শরীয়তপুর প্রতিনিধি : ‘স্কুল থেকে আমাকে ফোন দিয়ে বলল, দুর্ঘটনা হয়েছে, হাসপাতালে আসেন। গিয়ে দেখি আমার বাবারে চেনা যায় না, চেহারা পুড়ে গেছে। বারবার বলত ‘আম্মু একটু পানি খাওয়াও’ আমি খাওয়াতে পারলাম না। ও বাঁচতে চেয়েছিল, আমি বাঁচাতে পারলাম না। এমনভাবেই বলছিলেন ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ ছামীমের (১৩) মা নিহত ছামীমের মা জুলেখা বেগম।নিহত ছামীম শরীয়তপুরের সখিপুর উপজেলার ডিএম খালি মাঝিকান্দি এলাকার মৃত কালিমউদ্দিন মাঝির ছোট ছেলে এবং মাইলস্টোন স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। গতকাল সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে নেওয়া হয়। রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।পরদিন মঙ্গলবার সকাল ৯ টায় ডিএম খালি চরভয়রা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বাবার পাশে ছামীমকে দাফন করা হয়।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ছামীমের মা জুলেখা বেগম, বড় ভাই জাহিদ হাসান ও বোন ফারজানা কণিকা বর্তমানে ঢাকার দিয়াবাড়ি এলাকায় নিজস্ব ফ্ল্যাটে থাকেন। তার বাবা কালিমউদ্দিন মাঝি সৌদি আরবে ব্যবসা করতেন এবং গত বছর ডিসেম্বর মাসে সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। তিন বছর আগে মা ও ছামীম সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে আসেন। প্রথমে একটি নূরানী মাদরাসায় পড়ালেখা করলেও চলতি বছর জানুয়ারিতে সে মাইলস্টোন স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। প্রতিদিনের মতো সোমবার সকালে স্কুলে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয় ছামীম। দুপুরে ছুটি শেষে শিক্ষার্থীরা যখন বের হচ্ছিল, তখনই বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে স্কুল ভবনে বিধ্বস্ত হয়। আহত হন বহু শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক। গুরুতর আহতদের মধ্যে ছামীমও ছিল। রাতে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
নিহতের মামা সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন সকাল ৭টায় ছামীমের স্কুলে ক্লাস শুরু হয়। ছুটি হবার ঠিক আগমুহূর্তেই বিমান বিধ্বস্ত হয়। ছামীম ছিল পরিবারের সবচেয়ে আদরের, শান্ত ও মেধাবী ছেলে। তার বাবার কবরের পাশেই ওকে দাফন করতে হয়েছে। আমাদের পরিবারে এক বছরের ব্যবধানে দুটি শোক। আমরা জানতে চাই, কেন এতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এমন ঝুঁকিপূর্ণ প্রশিক্ষণ চালানো হয়? ৫৩ বছরের পুরনো বিমানে কীভাবে এখনো প্রশিক্ষণ হয়?বিষয়টি জানতে চাইলে ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোজাহেরুল হক বলেন, আমরা পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছি। এছাড়াও রাষ্ট্রীয় শোক চলছে। এই দুর্ঘটনায় শুধু একটি শিশু নয়, একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ হারিয়ে গেছে। পুরো এলাকাবাসী বাকরুদ্ধ। আমরা ছামীমের পরিবারের পাশে আছি এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি।
উল্লেখ্য, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত ২৭ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। নিহতদের বেশিরভাগই ওই স্কুলের শিক্ষার্থী। শিশু ছামীমের মৃত্যুতে তার প্রামে এবং পুরো শরীয়তপুর জেলাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
কিউএনবি/অনিমা/২২ জুলাই ২০২৫,/সন্ধ্যা ৭:১২