বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:২৪ অপরাহ্ন

প্রস্তাবিত নামের তালিকা প্রকাশের দাবি বিশিষ্টজনদের

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
  • ৭৫ Time View

 

ডেস্ক নিউজ : নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের, সৎ-নিষ্ঠাবানদের নাম প্রস্তাবে অনুসন্ধান কমিটিকে পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। সেই সঙ্গে তারা দাবি জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ও বিভিন্ন ব্যক্তির প্রস্তাবিত নাম প্রকাশের পাশাপাশি কমিটির মনোনীত ১০ জনের নাম গণমাধ্যমে প্রকাশ করার। দলীয় সরকারের বিশেষ সুবিধাভোগী ব্যক্তির নাম প্রস্তাব না করার পরামর্শও দিয়েছেন তারা। নতুন নির্বাচন কমিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের বাছাইয়ে আমন্ত্রিত শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিক, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী, অধিকার কর্মীদের কাছ থেকে এ পরামর্শ ও দাবি এসেছে।

আজ শনিবার সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে বেলা সোয়া ১১টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত দুই দফা মোট ২৫ জনকে নিয়ে বৈঠকে বসে অনুসন্ধান কমিটি। প্রথম বৈঠকে অংশ নেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ, ফিদা এম কামাল, সাবেক মন্ত্রিপরিষদসচিব আলী ইমাম মজুমদার, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, মুনসুরুল হক চৌধুরী, রোকনুদ্দিন মাহমুদ, এম কে রহমান, ড. শাহদীন মালিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন খান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ড. মাকসুদ কামাল, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মাহফুজা খানম, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ ও ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্সের প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান।

বেলা সোয়া ১১টায় শুরু হয়ে প্রথম বৈঠকটি চলে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যওন্ত। এরপর বেলা পৌনে ১টা থেকে আড়াইটা পর্যটন্ত দ্বিতীয় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে যোগ দেন দৈনিক আজকের পত্রিকার সম্পাদক গোলাম রহমান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান জাফরুল্লাহ চৌধুরী, দৈনিক জাগরণের সম্পাদক আবেদ খান, দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম, দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি  ফরিদা ইয়াসমিন, একাত্তর টেলিভিশনের মোজাম্মেল হক বাবু, দৈনিক ইত্তেফাকের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, এনটিভির বার্তা সম্পাদক জহিরুল আলম ও সাংবাদিক স্বদেশ রায়।

অনুসন্ধান কমিটির সভাপতি বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সভাপতিত্বে বৈঠকে ছিলেন কমিটির সদস্য বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহা হিসাব নিয়ন্ত্রক ও নিরীক্ষক (সিএজি) মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মাহফুজা খানম সাংবাদিকদের বলেন, এই অনুসন্ধান কমিটি যে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবে তাদের চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট হতে হবে, তিনি যেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ হন। আমলা বা যেকোনো পেশা থেকে তিনি বা তাদের নাম আসতে পারে। যে পেশা থেকেই আসেন না কেন, তাদের স্বচ্ছ ব্যক্তি চরিত্র ও সততা থাকতে হবে। অর্থের মোহ যেন তাদের না থাকে। এ অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে তাতে দেশের গণতন্ত্র সৃদৃঢ় হবে বলে মনে করেন তিনি।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী নিজের প্রস্তাবিত নাম উল্লেখ করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘যদিও বিএনপি এবং আরো কিছু রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে নাম আসেনি। তাদের কাছ থেকে নাম পেতে আবার চেষ্টা করা উচিৎ। আমার মতে সরকার পরিবর্তনের আন্দোলনও লাগবে একটা নির্বাচনও লাগবে। নির্বাচন কমিশনে যদি ভালো লোক না যায়, সাহসী লোক না যায় তাহলে সরকার পরিবর্তন হবে না। এজন্য কমিটিকে আবার চেষ্টা করে দেখতে বলেছি। লোকজন যদি ভোট দিতে না আসে, যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন না হয় তাহলে তো জাতির জন্য কঠিন সমস্যা সৃষ্টি হবে। যে কারেণ এটা আমাদের সবার দায়িত্ব। ’সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘কোনো দলীয় সরকারের সময় (বর্তমান সরকার হোক বা আগের দলীয় সরকার হোক) বিশেষভাবে সুবিধাভোগী কোনো ব্যক্তি যাতে নির্বাচন কমিশনে স্থান না পায়। এ দাবি আমি জানিয়েছি এবং অনেকেই এ দাবি সমর্থন করেছেন। ’

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, একজন আইনজীবী ও একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে আমি বলেছি অনুসন্ধান কমিটি যাদের মনোনয়ন করবেন তারা যেন স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি হয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে। বৈঠকে যারা ছিলেন তারা সবাই আমার এই বক্তব্যকে সমর্থন করে অনুসন্ধান কমিটিকে অনুরোধ করেছেন, যাদের নাম প্রস্তাব করা হবে তারা যেন, সৎ, নিষ্ঠাবান এবং যোগ্য হন। আর্থিক মোহ বা যেকোনো মোহের বাইরে থেকে যেন নির্বাচন কমিশন পরিচালনা করতে পারেন। ’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষক আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘যারা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পাবে তারা যেন আগের কোনো সরকারের আমলে বিশেষ সুবিধাভোগী না হন। ’এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে, চাকরির মেয়াদ বাড়িয়ে নেওয়ার মাধ্যমে, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের মাধ্যমে কোনো কোনো সরকার তার বিশ্বস্ত লোকদের সুবিধা দিয়ে থাকে। এই ধরনের লোক যেন নির্বাচন কমিশনে না আসেন। অনেকে অবসরে যাওয়ার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন সরাসরি। তারা যেন না আসেন। যাদের সাথে সরকারের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সম্পর্ক আছে তারা যেন না আসেন। ’

বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের নীতি-অবস্থানের সমালোচক আসিফ নজরুল বলেন, ‘এ নির্বাচন কমিশনে যারা আসবে তাদের যেন অবশ্যই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করার মতো একটি মানসিকতা থাকে, সাহসিকতা থাকে, ব্যক্তিত্ব থাকে। তার সাথে বলেছি, যাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তাদের সব নাম যেন আগেই প্রকাশ করা হয়। আইনের এ শিক্ষক বলেন, ‘নির্বাচন ব্যবস্থা তো খুবই সঙ্কটের মধ্যে আছে। যে কারণে এই অনুসন্ধান কমিটির একটি বিরাট দায়িত্ব হচ্ছে এই নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা। জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা। যাতে সুষ্ঠু এবং অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে সত্যিকারের জনপ্রতিনিধিত্বের সরকার কায়েম হয়। ’

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন সবার কাছে  ‘গ্রহণযোগ্য’ নির্বাচন কমিশন গঠনে ব্যক্তি বাছা্য়ের ক্ষেত্রে অনুসন্ধান কমিটিকে বিষয়টি মাথায় রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক সাংবাদিকদের বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যে নাম দিয়েছে সেগুলো প্রকাশ করার কথা বলেছি। বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো যদি বামপন্থী লোকদেরই নাম প্রস্তাব করে থাকে, জাতীয় পার্টি যদি দলের প্রতি সহানুভূতিশীল কারো নাম দিয়ে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে হয়ে যাবে রাজনৈতিক দলগুলো সুষ্ঠু নির্বাচন এবং নির্বাচন কমিশন চায় না। কাজেই নাম প্রকাশ করলে আমরা বুঝতে পারব রাজনৈতিক দলগুলো উদ্দেশ্য কি।

একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবুও কমিটিকে গ্রহণযোগ্য একটি তালিকা প্রকাশের সুপারিশ করেছেন বলে সাংবাদিকদের জানান। এ ছাড়া সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, ধর্মীয়, জাতিগত সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের কমিশনে রাখার সুপারিশও করেছেন বলে জানান তিনি। এ ছাড়া আজকের কাগজের সম্পাদক ড. গোলাম রহমান, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ ও দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলমও কর্মে, যোগ্যতায় সৎ-সাহসী, নির্লোভ ব্যক্তিদের পাশাপাশি সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, ধর্মীয়, জাতিগত সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের নাম প্রস্তাবের জন্য অনুসন্ধান কমিটিকে সুপারিশ করেছেন বলে সাংবাদিকদের তারা জানান।

তিন শতাধিক নামের প্রস্তাব

দুই দফায় বৈঠকের পর বিকেলে মন্ত্রীপরিষদসচিব আনোয়ারুল ইসলাম অনুসন্ধান কমিটির পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন সাংবাদিকদের কাছে।

তিনি বলেন, প্রায় তিন ঘণ্টায় দুটি বৈঠক। তারা (বিশিষ্টজনেরা) বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। সবারই বক্তব্য হচ্ছে, এমন একটা নির্বাচন কমিশন গঠন করা যা সবার আস্থাভাজন হয়, ভালো একটা নির্বাচনের ব্যবস্থার জন্য তারা (নির্বাচন কমিশন) যেন পদক্ষেপ নিতে পারেন। এটাই ছিল তাদের মূল বক্তব্য। এ ছাড়া আরো কিছু বিভিন্ন সুপারিশ, প্রস্তাবনা তারা দিয়েছেন, কমিটি সেগুলো নোট করেছে।

অনুসন্ধান কমিটি রবিবার বিকেলে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে আরো একটি বৈঠক করবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ওই মিটিংয়ের পরে সুপারিশগুলো নিয়ে বসে কমিটি পরবর্তী কর্মপদ্ধতি ঠিক করবে। আপনারা হয়তো এরই মধ্যে জেনে ফেলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ১৩৬ জনের, পেশাজীবীদের কাছ থেকে ৪০ জনের, ব্যক্তিগতভাবে ৩৪ জনের এবং ইমেইলসহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে ৯৯ জনের নামের প্রস্তাব পেয়েছি। এই নামগুলো নিয়ে কমিটি বসবে। বসে কিভাবে বাছাই করা যায় সেটা চিন্তাভাবনা করবে। ’

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১২ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/রাত ৮:৫৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit