এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় দিনমজুর আজিজুর রহমান আখ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। দারিদ্রের কশাঘাতে লেখাপড়া মাধ্যমিকেই থেমে যায় তার। বেকার ঘুরে বেড়ানো কিশোর আজিজুর রহমান পেটের দায়ে পরের ক্ষেতে দিন মজুরের কাজ করতে থাকেন। একপর্যায়ে বাড়ির পাশের আখের রস বিক্রেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমানের পরামর্শে তিনিও রস বিক্রির জন্য আখ চাষ শুরু করেন। এখন তিনি সেই আখ চাষেই স্বাবলম্বী হয়েছেন।
আখ চাষী আজিজুর রহমান চৌগাছা পৌর এলাকার কুঠিপাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পাড়া গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে। পরিবার পরিজন নিয়ে তিনি বর্তমানে স্বাবলম্বী ও দারুণ সুখি। বিবাহিত জীবনে তিনি তিন সন্তানের জনক। প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছেন পাকা ফ্ল্যাট বাড়ি। সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করতে চান আজিজুর রহমান।
রবিবার আজিজুর রহমানের আখখেতে গিয়ে দেখা যায়, তিনিসহ আরও কয়েকজন আখ কেটে পরিষ্কার করছেন। তাদের একজন স্থানীয় সবজি চাষি শামছুল আলম এবং দুই সহোদর যশোর সদর উপজেলার ছিলিমপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম ও সোহাগ হোসেন। তারা প্রতি সপ্তাহে দুবার আখ কিনে নিয়ে গিয়ে যশোর শহরসহ বিভিন্ন বাজারে রস বিক্রি করেন। আর সবুরা খাতুন, রোস্তম আলী, সাইফুল ইসলাম গরুর জন্য আখের পাতা সংগ্রহ করছিলেন। প্রায় ১৫ বছর ধরে আখের পাতা নিয়ে গরু-ছাগল পালন করেন সবুরা খাতুন।
আজিজুর রহমান বলেন, ২০০২ সালের দিকে দিনমজুরি করে অনেক কষ্ট করেও সংসার চালাতে পারছিলাম না। তখন চৌগাছা বাজারে আখের রস বিক্রি করতেন আমাদের বাড়ির পাশের বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবর রহমান। তিনি আমার অভাব অনাটন দেখে বলেন, তুমি একবেলা দিনমুজুরের কাজ ও বিকালে আখের রস বিক্রি করতেপারো তাতে তোমার সংসার চালাতে সহজ হবে। তাঁর পরামর্শে ধারদেনা করে হাতে চালানো একটি আখ চাপা মেশিন নিয়ে রস বিক্রি শুরু করি। তিনি পরামর্শ দেন মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের পতিত জমি লিজ-বর্গা নিয়ে নিজেই আখ চাষ করতে। তখন ওই জমি লিজ নিয়ে আখ চাষ করতে শুরু করি। এখন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আখের খেতে পরিচর্যা করি আর দুপুরের পর থেকে নিজের ক্ষেত থেকে আখ কেটে শহরে আখের রস বিক্রি করি। তিনি বলেন আগে হাতে চাপা মেশিনে চেপে রস বিক্রি করতাম। এখন মোটরচালিত মেশিনে চেপে রস বিক্রি করি।
অজিজুর বলেন, শুরুতে এক বিঘা জমিতে আখ চাষ করেছিলাম। এখন সোয়া পাঁচ বিঘা জমিতে আখ চাষ করি। চাষের আখ নিজে রস করে বিক্রি এবং আখও বিক্রি করি। যশোর সদর উপজেলার ছিলিমপুরের সাইফুল ও সোহাগকে দেখিয়ে তিনি বলেন এরা সপ্তাহে দুদিন খেত থেকে আখ কিনে নিয়ে যান। নিজেদের এলাকায় রস বিক্রি করেন। তিনি বলেন, আখের রস বিক্রি করে কয়েক ভিটে জমি কিনে সেই জমিতে প্রায় পনের লাখ টাকা ব্যায়ে ফ্ল্যাট বাড়ি নির্মাণ করেছি। সন্তানদের মধ্যে বড় মেয়ে এবার ¯œাতক শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। ছোট মেয়ে অষ্টম শ্রেণি এবং ছেলে শিশু শ্রেণিতে পড়ছে।
তিনি বলেন, এক বিঘা জমিতে বছরে ৫০০ মণের বেশি আখ উৎপাদন হয়। শীতের শুরুর দিকে ৩০০ টাকা মণ দরে বিক্রি শুরু হয়। ফালগুন-চৈত্র মাসে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত মণ বিক্রি করা যায়। প্রতি বিঘা জমি ১৩ হাজার ৫০০ টাকা বাৎসরিক লিজ নিয়ে আখ চাষ করি। আখের চারা, চাষ, সার, কীটনাশক ¯েপ্র ও জমি লিজ, আখ কাটা মজুরিসহ এক বিঘা জমিতে বছরে খরচ হয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। আখ একবার রোপণ করলে দুই বছর উৎপাদন হয়। বছরে ৫০০ মণ আখ উৎপাদন হয় এবং গড়ে ৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করতে পারলে প্রথম বছরে এক বিঘা জমির আখে দুই লাখ টাকা লাভ হয়। পরের বছরের চাষে খরজ কম তাই লাভ হয় আরও বেশি।
জীবন সংগ্রামী আখ চাষী আজিজুর রহমান দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের কোনো কর্মকর্তা কোন দিন আমার আখ ক্ষেতে আসেন না এবং খোঁজও নেন না। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সমরেন বিশ্বাস বলেন, কোনো উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কেউ এমন লিখিত অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিউএনবি/আয়শা/১৩ই মার্চ, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/সন্ধ্যা ৭:০৯