এম এ রহিম, চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছার ঐতিহাসিক যুদ্ধক্ষেত্রের প্রান্তেই অবস্থিত গরীবপুর নিউ মার্কেট মোড় থেকে গরীবপুর পূর্বপাড়া গোপাল মন্ডলের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তায় চলাচলে ভোগান্তীর শিকার হচ্ছেন জনসাধারণ। শনিবার (১৯ জুলাই) সকালে সরেজমিনে গিয়ে এ জনদূর্ভোগের চিত্র চোখে পড়ে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে খ্যাত উপজেলার গরীবপুর গ্রামের স্মৃতি আজ মুছে যেতে বসেছে। ১৯৭১ সালের ২১ ও ২২ নভেম্বর গরীবপুর-জগন্নাথপুর অঞ্চলে সংঘটিত হয়েছিল মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সঙ্গে পাক হানাদার বাহিনীর এক তীব্র সম্মুখ হাতা-হাতিযুদ্ধ। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শামসুল আরিফিন শান্তি জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মারক হিসেবে বহু বছর আগে রাস্তারপাশে একটি পাথরের ফলক স্থাপন করা হয়। যেখানে খোদাই করে লেখা আছে “বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: গরীবপুরের যুদ্ধক্ষেত্র ২১শে নভেম্বর ১৯৭১”।
কিন্তু সেই স্মৃতিচিহ্ন আজ ভেঙে যেতে বসেছে। পাশাপাশি সেই গৌরবময় রাস্তাটি এখন সামান্য বৃষ্টিতেই পানি-কাদায় ডুবে যায়, সৃষ্টি হয় গর্ত ও জলাবদ্ধতা। এতে করে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন শিশু-শিক্ষার্থী, হাসপাতালে সেবাপ্রার্থী, মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়া মুসল্লিগণ ও পথচারীরা। উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইউনুচ আলী দফাদার বলেন, “এই রাস্তার পাশেই তো যুদ্ধ হয়েছিল। এই পথ ধরেই যুদ্ধের সময় লোকজন পালিয়েছিল, আবার মুক্তিবাহিনী প্রবেশ করেছিল। এখন সেই রাস্তা দিয়ে ছোট ছোট বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে না, ভ্যানচালক রোজগার বন্ধ করে বসে থাকে।”
এলাকাবাসী জানান, “যে রাস্তাটার দুই পাশে যুদ্ধের স্মৃতি, সেটাই এখন পড়ে আছে অবহেলায়। দু-এক স্থানে সামান্য সলিং করা হয়েছিল, কিন্তু পুকুরের ধস ও পানির চাপে তা নষ্ট হয়ে গেছে।”এ রাস্তার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন এলাকাবাসী তাদের দাবী “আমরা চাই এই রাস্তাটি পুনর্নির্মাণ করে পাকা করা হোক। ধস ঠেকাতে প্যালাসাইড নির্মাণ ও কালভার্ট স্থাপনের জোর দাবী জানান তারা। তারা বলেন প্রতিদিন এই রাস্তায় চলাচল করেনএলাকার শিক্ষার্থী, রোগী, গর্ভবতি মা, শিশু ও জনসাধারণ, কিন্তু রাস্তাটি এখন কার্যত অচল।
এলাকার বয়বৃদ্ধ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর ঈদের দিন দুপুর ২টায় পাকবাহিনী গরীবপুর-জগন্নাথপুর মাঠে হাতাহাতি যুদ্ধ হয় যা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল। যে সড়ক দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে যাওয়া হয়, সেটি ভেঙ্গে পড়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। চৌগাছা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক রাশিদুল ইসলাম রিতম বলেন,“যুদ্ধক্ষেত্রের পাশের রাস্তাটি শুধু চলাচলের মাধ্যম নয়, এটি ইতিহাসের পথে হাঁটার এক জীবন্ত প্রতীক। এই রাস্তার এমন করুণ অবস্থা আমাদের নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ স¤পর্কে ভুল বার্তা দেয়। আমরা চাই, রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার করা হোক। চৌগাছা উপজেলা প্রকৌশলী রিয়াসাত ইমতিয়াজ বলেন, ‘গরীবপুর সড়কটি ভিপিপি প্রকল্পে প্রস্তাব আকারে উর্ধ্বতন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে এবং তালিকাভুক্ত হয়েছে।’ অনুমোদন পেলেই দ্রুত কাজ শুরু হবে।
কিউএনবি/আয়শা//১৯ জুলাই ২০২৫,/সন্ধ্যা ৭:২২