
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ইউক্রেন দখল করলে পশ্চিমা বিশ্ব কীভাবে পাল্টা আঘাত করবে সে বিষয়ে কোনো ধারণাই নেই ভ্লাদিমির পুতিনের। কংগ্রেসে বার্ষিক স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণে তিনি রুশ নেতার তীব্র সমালোচনা করেন। বাইডেন ‘স্বৈরাচারিতার বিরুদ্ধে স্বাধীনতার বিজয়ের পক্ষে অবিচল থাকার’ প্রত্যয় ঘোষণা করেন। ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকান উভয়দলের আইনপ্রণেতারা প্রেসিডেন্টের এ বক্তব্যকে একযোগে করতালির মাধ্যমে সমর্থন দেন।
যুক্তরাষ্ট্র সময় গতকাল মঙ্গলবার রাতে আইনপ্রণেতাদের সামনে ঘণ্টাখানেকের এ ভাষণে ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘পূর্বপরিকল্পিতভাবে এবং বিনা প্ররোচনায় পুতিন এই যুদ্ধ চালাচ্ছেন। ’ পুতিনকে উদ্দেশ্য করে বাইডেন বলেন, ‘তিনি (পুতিন) ভেবেছিলেন পশ্চিমারা এবং ন্যাটো কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাবে না। তিনি আমাদের ঘরেই বিভেদ সৃষ্টি করতে পারবেন বলে ভেবেছিলেন। ’ ‘পুতিন ভুল ভেবেছিলেন। আমরা ছিলাম প্রস্তুত’, যোগ করেন বাইডেন।

ইউক্রেনের পক্ষে বাইডেনের বক্তব্যকে সমর্থন জানান সবাই, তাদের হাতে ইউক্রেনের পতাকাও দেখা যায়, ছবি: গেটি ইমেজ যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে রাশিয়ার উড়োজাহাজের উড্ডয়ন নিষিদ্ধ করা হবে বলে ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। কানাডা এবং ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষের অনুরূপ সিদ্ধান্তের পর একই ধরনের ঘোষণা দিলেন তিনি। রাশিয়ার অর্থনীতি ও অর্থব্যবস্থা এবং খোদ পুতিনের ঘনিষ্ঠচক্রের কয়েকজনের ওপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদেশগুলো।

ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ওকসানা মারকারোভাকে দাঁড়িয়ে করতালির মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয়, ছবি: বিবিসি’র ভিডিও ফুটেজ থেকে নেওয়া
বাইডেন তার আগে লেখা নির্ধারিত বক্তব্যের বাইরেও পুতিনকে হুমকি দেন এবং অর্থনৈতিক বদলা নেওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘সামনে কী ঘটতে চলেছে পুতিনের সে সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই’। এসময় মার্কিন ফার্স্টলেডি জিল বাইডেনের ভিআইপি বক্সে বসেছিলেন রুশ হামলার শিকার ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ওকসানা মারকারোভা। তাঁকে স্বাগত জানান বাইডেন। ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূতকে উঠে দাঁড়িয়ে অভ্যর্থনা জানান সবাই।
কংগ্রেসে ভাষণের কয়েক ঘণ্টা আগেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলেন জো বাইডেন। রাশিয়ার হামলার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে কী কী সহায়তা দিতে পারে সে বিষয়ে কথোপকথন হয় তাঁদের মধ্যে। প্রতিনিধি পরিষদের চেম্বারে দাঁড়িয়ে আইনপ্রণেতাদের প্রতি বাইডেনের উদাত্ত আহ্বান ছিল, ‘আসুন, আমরা সবাই ইউক্রেন এবং গোটাবিশ্বের কাছে একটি সুস্পষ্ট বার্তা পাঠাই। ’
বাইডেনের বক্তব্যের মধ্যে সাধারণত দুই মেরুতে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রধানদলের সদস্যরা ইউক্রেনের পক্ষে একযোগে দাঁড়ান। হাততালি ও আনন্দধ্বনির মাধ্যমে তারা ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জানার। কংগ্রেস সদস্যদের অনেকেরই হাতে ছিল ইউক্রেনের পতাকা। ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ মার্কিন প্রেসিডেন্টের একটি বার্ষিক ভাষণ। এটি ছিল বাইডেনের প্রথম আনুষ্ঠানিক ভাষণ। গতবছর ক্ষমতায় আসার পর এই ভাষণের প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট সময় পাননি তিনি। এ ভাষণে দেশের চলমান অবস্থা এবং প্রেসিডেন্টের কর্মসূচি ও লক্ষ্য উপস্থাপন করা হয়।
রিয়েলক্লিয়ারপলিটিকস বলছে, বাইডেনের প্রতি দেশের মানুষের সমর্থনের হার এখন ভালো নয়। মাত্র ৪০ দশমিক ৬০ শতাংশ নাগরিক প্রেসিডেন্টের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণকেই বাইডেন দেশের এখন সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক সংকট হিসেবে তুলে ধরেছেন। নানামুখী অভ্যন্তরীণ সমস্যারও মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাকে।
সূত্র: বিবিসি
কিউএনবি/আয়শা/২রা মার্চ, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৪:৩০