খোরশেদ আলম বাবুল,শরীয়তপুর প্রতিনিধি : অনেক অনুসন্ধান ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে প্রথমবারের মতো শরীয়তপুরে গ্যাস অনুসন্ধানে কূপ খনন কাজ শুরু করেছে বাপেক্স। জমির মালিকদের কাছ থেকে দুই বছরের জন্য জমি লিজ নিয়ে চলছে গ্যাস উৎপাদন কূপ তৈরীর কাজ। চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস পাওয়া গেলে এলাকার দৃশ্যপট পাল্টে যেতে পারে। বাড়তে পারে কর্মসংস্থান। গ্যাস না মিললে কি হবে? সেই বিষয়টিও ভাবাচ্ছে এলাকাবাসীকে।বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এ্যান্ড প্রোডাকশন লিমিটেড (বাপেক্স) ও জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে শরীয়তপুরের মেঘনা নদীর তীর থেকে খুলনা পর্যন্ত এলাকাজুড়ে দ্বিমাত্রিক সিসমিক জরিপ সম্পন্ন হয়। জরিপে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চামটা ইউনিয়নের দিনার গ্রামে সন্ধান পাওয়া যায় প্রাকৃতিক গ্যাসের। চালানো হয় নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
পরবর্তীতে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দেড়বছর মেয়াদি ‘শরীয়তপুর তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কূপ খনন প্রকল্প-১’ অনুমোদন করা হয়। ২০২১ সালের জুলাই থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ চলবে। এই লক্ষ্যে স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে সাড়ে ছয় একর জমি দুই বছরের জন্য লিজে গ্রহণ করেছে বাপেক্স। নির্ধারণ করা হয়েছে কূপ খননের স্থান। লিজকৃত জমির চার পাশে পাইলিং করে বালু ভরাট করা হচ্ছে। ভারী যন্ত্রপাতি আনা-নেয়ার কাজের সড়ক থেকে প্রকল্প পর্যন্ত সড়ক ও কালভার্ট নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। দিনারা গ্রামের ১৮টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে জমির লিজ বাবদ ২৫ লাখ ১৯ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।
এই সংবাদে এলাকাবাসী উল্লাসিত। গ্যাস প্রকল্পকে ঘিরে বুনছে নতুন নতুন স্বপ্ন। দর্শনার্থীদেরও আগমন ঘটছে গ্যাস কূপে। চলতি বছর পদ্মা সেতু চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে আর সাথে যোগ হতে যাচ্ছে গ্যাস উত্তোলন। দুই মিলে দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতির রূপরেখা ও দৃশ্যপট পাল্টে যাওয়ার স্বপ্নও তাদের চোখে। সম্ভাবনাময় গ্যাস প্রকল্পে সফলতা এলাকাবাসীর স্বপ্ন পূরণে সহায়ক হবে। পাশাপাশি চাহিদামতো গ্যাস না পাওয়া গেলে জমি হারানোর বেদনায়ও ব্যথিত হবেন তারা।চামটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন রাড়ী জানায়, আমার ইউনিয়নের দিনারা গ্রামে গ্যাস পাওয়া গেছে। জমি লিজ প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করে গ্যাস কূপ খনন চলছে। এই নিয়ে জনমনে একটা উৎসাহ উদ্দিপনা বিরাজ করছে। গ্যাস পাওয়া গেলে এলাকার উন্নয়ন হবে।
ঢাকা থেকে আসা দর্শনার্থী ইদ্রিস মিয়া ও এলজিইডির কর্মচারী শাবান মাহমুদ জানায়, গ্যাসের সন্ধান মিলেছে শুনে দেখতে এসেছি। এসে শুধু ভ্যাকু দিয়ে পাইলিং করতে দেখলাম। মাঝখানে একটা পুকুরও খনন করে রেখেছে। এছাড়াতো আর কিছুই দেখছি না। এখানে গ্যাসের কোন নিদর্শন আছে কি না তা দেখে বুঝতেছি না।প্রকল্প পরিচালক তোফায়েল সিকদার বলেন, অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যেই এখানে কূপ খনন করা হচ্ছে। কূপ খনন শেষে পরীক্ষা নিরীক্ষা করব। পরবর্তীতে গ্যাসের অবস্থান বুঝতে পারব। এরপর গ্যাসের পরিমাণের ওপরে মন্ত্রণালয় যে নির্দেশনা দিবে সেই অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ রাসেদউজ্জামান বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে শরীয়তপুরে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে সম্ভাবনা সৃষ্টি হচ্ছে। তার সাথে বাপেক্সের গ্যাস কূপ যোগ করবে নতুন সম্ভাবনা। এই অঞ্চলে শিল্প-কলকারখানা গড়ে উঠবে। মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। আমাদের জন্য খুব আনন্দের খবর যে বাপেক্স যে উদ্যোগটি নিয়েছে এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এই কাজটির তদারকি করছে। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে দুই বছরের জন্য জমির হুকুম দখল নিতে মালিকদের নোটিশ দেয়া হয়েছে।
কিউএনবি/অনিমা/১১ই জানুয়ারি, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/ বিকাল ৩:০৫