্রবীণ গুণী সাংবাদিক ক্যাটাগরিতে মনোনীত হওয়ার পর থেকেই বেশ আপ্লুত তিনি। বললেন, ‘শেষ বয়সে এসে সেরা প্রাপ্তি। বসুন্ধরা গ্রুপের এমন সম্মান আমাকে প্রাণিত করেছে। আমি আশা করবো দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করা দেশের শীর্ষ এ গ্রুপ এমন আয়োজন অব্যাহত রাখবে।’
সোমবার রাতে রাজধানীর বসুন্ধরার আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারের নবরাত্রি হলে জমকালো অনুষ্ঠানে অ্যাওয়ার্ড হিসেবে ক্রেস্ট, সম্মাননাপত্র ও এক লাখ টাকা তাঁর হাতে তুলে দেয়া হয়। আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। উদ্বোধন করেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। মো. আরজু মিয়ার সাংবাদিকতা১৯৫৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার কান্দিপাড়ায় জন্মগ্রহন করেন মো. আরজু মিয়া। মরহুম হাবিজ উদ্দিন ও মরহুম রহিমা খাতুনের সন্তান তিনি।
তাঁদের গ্রামের বাড়ি নবীনগর উপজেলার কনিকাড়া। বর্তমানে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার মধ্যপাড়ার ভাওয়াল দীঘির উত্তরপাড়ে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে ডিগ্রী পাশ করেন। আরজু মিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছোটবেলা থেকেই সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন ছিল। সরকারি চাকরি পেয়েও করেনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক তিতাস পত্রিকায় সাংবাদিকতা শুরু। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে প্রথম প্রকাশিত দৈনিক ব্রাহ্মণবাড়িয়া পত্রিকায় দীর্ঘদিন বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ঘোষণা হওয়ার পর ১৯৮৫ সন থেকে দৈনিক ইত্তেফাক ও বালাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) জেলা প্রতিনিধি কর্মরত। এছাড়া প্রায় ২০ বছর ধরে ইউএনবিতে কাজ করছেন। প্রায় এক যুগেরও বেশি সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিদিন এর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে তিনি জড়িত। তিনি দুইবার সভাপতি ও দুইবার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডেও পিছিয়ে নেই সাংবাদিক আরজু মিয়া। তিনি একাধারে জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, সচেতন সাগরিক কমিটি (সনাক) এর সঙ্গে জড়িত। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় খেলাঘর আসরের প্রতিষ্ঠালগ্ন ও পরবর্তীতে কচিকাঁচা আসরের সাথে দীর্ঘদিন জড়িত ছিলেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্য।
তিনি বলেন, ‘অনেক চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে সাংবাদিকতা করতে হয়েছে। শুরুর সময়ে এখনকার মতো সুযোগ সুবিধা ছিলো না। তখন টেলিফোন ও টেলিগ্রাফের মাধ্যমে সংবাদ পাঠাতে হতো। বিটিভিতে বড় খামে করে বড় আকারের ক্যাসেট পাঠাতাম। জরুরি সংবাদ হলে ট্রেনে করে বা বাসে করে পাঠানো হতো। এখন তো ঘটনাস্থল থেকেই সরাসরি সংবাদ, ছবি ও ফুটেজ পাঠানো যায়।’ মফস্বলে সাংবাদিকতাটা খুবই ঝুঁকির্পূণ বলে মনে করেন তিনি।
কিউএনবি/আয়শা/৩১.০৫.২০২২ খ্রিস্টাব্দ/রাত ৮:১৫