
ডেস্ক নিউজ : ‘অব্যাহতভাবে চাকরিবিধি লঙ্ঘন করার’ অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপসহকারী পরিচালক পদ থেকে শরীফ উদ্দিনকে অপসারণ এবং অপসারণের পর শরীফ উদ্দিনের পাল্টা অভিযোগে উদ্ভূত পরিস্থিতির স্বাধীন অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন করা হয়েছে। আজ বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবীর পক্ষে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত করে আলোচনায় আসা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপসহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি শরীফকে অপসারণের প্রজ্ঞাপন জারি করে দুদক কার্যালয়। দুদকের ভাষ্য ‘অব্যাহতভাবে চাকরিবিধি লঙ্ঘন করায়’ কমিশনের ‘ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থে’ শরীফ উদ্দিনকে নোটিশ ছাড়াই অপসারণ করতে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েছে। অপসারণের পরদিন ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় প্রধান কার্যালয়ের সামনে এবং কমিশনের আরো কয়েকটি সমন্বিত জেলা ও বিভাগীয় কার্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানববন্ধন করে শরীফের অপসারণের প্রতিবাদ জানান। মানববন্ধন শেষে অপসারণের আদেশ বাতিল করার পাশাপাশি কমিশনের কর্মকর্তাদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়ে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেনকে স্মারকলিপি দেন শরীফের সহকর্মীরা।
এদিকে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে এ ঘটনায় দুদকের ‘বিশ্বাসযোগ্যতা’ নিশ্চিত করার জন্য শরীফ উদ্দিনের চাকরিচ্যুতি নিয়ে ‘সৃষ্ট ধোঁয়াশা’ দূর করার দাবি জানায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এরপর গত ২০ ফেব্রুয়ারি শরীফ উদ্দিনকে অপসারণের ১৩টি কারণ উল্লেখ করে প্রেস ব্রিফ করেন দুদক সচিব। এসব অভিযোগ আবার খণ্ডন করেন শরীফ উদ্দিন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত রবিবার অপসারিত মো. শরীফ উদ্দিনের জীবনের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় বা উপযুক্ত আদেশের আরজি জানিয়ে হাইকোর্টে চিঠি দেন সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী। একই চিঠি দেওয়া হয় সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ও সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট বেঞ্চে দায়িত্ব পালিনকারী একজন আইন কর্মকর্তাকেও। ১০ আইনজীবীর পক্ষে চিঠিটি দেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। সংশ্লিষ্টদের দপ্তরে গিয়ে তিনি এ চিঠি দিয়ে আসেন।
সুপ্রিম কোর্ট (হাইকোর্ট) রুলস, ‘১৯৭২ এর ১১(ক) অধ্যায়ের ১০ বিধি অনুযায়ী এ চিঠি দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে সে চিঠিতে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী চিঠিটি আবেদন হিসেবে গ্রহণ করার আরজি জানানো হয়। ’মঙ্গলবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে সে চিঠি তুলে ধরে আদেশের আরজি জানালে আদালত সংক্ষুব্ধ আইনজীবীদের যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন নিয়ে আসতে বলেন। আইনজীবীকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, ‘যা কিছু আছে যুক্ত করে আবেদন নিয়ে আসেন। কিভাবে আপনারা সংক্ষুব্ধ সে ব্যাখ্যাসহ আবেদন নিয়ে আসেন আমাদের কাছে। ’ এর পরই বুধবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদন করলেন ওই ১০ আইনজীবী।
রুল চাওয়ার পাশাপাশি রিটে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বায়ত্তশাসিত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখতে উদ্ভূত এ পরিস্থিতির স্বাধীন অনুসন্ধানের জন্য একটি কমিটি গঠনের আরজি জানানো হয়েছে। স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বায়ত্তশাসিত দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখতে উদ্ভূত এ পরিস্থিতির স্বাধীন অনুসন্ধানের জন্য একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, জানতে রুল চাওয়া হয়েছে। দুদকের চেয়ারম্যান, কমিশনার (অনুসন্ধান), কমিশনার (তদন্ত), সচিব, পরিচালক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ), মো. শরীফ উদ্দিনকে বিবাদী করা হয়েছে রিটে।
রিট আবেদনে বলা হয়েছে, চাকরিবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপসহকারী পরিচালক পদ থেকে মো. শরীফ উদ্দিনকে অপসারণ এবং আপসারণের পর দুদকের বিরুদ্ধে শরীফ উদ্দিনের পাল্টা অভিযোগের কারণে জনমনে ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, এখানে গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। ফলে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বায়ত্তশাসিত দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখতে বিষয়টির স্বাধীন অনুসন্ধানের জন্য একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হোক এবং কমিটির কাছে অনুসন্ধান প্রতিবেদন চাওয়া হোক।
জনস্বার্থে রিট আবেদনটি করা হয়েছে জানিয়ে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আলোচিত ওই ঘটনায় অপসপারিত শরীফ উদ্দিন এবং দুদকের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের অনুসন্ধান চেয়েছি। অনুসন্ধানেই প্রকৃত সত্য উঠে আসবে, জনমনে বিভ্রান্তি দূর হবে। ’রিট আবেদনটি সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট বেঞ্চে জমা দেওয়া হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী আবেদনটি আদালত শুনবেন বলে জানান আবেদনকারী আইনজীবী শিশির মনির।
কিউএনবি/আয়শা/২৩শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৪:৩৩