রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:১৫ পূর্বাহ্ন

১০০ বছরেও আরেকজন রোকেয়া আসেনি—এটাই আমাদের ব্যর্থতা

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ৮৯ Time View

ডেস্ক নিউজ : প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘১০০ বছর পরও আমরা আরেকজন বেগম রোকেয়া সৃষ্টি করতে পারি নাই- এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। তিনি যে সব দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন, যেসব স্বপ্ন দেখিয়ে গেছেন, এ স্বপ্নকে আমরা আমলে আনতে পারি নাই। কথা বলেছি, অগ্রসর হতে পারি নাই।’

মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বেগম রোকেয়া দিবস ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা বলেন আরও বলেন, ‘বেগম রোকেয়ার জন্ম উপলক্ষে যে আয়োজন, সেটা শুধু তাকে স্মরণ করার জন্য না, আমাদের ব্যর্থতাগুলো খুঁজে বের করার জন্য, কেন আমরা ব্যর্থ হলাম, কেন এই ১০০ বছরেও আরও বেগম রোকেয়া আসলো না আমাদের মাঝে, যে আমাদের পথ দেখাতো, মনে করিয়ে দিত কোন পথে আমাদের যাওয়া দরকার।’

‘১০০ বছর পরে কি হলো, কত অগ্রসর হলাম। ১৯৭৪ সালে একটা বিরাট দুর্ভিক্ষ হল। পথে পথে মানুষ মারা গেল। আমরা নির্বাক তাকিয়ে দেখলাম। কিছুই করলাম না। তাদের মধ্যে বহু নারী ও বৃদ্ধ। কারও হিসাবে ওই দুর্ভিক্ষে ১৫ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল।’১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ও গ্রামীণ ব্যাংকের শুরুর দিককার স্মৃতিচারণ করে নারীদের কঠিন সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা। 

তিনি বলেন, ‘দুর্ভিক্ষের আঘাত প্রথমে আসে মেয়েদের ওপরে, শিশুদের ওপরে।’ ‘আমরা দেখলাম, মেয়েরা জানে না তাদের নাম কী? সবাই চিনে, অমুকের মা, অমুকের স্ত্রী, অমুকের মেয়ে, নাতি-নাতনি। নাম জানে না। সমাজের একটা অংশ কীভাবে সমাজ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে- এটা তার নমুনা। আমরা নাম ঠিক করে দিলাম। নাম লিখতে শেখানোর জন্য হাতে কাঠি ধরিয়ে দিলাম।

দিনরাত পরিশ্রম করে, চোখের পানি ফেলে তারা নাম লেখা শিখল… এটা ১০০ বছর পরের অবস্থা। ১০০ বছর আগে রোকেয়া সেই আমলে যে স্বপ্ন দেখেছে, সেটা বিশ্বাস করা যায় না। আজকে অনেকে বলে, ‘হ্যাঁ, সুন্দর কথা বলেছে…’ সুন্দর কথা না, রোকেয়া বিপ্লবী কথা বলেছে। সমাজকে ঝাঁকুনি দিয়ে কথা বলেছে। কিন্তু সেই ঝাঁকুনি বহন করে নিয়ে যাওয়ার মত ব্যক্তি আর এল না। এটাই আমাদের দুর্ভাগ্য।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বেগম রোকেয়া কোনো কাজ সমাজকে বাদ দিয়ে করেননি। সবসময় সমাজকে নিয়েই করেছে। ১০০ বছর আগে রোকেয়া লিখেছে, নারী-কন্যাদের লেখাপড়া শেখাও যাতে সে অন্ন উপার্জন করতে পারে। সেখান থেকে আমরা শিখতে পারছি না কেন? আয়োজন করছি কিন্তু শিখতে পারছি না। আমাদের দৈনন্দিন পথে রোকেয়া সাথে থাকুক, তাহলেই অগ্রসর হতে পারব।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ি; ইকোনমিক্স অনার্সে অনেক ছেলে ছিল, মেয়ে ছিল মাত্র চারজন। কোনো কোনো বিভাগে কোনো মেয়েই ছিল না। এখন যেকোনো শিক্ষায়তনে যাও। মেয়ে শিক্ষার্থীরা উপচে পড়ছে। আমি খোঁজ নিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলে-মেয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা এখন অর্ধেক-অর্ধেক। আমি জিজ্ঞেস করলাম, মেয়েদের হল কয়টা? আমাকে বলল পাঁচটা। আর ছেলেদের হল ১৩টা। এটা কেমন বিচার হলো? মেয়েদের থাকার ব্যবস্থা তো আগে করতে হবে।’

নারীদের সামনে রেখেই নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘মেয়েরা গণ-অভ্যুত্থানে তাদের নেতৃত্ব দেখিয়েছে। আজকের নারীসমাজ গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী নারী সমাজ। এটা ভিন্ন নারী সমাজ। তাদের হাত ধরেই নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছে। এই নারীসমাজ শুধু নারীদের নয়, সবাইকে উজ্জীবিত করবে। সেজন্যই নারীদের উঁচু স্তরে ধরে রাখা আমাদের জন্য দরকার। নারীদের সামনে রেখেই আমাদের নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠুক।’

আজকের অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে ‘নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়’ করার ঘোষণা দিয়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস। 

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ।

প্রধান উপদেষ্টা এ বছর বেগম রোকেয়া পদকপ্রাপ্ত চারজনের হাতে পদক তুলে দেন। পদকপ্রাপ্তরা হলেন নারী শিক্ষা শ্রেণিতে (গবেষণা) রুবানা রাকিব, নারী অধিকার শ্রেণিতে (শ্রম অধিকার) কল্পনা আক্তার, মানবাধিকার শ্রেণিতে নাবিলা ইদ্রিস ও নারী জাগরণ শ্রেণিতে (ক্রীড়া) ঋতুপর্ণা চাকমা।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/০৯ ডিসেম্বর ২০২৫,/রাত ৮:০৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit