এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় ক্ষেতের পাকা ধান নিয়ে মহাবিপাকে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। এক দিকে শ্রমিক সংকট ও অন্য দিকে বৈরি আবহাওয়া যেন তাদের কলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। ক্ষেতে কেটে রাখা ধান বৃষ্টির পানিতে ভাসছে। ধানের ফলন ও দাম ভালো হলেও কৃষকের মুখে নেই হাসি । ধান ঘরে তোলার মুহূর্তে বৈরী আবহাওয়া ও বৃষ্টির কারণে চাষিদের কপালে দেখা দিয়েছে চিন্তার ভাঁজ। এ ছাড়া শ্রমিকসংকটে ধান ঘরে তোলা নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তায় পড়েছেন প্রান্তিক কৃষকরা।
এ উপজেলায় ঈদের ৭/৮ দিন আগে থেকে ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে বৈলী আবহাওয়া ও কৃষকের কলার কাটাহয়ে দাড়িয়েছে। অসুমায়ে বৃষ্টিপাত হওয়ায় অনেক কৃষক তাদের আধা কাঁচা-পাকা ধান কেটে ঘরে তোলার চেষ্টাকরছেন। এ সময় পুরোদমে ধান কাটা শুরু হলেও ানেকে আকাশে মেঘ দেখে থেমে রয়েছেন। অন্য বছর গুলোতে এ সময় কৃষকেরা ধান কেটে (বিচালী গো-খাদ্য) ক্ষেতে শুকানোর জন্য রাখেন। এ বছরঈদের দিনের ভারী বৃষ্টিতে কেটে রাখা সব ধান ও (বিচালী গো-খাদ্য) ভিজে গেছে। অনেক জমিতে জমেছে বৃষ্টির পানি।
শনিবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঈদের দিন থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ায় মাঠের পর মাঠ পাকা ধান অধিকাংশ মাটিতে পড়ে গেছে। অনেক জমিতে খেতে জমে থাকা পানি ধানের ওপরে উঠে গেছে। উপজেলার কৃষকেরা জানান, ক্ষেতে ধান পেকে গেলেও বৈরী আবহাওয়া ও শ্রমিক সংকটের ফলে ধান কাটা যাচ্ছেনা। অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে ধান কেটেছেন। তাদের কাটা ধান বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ায় গো-খাদ্য নষ্ট ও ধান ফেটে চারা এসে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উপজেলার চাঁদপাড়া গ্রামের ধান চাষী সোলাইমান হোসেন বলেন, দুই বিঘা বোরো চাষ করেছি। হালকা কাঁচা থাকলেও ১ বিঘা কেটে দিয়েছি। তবে বৃষ্টি হওয়ায় তা সব ভিজে গেছে। আবহাওয়া ভালো না হলে বাকি ১ বিঘা কাটতে পারছি না।
উপজেলার সিংহঝুলী গ্রামের কৃষক হাদি বলেন, আড়াই বিঘা জমির ধান বৈশাখী ঝড়ে পড়ে গিয়ে পানিতে ডুবে গেছে। খেতে পানি থাকায় ধান না কাটলে তা নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে, তাই ধানের আগা কাটছি। ধান গাছের আগা কাটায় তিন বিঘা জমির খড়বিচালী (গো-খাদ্য) হলো না। যার দাম অন্তত ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। তিনি বলেন, এ এলাকার ধান চাষীদের ধান ঘরে তোলা ও গো-খাদ্য নিয়ে কঁপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে। এদিকে শ্রমিকসংকটের কারণেই অনেকেই ধান কাটতে পারছেন না। উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের লাবলু রহমান বলেন, তুলনা মুলক নিচুঁ জমিতে তিন বিঘা ধান পেকে পড়ে আছে। শ্রমিক না থাকায় কাটাতে পারছি না। ধান নিয়ে মহাবিপাকে পড়ে আছি। এদিকে যে কৃষক আগে-ভাগে কেটে ঘরে ধান তুলেছেন, তারা ফলন ও ধানের দাম পেয়ে খুশি। এ উপজেলায় বর্তমানে প্রতি মণ ধান ১ হাজার ৯০ থেকে ১ হাজার ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৮ হাজার ১শ হেক্টর। চাষ হয়েছে ১৮ হাজার ৬শ ৫০ হেক্টর জমিতে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮০ হাজার ২শ মেট্রিক টন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সমরেন বিশ্বাস বলেন, বৃষ্টিতে ধানের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। ইতিমধ্যে কৃষকরা ধানকাটতে শুরু করেছেন। রোববার সকালে উপজেলা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কম্বাইন হারভেস্টার ধান কাটা ম্যাশিনদিয়ে পৌর এলাকার চানপুর রোবধান কাটা শুরু করবো। এতে শ্রমিক সংকট অনেকটা কমে আসবে। তাছাড়া যেসব খেতে ধান নুয়ে পড়েছে, দ্রুত তা কাটার জন্য কৃষকদেরকে আমরা পরামর্শ দিচ্ছি।
কিউএনবি/আয়শা/৭ই মে, ২০২২/২৪ বৈশাখ, ১৪২৯//রাত ৮:০৯