ডেস্ক নিউজ :আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে কৃষি খাতে যে অঙ্গীকার ছিল, তিন বছরে তার কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে? কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক : কৃষির ক্ষেত্রে সাফল্য অনেক। এখন অনেক ফসলে আমরা সর্বোচ্চ উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় এক থেকে দশের মধ্যে আছি। ২০০৯ সাল থেকে গত ১৩ বছরে আমরা আলু, আম, ধানসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে রেকর্ড গড়েছি। দেশের বেশির ভাগ এলাকায় একটি বা দুটি ফসল হতো। এখন দুই থেকে তিনটি ফসল হচ্ছে। আগে হেক্টরপ্রতি আমাদের চাল উৎপাদন হতো গড়ে এক টনের কিছু বেশি। এখন তা গড়ে তিন টনের বেশি হচ্ছে। বাংলাদেশ খাদ্যশস্যের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে অনেক ক্ষেত্রে বৈশ্বিক গড় উৎপাদনশীলতাকেও ছাড়িয়ে গেছে। নির্বাচনী ইশতেহার অনুসারে আমরা অনেক কিছু করেছি। এর মধ্যে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ অন্যতম। কৃষিপণ্য রপ্তানি বাড়ানোর চেষ্টা করছি।
যান্ত্রিকীকরণ যদি বাড়ে তাহলে আগামী দিনের কৃষির চিত্র কেমন হবে? কৃষিমন্ত্রী : আমাদের আগামীর কৃষি হবে আরো আধুনিক ও বাণিজ্যিক। এর মাধ্যমে অনেক কর্মসংস্থানও হবে। কৃষি শ্রমিকের ঘাটতি দিন দিন প্রকট হচ্ছে। সে জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যান্ত্রিকীকরণের উদ্যোগ নিয়েছি। তিন হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষির আধুনিকায়ন হবে। ২০১০ সাল থেকেই কৃষকদের মাঝে বিভিন্ন যন্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে মোট ৬৯ হাজার ৮৬৮টি কম্বাইন হারভেস্টার, রিপার, সিডার, পাওয়ার ট্রিলারসহ কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে।
উচ্চমূল্যের কারণে ছোট কৃষকরা কৃষি যন্ত্র কিনতে পারছেন না। এর সমাধান কী? কৃষিমন্ত্রী : দেশে অনেক কম্পানি কৃষি যন্ত্রপাতি বিক্রি করছে। এর বাজার এখন বিশাল। সেচযন্ত্র, ধান কাটার কম্বাইন হারভেস্টারসহ বিভিন্ন যন্ত্রের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, কেউ বাংলাদেশে এসব প্রস্তুত করছে না, অ্যাসেম্বল করছে না। সবাই বিদেশ থেকে আমদানি করে বিক্রি করছে। অবশ্য ব্রি সম্প্রতি ধান কাটার যন্ত্র কম্বাইন হারভেস্টার তৈরি করেছে, যা দামে অনেক কম ও ছোট জমিতে ব্যবহারের উপযোগী। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলছেন। কিন্তু এখনো আমাদের চাল আমদানি করতে হচ্ছে কেন?
কৃষিমন্ত্রী কিছু চাল আমদানি করতে হচ্ছে আমাদের। চালের এ সংকট সাময়িক। এর পরিমাণও খুব বেশি নয়। প্রতিবছর চালের চাহিদা বাড়ছে, সে হারে জমি বাড়ছে না। একই জমিতে বিভিন্ন ফসল ফলাতে হয় আমাদের। দেশের বিজ্ঞানীরা আমনের স্বল্প জীবনকালের ধান উদ্ভাবন করেছেন। ফলে আমন ও বোরো মৌসুমের মাঝের সময়ে সরিষা আবাদ সম্ভব হচ্ছে। এটি অতিরিক্ত ফসল। খরা ও লবণসহিষ্ণু ধানের জীবনরহস্য উন্মোচন হয়েছে কয়েক দিন আগে। উপকূলে দুই মিলিয়ন হেক্টর লবণাক্ত জমি রয়েছে। সেখানে লবণসহিষ্ণু ধানের চাষ করে বছরে দুটি ফসল করা গেলে খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা টেকসই হবে।
নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছিল, সবার জন্য পুষ্টিমান সম্পন্ন খাদ্যের জোগান দেওয়ার লক্ষ্যে দ্রুত কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের সফল ধারা অব্যাহত রাখা হবে। এর বাস্তবায়ন কতটুকু? কৃষিমন্ত্রী : চলমান কভিডের কারণে দেড় বছর ধরে সারা বিশ্ব এক চরম ক্রান্তিকাল ও সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর প্রভাবে বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন, খাদ্য উৎপাদন চালু রাখতে হবে। অধিক ফসল উৎপাদন করতে হবে। ফলে কভিড পরিস্থিতি সত্ত্বেও দেশে কৃষির উৎপাদন ও সরবরাহের ধারা অব্যাহত রেখেছি আমরা। এতে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে।
কিউএনবি/আয়শা/৭ই জানুয়ারি, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/দুপুর ১২:৫৩