শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৩৫ পূর্বাহ্ন

সুস্থ থাকার জন্য যেসব খনিজ উপাদান জরুরি

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ১১ মে, ২০২২
  • ১২৩ Time View

লাইফ ষ্টাইল ডেস্ক : সুস্থ থাকার জন্য এবং শরীরের সুরক্ষায় বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদান জরুরি।  স্বল্প মাত্রার অথচ পুষ্টিকর এসব উপাদানকেই ‘এসেনশিয়াল ট্রেস এলিমেন্টস’ বলা হয়।

বিভিন্ন কারণে মিনারেল ঘাটতি দেখা দেওয়ার কারণ হচ্ছে খাদ্যে অথবা সম্পূরক খাদ্যে প্রয়োজনীয় মাত্রায় এসব উপাদানের অনুপস্থিতি। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস যেমন- বেশি পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত বা টিনজাত খাদ্য গ্রহণ, খাদ্য তালিকায় শাক-সবজি বা ফলমূলের পরিমাণ কম থাকা, কম-ক্যালরিযুক্ত বা নিয়ন্ত্রিত খাদ্য গ্রহণ, নিরামিষাশী, খাদ্য হজমজনিত কোনো রোগ, কোনো কারণে সঠিক পর্যায়ে খাদ্য শোষণে ব্যর্থতা, বিভিন্ন খাদ্যে অ্যালার্জি বা দুগ্ধশর্করায় (ল্যাকটোজ) অসহনীয়তা ইত্যাদি কারণেও এ ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন প্রফেসর ড. জাকিয়া বেগম। 

আয়োডিন : থাইরয়েড থেকে নিঃসৃত এই হরমোনটি থাইরয়েড গ্রন্থির সঠিক পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয়। কোষকলার বিপাকীয় কার্যকলাপ পরিচালনা, খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তরিত করা, অতিরিক্ত চর্বির বিপাকীয় ব্যবহার, ইস্টোজেন জাতীয় হরমোনকে নিয়ন্ত্রণ করা, শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, মানসিক ক্ষিপ্রতা এবং বোধশক্তির উন্নতি সাধন ইত্যাদি ক্ষেত্রে এই হরমোনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সাধারণত ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে নারীদের এবং গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে এই হরমোনটির ঘাটতি হতে দেখা যায়। গলগণ্ড রোগটি আয়োডিন ঘাটতির প্রধান লক্ষণ। দীর্ঘদিন ধরে থাইরয়েড গ্রন্থি প্রয়োজনীয় মাত্রায় আয়োডিন উৎপাদনে ব্যর্থ হলে ‘হাইপোথাইরয়েডিজম’ রোগ দেখা দেয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই ধরনের ঘাটতি থেকে ‘ক্রিটেনিজম নামক’ বিপজ্জনক অবস্থার সৃষ্টি হয় যে, শিশু শারীরিক এবং মানসিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়ে পড়ে। ১-৮ বছরের শিশুর প্রতিদিনের চাহিদা ৯০ মাইক্রোগ্রাম, ৯-১৩ বছর পর্যন্ত ১২০ মাইক্রোগ্রাম এবং ১৪ বছর থেকে আরম্ভ করে বয়স্কদের জন্য তা ১৫০ মাইক্রোগ্রাম। সামুদ্রিক বিভিন্ন উদ্ভিদ, মাছ ও অন্যান্য খাদ্য, ডিম, দুধ এবং আয়োডিনযুক্ত লবণ আয়োডিনের প্রধান উৎস।

জিঙ্ক বা দস্তা : এই উপাদানটি শরীরের বিভিন্ন বিপাকীয় পদ্ধতি যেমন আমিষ সংশ্লেষণ, রোগ-প্রতিরোধক কার্যাবলী, ক্ষত থেকে আরোগ্য লাভের প্রক্রিয়া, কোষ বিভাজন ও ডিএনএ সংশ্লেষণ, টেসটোসটেরন জাতীয় পুরুষ হরমোন তৈরি, মেলাটোনিন তৈরি ইত্যাদি প্রক্রিয়াগুলোকে প্রভাবিত করে থাকে। এছাড়া গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের সঠিক বিকাশ ও বৃদ্ধি লাভের ক্ষেত্রে এবং শিশু বয়সে এবং বয়োসন্ধিকালে শরীরের বৃদ্ধি ও পূর্ণতা প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উপাদানটির অভাবে স্মৃতিশক্তি হ্রাস, রোগ-প্রতিরোধক ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ার কারণে ঘন ঘন ঠাণ্ডা লাগা, ডায়রিয়া, ঘুমের সমস্যা, খাদ্যে অরুচি এবং খাদ্যের স্বাদ ও গন্ধ অনুভবের ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া, চুল পড়া, ত্বকের ক্ষতি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। উপাদানটির অতিমাত্রার ঘাটতি থেকে হতবুদ্ধিতা জাতীয় মানসিক প্রতিবন্ধকতা, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা এবং যৌন অক্ষমতা দেখা দেয়ার আশংকাও থাকে।

লাল মাংস, হাঁস-মুরগির মাংস, ঝিনুক ইত্যাদি প্রাণিজাতীয় ও দুগ্ধজাতীয় খাদ্য, ডার্ক চকলেট, বাদাম, শিম জাতীয় উদ্ভিদ ইত্যাদিতে এই উপাদানটি পাওয়া যায়। মিষ্টি কুমড়ার বিচি জিঙ্কের একটি ভালো উৎস।

লোহা : লোহা এরূপ একটি ক্ষুদ্র উপাদান যার পরিমাণ শরীরের ওজনের মাত্র ০.০০৪%। রক্তস্থ হিমোগ্লোবিন শরীরের কোষকলাগুলোতে শক্তি ধরে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে। শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় কম লোহা থাকলে হিমোগ্লোবিন উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে। শরীরে লোহা অথবা হিমোগ্লোবিনের ঘাটতিকেই রক্তশূন্যতা বলা হয়। লোহার ঘাটতি থেকে শরীরে দুর্বলতা দেখা দেয় এবং শরীর সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এমনকি এ ধরনের রক্তশূন্যতার কারণে হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে মৃত্যু ঘটতে পারে। স্বল্প মাত্রার লোহার ঘাটতি থেকে মস্তিষ্কের বুদ্ধিমত্তার ব্যাঘাতও সৃষ্টি হতে পারে। আমাদের দেশে রক্তশূন্যতা গর্ভকালীন মাতৃ মৃত্যুর প্রধান কারণ। পুরুষ ও বয়স্ক মহিলাদের জন্য প্রতিদিন ৮ মিলিগ্রাম এবং অল্প বয়স্ক মহিলাদের জন্য প্রতিদিন ১৮ মিলিগ্রাম লোহার প্রয়োজন হয়। মাংস, কলিজা, সীমজাতীয় সবজি, বাদাম, সম্পূর্ণ শস্যদানা যেমন; বাদামি চাল, ঝিনুক, কলা, আপেল, গাঢ় সবুজ শাক-সবজি ইত্যাদি খাদ্য থেকে আয়রন পাওয়া যায়।

সেলেনিয়াম : সেলেনিয়াম শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অপর একটি ‘ট্রেস এলিমেন্ট’। শরীরের প্রায় দু’ডজনেরও বেশি সেলেনোপ্রোটিনের মধ্যস্থ একটি উপাদান হচ্ছে সেলেনিয়াম যে উপাদানটি প্রজনন ক্ষমতা, থাইরয়েড হরমোনের বিপাকীয় কার্যক্রম, ডিএনএ-র সংশ্লেষণজনিত প্রক্রিয়াগুলোকে প্রভাবিত করা ছাড়াও জারণ প্রক্রিয়ায় সংঘটিত কোষকলার ক্ষতি এবং রোগের সংক্রমণ রোধে ভূমিকা রাখে। উপাদানটির অভাবে হৃদপিণ্ডের সমস্যা, মানসিক প্রতিবন্ধতা, মাংসপেশীতে ব্যথা বা মাংসপেশীর দুর্বলতাও দেখা দিতে পারে। প্রতিদিনের চাহিদা ৫৫ মাইক্রো গ্রাম মাত্র। মাছ, গরু-ছাগলের মাংস, হাঁস-মুরগির মাংস এবং ডিম, শস্যদানা, বাদাম এবং বীজজাতীয় খাদ্য থেকেই প্রতিদিনের জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রায় সেলেনিয়াম পাওয়া যায়। নখ এবং চুল বিশ্লেষণ করে শরীরে বিদ্যমান দীর্ঘমেয়াদি সেলেনিয়ামের মাত্রা বিশ্লেষণ করা যায়।

কোবাল্ট : এটি ভিটামিন বি-১২ এর একটি উপাদান হওয়ায় কোবাল্টের ঘাটতি মানে ভিটামিন বি-১২ এরই ঘাটতি। প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় মাত্রা মাত্র ০.০০০১ মিলিগ্রাম। এটি অস্থিমজ্জার কোষকলাকে উজ্জীবিত করে লোহিত রক্তকনিকা তৈরিতে সাহায্য করে, থাইরয়েড কর্তৃক আয়োডিন শোষণে বাঁধা প্রদান করে এবং বিভিন্ন ধরনের এনজাইমের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে। এটির অভাবে জটিল ধরনের রক্তশূন্যতা, শারীরিক ক্লান্তি ও দুর্বলতা, কোনো কোনো অঙ্গের বিশেষ করে হাত ও পায়ের দুর্বলতা ও অসাড়তা অনুভব করা, বমিভাব, মাথাব্যথা, মানসিক বিভ্রমতা, পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা, ওজন হ্রাস, থাইরয়েড গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়া, হৃদযন্ত্রের সমস্যা, স্নায়বিক সমস্যা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। দীর্ঘদিনের ঘাটতি থেকে স্নায়বিক সমস্যা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়ার আশংকা থাকে। গরু-ছাগলের যকৃতে, ঝিনুক, মাছ, ডিম, সয়া খাদ্য, সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও মাছ ইত্যাদি কোবাল্টের ভালো উৎস। ডালজাতীয় উদ্ভিদ, বাঁধাকপি, লেটুস ইত্যাদিতে অল্প মাত্রায় কোবাল্ট পাওয়া যায়।

ম্যাংগানিজ : সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন এনজাইম তৈরিতে এবং এনজাইম সংক্রান্ত বিভিন্ন বিক্রিয়া ঘটাতে এই উপাদানটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। শর্করা, ফ্যাটি এসিড এবং আমিষের বিপাকে, রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে, রক্ত জমাট বাঁধার কাজে, হাড় তৈরি, শক্ত ও মজবুত করতে, মস্তিষ্ক, স্নায়ুতন্ত্র ও রোগ-প্রতিরোধক তন্ত্রের সঠিক পরিচালনা, মাইটোকনড্রিয়াতে বিদ্যমান সুপার অক্সাইড নামক ফ্রি রেডিকেলকে বিশ্লেষিত করে ক্ষতিকর প্রভাবমুক্ত করা ইত্যাদি কাজে এই উপাদানটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরে উপাদানটির স্বল্পতা হাড়কে দুর্বল ও ভঙ্গুর করে তোলে। পূর্ণ শস্যদানা, বাদাম, চা-কফি, পাতাবিশিষ্ট সবুজ শাক-সবজিতে এটি পাওয়া যায়।

ক্রোমিয়াম : শরীরের শর্করা, চর্বি এবং আমিষ জাতীয় পদার্থগুলোর বিপাকীয় কার্যক্রম পরিচালনায় এই উপাদানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই এই উপাদানটির সামান্য স্বল্পতা থেকেও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। এটি রক্তে এইচডিএল-এর পরিমাণ বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। ক্রোমিয়ামের অভাবে রক্তবাহী ধমনি সরু হয়ে ওঠা, উৎকণ্ঠা বৃদ্ধি পাওয়া, শরীরের শক্তি কমে যাওয়া, মানসিক অস্থিরতা দেখা দেয়া, শিশুদের শরীরের বৃদ্ধি হ্রাস পাওয়া, সার্জারি থেকে সৃষ্ট ক্ষত বা যে কোনো ধরনের ক্ষত থেকে আরোগ্য লাভ বিলম্বিত হওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। মাশরুম, ডার্ক চকলেট, পনির, বাদাম, পূর্ণ শস্যদানা, পাকা টমেটো, লেটুস, পেঁয়াজ, গোল মরিচ এবং বিভিন্ন মশলা, ডালজাতীয় শস্য ইত্যাদি থেকে এই উপাদানটি পাওয়া যায়।

ফ্লোরিন : ফ্লোরিনও শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় একটি উপাদান যা বিশেষ করে হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উপাদানটির অভাবে দাঁত ও হাড়ের ক্ষয় বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। পানিই ফ্লোরিনের প্রধান উৎস্য তবে সামুদ্রিক মাছ, চা এবং কফিতেও এটি বিদ্যমান। প্রতিদিনের জন্য নিরাপদ মাত্রা ১.৫ মিলিগ্রাম থেকে ৫.০ মিলিগ্রাম।

কিউএনবি/অনিমা/১১.০৫.২০২২ খ্রিস্টাব্দ/রাত ১১:৪৭

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit