বুধবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৭ অপরাহ্ন

আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ-গুলি, নিহত ২

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০২২
  • ১০২ Time View

 

ডেস্কনিউজঃআধিপত্য বিস্তার ও গ্রামে ফেরাকে কেন্দ্র করে নরসিংদীর রায়পুরায় বাঁশগাড়ী ও মির্জাচরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ১ জন গুলিবিদ্ধসহ ২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০ জন।

এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে নূরুল নামে একজনকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে এলাকা দুটিতে উত্তেজনা বিরাজ করছে। খবর পেয়ে রায়পুরা থানা পুলিশসহ অতিরিক্ত পুলিশ এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে।

রোববার সকালে রায়পুরার দুর্গম চরাঞ্চল বাঁশগাড়ী ও মির্জাচর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- রুবেল মিয়া (৩২) ও মামুন মিয়া (৩০)। নিহত রুবেল মিয়া রায়পুরার মির্জাচরের মানিক মিয়ার ছেলে। তিনি মির্জাচরের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুকুল ইসলামের চাচাতো ভাই। অপর নিহত মামুন মিয়া মির্জাচর গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে। তিনি মির্জাচর ইউনিয়নের নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল মানিকের সমর্থক।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, এলাকার অধিপত্য ও নির্বাচনী সহিংসতার জের ধরে দীর্ঘদিন যাবত নরসিংদী রায়পুরার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের সদ্য সাবেক আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান আশ্রাফুল হকের সঙ্গে বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান জাকির হোসেন রাতুলের দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। দ্বন্দ্বের জের ধরে তাদের মধ্যে একাধিক বার হামলা-পাল্টা হামলা ও মামলার ঘটনা ঘটে। ওই সব হামলায় একাধিক লোক নিহতসহ প্রায় ৩ শতাধিক মানুষ আহত হয়।

এরই মধ্যে ২য় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান তৎকালীন চেয়ারম্যান আশ্রাফুল হক। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয় জাকির হোসেন রাতুল। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরও তীব্র হয়। এদিকে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে নির্বাচনের দিন ভোর রাত থেকেই কেন্দ্র দখলের চেষ্টা চালায়।

এরই জের ধরে রাত ৩টার দিকে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান জাকির হোসেন রাতুলের সমর্থকরা দেশি-বিদেশি অস্ত্র-শস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান আশ্রাফুল হকের সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। ওই সময় উভয়পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বেধে যায়।

সংঘর্ষে নির্বাচনের দিন সকালে নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান রাতুলের ২ সমর্থক ও আশ্রাফুলের ১ সমর্থক সহ ৩ জন নিহত হয়। আহত হয় কমপক্ষে শতাধিক মানুষ। ১১ নভেম্বর নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকির হোসেন রাতুল বিজয়ী হওয়ার পর এলাকা ছাড়া হয়ে পড়ে সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আশ্রাফুল হক ও তার সমর্থকরা।

এদিকে নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর পরাজয়ের পর মির্জাচর ইউনিয়নের ফারুকুল ইসলাম ও তার সমর্থকরাও গ্রাম ছাড়া হয়ে পড়েন। প্রায় আড়াই মাস গ্রাম ছাড়া থাকার পর বাঁশগাড়ী ও মির্জাচরের নৌকা প্রতীকের লোকজন সম্মিলিত হয়।

পরে রোববার সকালে প্রথমে তারা আশ্রাফুল হক ও তার সমর্থকদের নিয়ে বাঁশগাড়ী গ্রামে ফেরেন। এতে বাধা দেয় বাঁশগাড়ীর বর্তমান চেয়ারম্যান রাতুল সমর্থকরা। এ নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় ১ জন গুলিবিদ্ধ সহ আরও ৫ জন আহত হয়।

পরে আশ্রাফুল হক ও তার সমর্থকরা গ্রামে ফেরার পর তাদের সহায়তা নিয়ে মির্জাচর ইউনিয়নের ফারুকুল ইসলামের সমর্থকরা মির্জাচর গ্রামে ফেরার চেষ্টা চালায়।

ওই সময় মির্জাচরের নব-নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল মানিক সমর্থকরা বাধা দেয়। এসময় উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে ফারুকুল ইসলামের চাচাতো ভাই রুবেল মিয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। আহত হয় আরও ৫ জন। এদের মধ্যে মামুন মিয়ার হাত কেটে নেয় প্রতিপক্ষরা। গুরুতর আহতাবস্থায় মামুন মিয়াকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ভৈরব হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকাল সাড়ে ৫টায় তার মৃত্যু হয়।

এদিকে মির্জাচর ইউপি চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল মানিক সমর্থকদের সঙ্গে মামলা সংঘর্ষ ও বাধার মুখে ফারুকুল সমর্থকরা গ্রামে ঢুকতে পারেনি। খবর পেয়ে রায়পুরা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

মির্জাচর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুকুল ইসলাম বলেন, বাঁশগাড়ীর সাবেক চেয়ারম্যান আশ্রাফুলের লোকজনকে গ্রামে তুলে দিতে মির্জাচর থেকে লোকজন বাঁশগাড়ী যায়। সেখানে তাদের ধাওয়া দিয়ে মির্জাচর পাঠালে বাঁশগাড়ীর রাতুল চেয়ারম্যানের হয়ে মির্জাচরের মানিক চেয়ারম্যানের লোকজন তাদের ওপর হামলা চালায়। ওই সময় প্রতিপক্ষের ছোড়া গুলিতে আমার চাচাতো ভাই রুবেল মারা যায়।

অভিযোগ অস্বীকার করে মির্জাচর ইউপি চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল মানিক সাংবাদিকদের বলেন, মূলত বাঁশগাড়ীর সাবেক চেয়ারম্যান আশ্রাফুল ও মির্জাচরের ফারুকুল ইসলাম এক গ্রুপ। তারা একে অপরকে বরাবরই সহায়তা করে। রোববার আশ্রাফুলের লোকজনকে গ্রামে তুলে দিতে ফারুকুলের লোকজন লাঠিয়াল হিসেবে বাঁশগাড়ী যায়। সেখানে রাতুল চেয়ারম্যানের লোকজন তাদের বাধা দেয় এবং ধাওয়া দিয়ে মির্জাচর এনে গণ্ডগোল করেন। এতে ২ জন নিহত হয়। এর মধ্যে একজন আমার সমর্থক অপরজন ফারুকুলের সমর্থক।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান জানান, গ্রামে ফেরাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ১ জন নিহত হওয়ার তথ্য পেয়েছি। এ মুহূর্তে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পরবর্তী সহিংসতা রোধে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

কিউএনবি/বিপুল/৩০শে জানুয়ারি, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ | রাত ১০:৩২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

September 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit