সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:২৬ অপরাহ্ন

২৬ মার্চ: ছড়িয়ে পড়ে স্বাধীনতার ঘোষণা

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ২৬ মার্চ, ২০২২
  • ৯৬ Time View

 

স্পোর্টস ডেস্ক : ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে আটকের আগেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে ‘স্বাধীন’ ঘোষণা করে দেশবাসীর উদ্দেশে একটি তারবার্তা পাঠান। ইপিআরের ওয়ারলেস বার্তায় প্রচার করা হয় তার স্বাধীনতার ঘোষণা।

১৯৮২ সালে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় প্রকাশিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র তৃতীয় খণ্ডে শেখ মুজিবের স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ২৫ মার্চ মধ্যরাতের পর, অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে এ ঘোষণা দেন তিনি, যা তৎকালীন ইপিআরের ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।

পরে চট্টগ্রামের স্থানীয় একটি বেতারকেন্দ্র থেকে ২৬ ও ২৭ মার্চ বেশ কয়েকজন শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।

স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে পাকিস্তানের তৎকালীন পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক বাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজীর জনসংযোগ কর্মকর্তা মেজর সিদ্দিক সালিক তার ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ বইয়ে লিখেছেন, “যখন প্রথম গুলিটি ছোড়া হল, ঠিক সেই মুহূর্তে পাকিস্তান রেডিওর সরকারি তরঙ্গের কাছাকাছি একটি তরঙ্গ থেকে ক্ষীণস্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের কণ্ঠস্বর ভেসে এল। ওই কণ্ঠের বাণী মনে হল আগেই রেকর্ড করে রাখা হয়েছিল। তাতে শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ হিসেবে ঘোষণা করেছেন।”

তিনি আরও লিখেছেন, “ঘোষণায় বলা হয়, ‘এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা। আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশের মানুষ যে যেখানে আছেন, আপনাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর মোকাবেলা করার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলাদেশের মাটি থেকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আপনাদের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে’।”

বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সংবিধানেও।

২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঘোষিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হ্যান্ডবিল আকারে ইংরেজি ও বাংলায় ছাপিয়ে চট্টগ্রামে বিলি করা হয়৷ আওয়ামী লীগ নেতা জহুর আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা চট্টগ্রামের ইপিআর সদর দপ্তর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়্যারলেস মারফত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন৷

চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান এদিন দুপুর ২টা ১০ মিনিটে এবং ২টা ৩০ মিনিটে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন৷

এদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ ও স্বাধীনতার ঘোষণাভিত্তিক তারবার্তার আদলে স্বাধীনতা এবং স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কিত অনুষ্ঠান সম্প্রচার করেন এম এ হান্নান, সুলতানুল আলম, বেলাল মোহাম্মদ, আবদুল্লাহ আল-ফারুক, আবুল কাশেম সন্দ্বীপ, কবি আবদুস সালাম এবং মাহমুদ হাসান৷

রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী লিখেছেন, ২৬ মার্চ সকাল ৯টায় আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্র থেকে ঢাকা ও অন্যান্য অঞ্চলে যুদ্ধ শুরু হয়েছে বলে প্রচার করা হয়। এদিন অস্ট্রেলিয়ার বেতারে (এবিসি) ঢাকার গণহত্যার খবর প্রচরা করা হয়।

এদিকে ঢাকায় সেনানিবাসের ভেতরে আদমজী কলেজ থেকে বন্দি অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ফ্ল্যাগ স্টাফ হাউজে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখানে তাকে সারাদিন আটক রেখে সন্ধ্যায় অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়৷

সন্ধ্যায় রেডিও পাকিস্তানে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বাংলার চলমান আন্দোলনকে ‘দেশদ্রোহিতা’ আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগকে ‘নিষিদ্ধ’ করেন।

চট্টগ্রাম ও নওগাঁ, জয়দেবপুর বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয় এদিন।

এদিকে ২৫শে মার্চ রাতে শুরু করা গণহত্যা ২৬ মার্চেও চালিয়ে যায় পাকিস্তানি সেনারা। ঢাকায় কারফিউ ঘোষণা করে ভবন, বস্তি, বাজারে ভারী মেশিনগান ও কামানের গোলা নিক্ষেপ করা হয়। শহরের ঘনবসতির অনেক এলাকায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ও গুলি করে বাঙালিদের হত্যা করা হয়।

২৫ তারিখ রাত থেকে ২৬ তারিখ ভোর পর্যন্ত ট্যাংক, স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, রকেট, ভারী মর্টার, হালকা মেশিনগানসহ বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরস্ত্র শিক্ষার্থী-শিক্ষক-কর্মী হত্যার এক উন্মত্ততা চলে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৎকালীন ইকবাল হল, সলিমুল্লাহ হল, জগন্নাথ হল, সূর্যসেন হল, মহসীন হল, ফজলুল হক হল, রোকেয়া হলসহ শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায় আক্রমণ চালিয়ে ড. জি সি দেব, ড. মুনিরুজ্জামান, অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য্য, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাসহ (আহত হয়ে পরে মারা যান) নয়জন শিক্ষককে ঘরে ঢুকে হত্যা করে পাকিস্তানিরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে চালানো হয় পৈশাচিক বর্বরতা। পরে হলের অন্তত একটি কক্ষে ছয়জন ছাত্রীর নগ্ন মরদেহ পা-বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায়।

ওই গণহত্যায় শহীদদের বেশিরভাগের মরদেহ বিভিন্ন হল সংলগ্ন মাঠে মাটিচাপা দিয়ে তার ওপর বুলডোজার চালিয়ে দেওয়া হয়। সেনারা সকালে ক্যাম্পাসে থাকা জীবিত কর্মচারীদের দিয়ে শহীদদের মৃহদেহ গর্তে ফেলতে বাধ্য করে এবং তাদেরও লাশের স্তূপের পাশে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে খুন করে।

ওই রাতে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠিক কতজনকে হত্যা করা হয়েছিল, তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা আজও হয়নি। যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে বিশ্ববিদ্যালয় তালিকায় তেমন ১৯৫ জনের নাম আছে; যাদের মধ্যে জগন্নাথ হলের ৬৬ জন।

সেদিন ভোরে পাকিস্তানিদের গুলিতে ঘরের মাঝেই প্রাণ হারান মধুর ক্যান্টিনের প্রতিষ্ঠাতা মধুসূদন দের স্ত্রী যোগমায়া, সদ্যবিবাহিত বড় ছেলে রণজিৎ ও পুত্রবধূ রীনা রানী। অসুস্থ মধুসূদন দে লুকিয়ে থেকে প্রাণ বাঁচালেও ঘণ্টাখানেক পর পাকিস্তানিরা আবার ফিরে এসে তাকে ধরে নিয়ে জগন্নাথ হলের মাঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী, শিক্ষকদের সঙ্গে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে।

এদিন ভোর বেলা ৩৬ এলিফেন্ট রোডের বাসায় আগরতলা মামলার ২ নম্বর অভিযুক্ত পাকিস্তানি নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনেন্ট কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা। 

কিউএনবি/অনিমা/২৬শে মার্চ, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/সকাল ৯:৩৯

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit