আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর পাকিস্তানের কারাবন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাতের দাবি জানিয়েছে তার রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই)। বৃহস্পতিবার দলটি অভিযোগ করে বলেছে, তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে পরিবার ও আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করতে না দেওয়ায় তার স্বাস্থ্য নিয়ে দলের নেতাকর্মীরা উদ্বিগ্ন।
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) মুখপাত্র জুলফিকার বুখারি বলেছেন, গত ৪ নভেম্বরের পর থেকে কেউ ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি এবং কেন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হচ্ছে, সেই বিষয়ে কোনও কারণও জানানো হয়নি। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও সাক্ষাৎ কিংবা চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছেন না তিনি।
‘‘তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। তাকে বেআইনিভাবে বিচ্ছিন্ন করে রাখা নিয়ে আমরা উদ্বেগের মাঝে রয়েছি।’’ইমরান খানের পরিবারের সদস্যদের অবিলম্বে তার সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলটির এই নেতা। ইমরানের পরিবার ও দলের সদস্যরা গত কয়েক দিন ধরে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারের বাইরে তার সঙ্গে সাক্ষাতের দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছেন। বৃহস্পতিবারও তারা একই দাবিতে আবারও কারাগারের সামনে বিক্ষোভের পরিকল্পনা করেছেন বলে জানিয়েছেন বুখারি।
কারা বিধি অনুযায়ী, ইমরান খান সপ্তাহে অন্তত একবার বাইরের মানুষের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। তবে কারা কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে এ অধিকার স্থগিত করতে পারে। দলের দাবি, এর আগেও টানা কয়েক সপ্তাহ ধরে তাকে কোনও সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয়নি। স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, পাকিস্তানের ৭৩ বছর বয়সী এই সাবেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারকে একটি উচ্চ নিরাপত্তাবিশিষ্ট কারাগারে স্থানান্তর করা হতে পারে; যাতে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ আরও কঠিন হয়ে পড়ে।
ইমরান খানের শারীরিক অবস্থা ও অবস্থান নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার পাকিস্তানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ইমরান খান কোথায়? হ্যাশট্যাগ (#WHEREISIMRANKHAN) ট্রেন্ডে পরিণত হয়।
তবে এ বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনও সাড়া দেয়নি বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
আদিয়ালা কারাগারের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী সুস্থ আছেন এবং তাকে অন্য কোনও স্থাপনায় স্থানান্তরের পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। গণমাধ্যমে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়ে এই তথ্য দিয়েছেন তিনি।
২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন ইমরান খান। ২০২২ সালে সেনা জেনারেলদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির পর পার্লামেন্টে ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি। ২৪ কোটি মানুষের এই ইসলামি রাষ্ট্র পাকিস্তানে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০২৩ সালের মে মাসে ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পর দেশজুড়ে সেনাবাহিনী-বিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এই বিক্ষোভের জেরে তার দলের ওপর ভয়াবহ দমন-পীড়ন শুরু হয়।
২০২৪ সালের নির্বাচনে পিটিআই সবচেয়ে বড় দল হিসেবে উঠে আসে। কারচুপির মাধ্যমে অন্যান্য দলকে ক্ষমতায় আনতে পিটিআইকে অধিক আসন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে দলটি। পরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহহবাজ শরিফের নেতৃত্বে জোট সরকার গঠন করা হয়। শরিফ ও তার সহযোগীরা ইমরান খানের দলের ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সূত্র: রয়টার্স।
কিউএনবি/আয়শা/২৭ নভেম্বর ২০২৫,/সন্ধ্যা ৬:২৮