আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বেইজিংয়ের তিয়ানআনমেন স্কোয়ারে শুরু হচ্ছে চীনের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সামরিক কুচকাওয়াজ। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে এই মহড়া শুধু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আত্মসমর্পণের ৮০ বছর পূর্তি স্মরণই নয় বরং চীনের সামরিক শক্তি ও বৈশ্বিক প্রভাবের প্রদর্শনীতে রূপ নিয়েছে।
তিয়ানআনমেনের গেটে মাও সেতুংয়ের প্রতিকৃতির দুই পাশে আটটি বিশাল লাল পতাকা উড়ছে। নিচে বসেছেন ২৬ দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা। তাদের মধ্যে রয়েছেন রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন এবং উত্তর কোরিয়ার কিম জং উন—যাদের উপস্থিতিকে কূটনৈতিক বিজয় হিসেবে দেখছে বেইজিং।
চীনের গ্রেট হল অফ দ্য পিপল ভবনের সামনে ৫০ হাজার অতিথির জন্য বিশেষ আসন ব্যবস্থা ও বিশাল ফুলের টেপ্পো বানানো হয়েছে। এদিকে, রাজধানী জুড়ে ২ লাখেরও বেশি পতাকা ও আলোকসজ্জা সাজানো হয়েছে।
সম্প্রতি শেষ হওয়া সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে ২০টিরও বেশি দেশের নেতা অংশ নেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও সাত বছর পর চীন সফর করেছেন। এর পরপরই সামরিক কুচকাওয়াজে কিম জং উনের অংশগ্রহণ নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
এই মহড়ায় নতুন হাইপারসনিক অস্ত্র ও পানির নিচে চালিত ড্রোন প্রদর্শনের আভাস দিয়েছে চীন। ইরান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমারসহ মধ্য এশিয়ার নেতারা উপস্থিত থাকলেও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে কেবল সার্বিয়া ও স্লোভাকিয়ার প্রতিনিধি আছেন।
রাজধানী বেইজিং এখন কার্যত সামরিক নিয়ন্ত্রণে। বিমানবন্দর থেকে সড়কপথে প্রবেশে বাড়ানো হয়েছে তল্লাশি। শহরের বিভিন্ন সেতু ও ওভারপাসে ২৪ ঘণ্টা পাহারা বসানো হয়েছে। সাংবাদিকদের ওপরও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
কুচকাওয়াজের রিহার্সেল চলাকালীন নাগরিকদের বারান্দায় না বেরোনোর নির্দেশ দেওয়া হয়। স্কুল, অফিস, হোটেল দুই দিনের জন্য বন্ধ। মেট্রো ও সড়ক বন্ধ থাকায় পরিবহন ব্যবস্থা কার্যত পঙ্গু। এমনকি শহরের শেয়ারড সাইকেলগুলোও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
চীনের অর্থনীতি মন্দার দিকে, বাড়ছে বেকারত্ব ও আবাসন খাতের সংকট। তরুণদের মধ্যে অসন্তোষও বাড়ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই কুচকাওয়াজ শুধু বৈশ্বিক শক্তি প্রদর্শন নয়, বরং জাতীয়তাবাদী আবেগ উসকে দিয়ে জনগণকে একত্রিত রাখার প্রচেষ্টাও।
আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণের গুজবও রয়েছে, মেঘ বৃষ্টি নামিয়ে আকাশ পরিষ্কার রাখার প্রচেষ্টা। তবে পূর্বাভাস অনুযায়ী এবারের কুচকাওয়াজেও আকাশ থাকবে নির্মল।
সব মিলিয়ে, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের জন্য এটি এক ‘বিশ্বমঞ্চের মুহূর্ত’, যেখানে চীন জানিয়ে দিচ্ছে—মার্কিন প্রভাবশালী ব্যবস্থার বিকল্প শক্তি হতে তারা প্রস্তুত।
কিউএনবি/অনিমা/০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫/রাত ৯:১০