এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় বেড়েছে তীব্র শীত প্রাণীকুলে পড়েছে ঠান্ডা কনকনে শীতের প্রভাব। নিম্ন আয়ের মানুষেরচরম দুর্ভোগ। দিনের সূর্যর দেখা মেলেনি আকাশে। বোঝার উপায় নেই দিনের আলো ফুটেছে কিনা। তাই ঘন কুয়াশা চারপাশ জুড়ে উড়ছে ধোয়া হয়ে। যানবাহনগুলো সারা দিন হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। ঘন কুয়াশায় শীতের তীব্রতা আর শীতল বাতাস সব মিলিয়ে কাহিল হয়ে পড়ছে উপজেলার মানুষজনসহ প্রাণীকুল। আর এই তীব্র শীতে খেটে খাওয়া দিনমজুর ও ছিন্নমূল মানুষেরা পড়েছে বিপাকে। শীতের মাঝেও পানিতে ভিজে শত কষ্টে ইরি ধানের চারা রোপনের কাজ করতে হচ্ছে তাদের। এসব শ্রমিকরা শীত নিবারণে সম্বল হিসেবে খড়-কাঠে আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরমের চেষ্টা করতে দেখা গেছে।
চৌগাছা অঞ্চলে ক্রমেই তাপমাত্রা কমছে। এর সাথে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ আর উত্তরের হিমেল হাওয়ায় কনকনে শীত বিরাজ করছে। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ছিন্নমূল বস্তিবাসী আর নি¤œ আয়ের মানুষের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তীব্র শীতে নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে যে পরিমান শীত বস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। যশোর জেলা হাবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পঞ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এবং মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। সারা দেশেই বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
আগামী ৪৮ ঘন্টা এমন হাবহাওয়া বিদ্যামান থাকার পরে যশোর-চৌগাছা অঞ্চলে দিনের তাপমাত্রা আরো কমতে পারে বলে জানিয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে যশোরের চৌগাছায় ধারাবাহিকভাবে তাপমাত্রা কমছে। গত শুক্রবার থেকে দিনে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি তাপমাত্রা লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া রাতের তাপমাত্রা আরো কম থাকছে। গত দুইদিন সুর্যের দেখা মেলেনি মাঝে মাঝে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি আর হালকা হিমেল বাতাশে শীতের তীব্রতা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। রবিবার সারাদিন সূর্য্যরে দেখা মেলেনি। দিনে কয়েক বার গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি আর মেঘলা আবহাওয়ার পাশাপাশি উত্তরের হিমেল হাওয়ায় কনকনে শীত হাঁড় কাপিয়েছে সারাদিন।
আগামী কয়েক দিনে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে আভাস দিচ্ছে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম। এদিকে প্রতিবছর শীত মৌসুমে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র সহায়তা করলেও এবার চোখে পড়ার মতো তাদের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন ব্যাক্তি যে পরিমান শীত বস্ত্র বিতরণ করছেন তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। গত কয়েকদিনের মেঘলা আবহাওয়ায় শীতের পাশাপাশি ঘন কুয়াশা ও শীতল বাতাস নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করছে। তীব্র শীতে উচ্চ ও মধ্যবিত্তদের তেমন অসুবিধা না হলেও বিপাকে পড়তে হয়েছে নি¤œ আয়ের ও ছিন্নমূল মানুষদের। শীতের মধ্যে শত কষ্ট হলেও পেটের দায়ে ঘর থেকে বের হচ্ছেন কাজের সন্ধানে। এই তীব্র শীতে কষ্ট পেতে হচ্ছে শিশু-বৃদ্ধসহ সব বয়সের মানুষদের।
উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের দিনমুজুর লিটন হোসেন (৪৫) বলেন, আমি দিন আনি দিন খাই। একদিন কাজ না করলে সংসার চলবে কি দিয়ে ? যতই শীত হোক পরিবারে সদস্যদের মুখে এক মুঠো খাবার তুলে দিতে কাজে যেতেই হবে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ কাজে না গেলে ওষুধ কিনবো কি দিয়ে! ভ্যান চালক আশাদুল ইসলাম বলেন, এই রকম শীতে ভ্যান চালানো খুবই কষ্টকর। তার পরেও তেমন একটা যাত্রী নেই। সারাদিন বসে থেকে যা আয় হবে তাতে খাবার কিনার টাকা হয়না, শীতে গরম কাপড় কেনার চিন্তা স্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার লাকি বলেন, এই তীব্র শীতে শিশু ও বৃদ্ধ মানুষ বেশি অসুস্থ হয়। শীতে শিশুরা নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ঠান্ডা,কাশি, সর্দি, অ্যাজমা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। শিশু যেন ঠান্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত না হয় সে জন্য পরিবারে সদস্যদের খেয়াল রাখতে হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, সরকারি বরাদ্ধের পাশাপাশি নিজ উদ্যোগে ছিন্নমুল মানুষের মধ্যে গরম কাপড় বিতরণ অব্যহত রয়েছে।
আয়শা/২৩শে জানুয়ারি, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/রাত ৯:৫৬