শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:৪০ পূর্বাহ্ন

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সাব-রেজিষ্ট্রার অফিস ঘুষ, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির স্বর্গরাজ্য

মো. সাইদুল আনাম কুষ্টিয়া 
  • Update Time : শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ৮৭ Time View

মো. সাইদুল আনাম ,কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা সাব- রেজিস্ট্রার অফিস ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও দালাল সিন্ডিকেট চক্রের দৌরাত্বে অতীষ্ট হয়ে পড়েছেন সর্বসাধারন। সকাল ১০টা থেকে অফিসের কার্যক্রম চলার কথা থাকলেও দৌলতপুর সাব- রেজিস্ট্রার সরকারী এ নিয়ম না মেনে নিজ নিয়মে অফিস করেন বিকেল ৪টার পর থেকে এবং তা চলে প্রায় মধ্যে রাত পর্যন্ত। দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হওয়া সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ দপ্তরের সাব-রেজিস্ট্রার ও দালাল চক্রের জিম্মি দশা থেকে মুক্তি পেতে সেবা গ্রহীতা ও ভূক্তভোগীরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্দ্ধতন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন । ভূক্তভোগীদের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, দৌলতপুর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার বোরহান উদ্দিন সররকার বেঁধে দেয়া সময়ে তিনি অফিসে আসেন না। বিকেল ৪টার পর অফিসে বসে দু’একটি দলিল রেজিস্ট্রি করে নিজ কক্ষে বিশ্রামে যান। বিকেল ৫টার পর লেট ফি অতিরিক্ত ২ হাজার টাকা নিয়ে দলিল লেখক সিন্ডিকেটের সহায়তায় রেজিস্ট্রি কার্যক্রম করে থাকেন। এর ফলে সেবা গ্রহীতাদের দলিল প্রতি অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয়। শুধু তাই নয়, দলিল লেখকদের সহযোগিতায় সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে অতিরিক্ত লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে থাকেন তিনি।

সরকারি নীতিমালায় হেবা দলিলে ৭৮০ টাকা এবং কবলা দলিলে ৩৮০ টাকা ফিস সরকার নির্ধারিত থাকলেও, দৌলতপুর সাব- রেজিস্ট্রার অফিসে নির্ধারিত ফিস বাদেও হেবা দলিলের জন্য ৩ হাজার ২২০ টাকা এবং কবলা দলিলের জন্য ৩ হাজার ১২০ টাকা আদায় করা হয়ে থাকে। এছাড়াও সরকারি ভাবে মৌজা মূল্যের বেশি মূল্যে শতকরা ২ টাকা, জমির শ্রেণী না থাকলে শতকরা ২ টাকা, বন্টন নামা দলিলে শতকরা ১ টাকা সহ শ্রেণীর বাড়ী হলে ১০ হাজার টাকা, এক দলিলে দুটি মৌজা হলে ২০ হাজার টাকা, ওয়ারিশ সূত্রের দলিলে ২০ হাজার টাকা, জাতীয় পরিচয় পত্রে নামের সমস্যা থাকলে ৭ হাজার টাকা নির্ধারণ করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে থাকেন সাব-রেজিস্ট্রার বোরহান উদ্দিন সরকার। এছড়াও সাব- রেজিস্ট্রারের ব্যক্তিগত কক্ষে (খাস কামরা) দলিল করলে দলিলপ্রতি সর্বনিম্ন অতিরিক্ত ৫ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয় তাকে। যা মোট দলিলের শতকরা ৮০ ভাগ দলিলই দলিল লেখকদের জিম্মি করে রেজিস্ট্রি করানো হয়ে থাকে খাস কামরায়। কমিশন দলিল রেজিস্ট্রি করতে গেলেও তাকে অতিরিক্ত লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুস দিতে হয়। এছাড়াও পে-অর্ডারের নামে চলে আরেক দফা হরিলুট। স্থানীয় দালালরা দলিল লেখক ও সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে পে-অর্ডারের নামে চাঁদাবাজি করে থাকেন ইচ্ছেমত। কোন সেবা গ্রহীতা বা দলিল লেখক দালাল চক্রের বাইরে পে-অর্ডার করার ক্ষমতা রাখেন না বা সুযোগও নেই। দালাল চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে অতিরিক্ত চাঁদা দিয়ে পে-অর্ডারের কাজটি করে থাকেন তারা। ইতিপূর্বে দৌলতপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও বেপরোয়া চাঁদাবাজির ঘটনায় দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সাবেক জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন সুফল মিলেনি ভূক্তভোগীদের। অভিযোগ হলে উল্টো চাঁদাবাজির খড়গ বাড়ে এমন অভিযোগও রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন, হোগলবাড়ীয়া মৌজায় আমার একটি ৫ কোটি টাকা মূল্যের দলিলে সাব- রেজিস্ট্রার ১৫ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত নিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করেছে। অপর এক ভুক্তভোগী বলেন, আমার ৩৮ হাজার টাকা মূল্যের একটি দলিল রেজিস্ট্রি করতে ২৫ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। আর এমন অভিযোগ নিত্যদিনের এবং সব সেবা গ্রহীতারই । দৌলতপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দুর্নীতি ও বেপরোয়া চাঁদাবাজির বিষয়ে দৌলতপুর উপজেল বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা গত ১১ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ার নবাগত জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় সভায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে চাঁদাবাজি বন্ধে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব শহিদ সরকার মঙ্গল, সাবেক যুগ্ন আহ্বায়ক আবিদ হাসান মন্টি সরকার ও সাবেক ছাত্রদল নেতা মুকুল শাহ-সহ একাধিক ভুক্তভোগী বক্তি দৌলতপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দুর্নীতির কথা তুলে ধরে তা বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। ঘুষ, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে দৌলতপুর সাব-রেজিস্ট্রার বোরহান উদ্দিন সরকার তা অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ মিথ্য। আমি কোনো ধরনের দুর্নীতি বা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নয়। বরং যারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে, তারাই প্রকৃতপক্ষে এসব দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।

কারা জড়িত জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, দলিল লেখক ও স্থানীয় কিছু দালালের যোগসাজশে এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়ে থাকে, আমি কোন দুর্নীতি করি না। সাব-রেজিস্ট্রারের দুর্নীতির বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দুর্নীতির অভিযোগ এত বেশি শুনতে হচ্ছে যে, আমি সত্যিই অতীষ্ঠ হয়ে পড়েছি। আগামী দিনে আমি নিজেই সরাসরি উপস্থিত থেকে সব ধরনের দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেব। এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার নবাগত জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন বলেন, আমি দৌলতপুরে মতবিনিময় সভায় গিয়ে জানতে পেরেছি, দৌলতপুর সাব- রেজিস্ট্রার অফিসে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি চলছে,সাব রেজিস্টারের দুর্নীতি সীমার বাইরে চলে গেছে। বিষয়টি নিয়ে আমি জেলা রেজিস্টার সাহেবের সাথে কথা বলেছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তবে কথাই নয়, কাজে প্রমান দিলে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির বেড়াজাল থেকে মুক্তি পাবে অসহায় দৌলতপুরবাসী। মিলবে প্রকৃত সেবা। এমনটিই মনে করেছেন এলাকার সচেতন মহল।

কিউএনবি/অনিমা/২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, /বিকাল ৪:০০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

September 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit