আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্রাজিল থেকে আমদানি হওয়া সকল পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার সঙ্গে প্রকাশ্য বাকযুদ্ধের কয়েক দিনের মধ্যেই এই পদক্ষেপ নিলেন ট্রাম্প।
চিঠিতে বলা হয়, ‘মুক্ত নির্বাচন এবং আমেরিকানদের মৌলিক মত প্রকাশের অধিকারের ওপর ব্রাজিলের নীরব আক্রমণের কারণে আংশিকভাবে এই শুল্ক আরোপ করা হলো।’ ট্রাম্পের ঘোষণার পর ব্রাজিল পাল্টা শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দেয়। ‘যেকোনো একতরফা শুল্ক বৃদ্ধির বিষয়টি ব্রাজিলের অর্থনৈতিক পারস্পরিকতা আইনের আলোকে বিবেচনা করা হবে,’ লুলা এক্স-এ লিখেছেন।
শুল্ক ঘোষণার পর ব্রাজিলের মুদ্রা রিয়াল ডলারের বিপরীতে ২ শতাংশের বেশি কমে যায়। একইসঙ্গে এমব্রায়ার, পেট্রোব্রাসের মতো ব্রাজিলিয়ান কোম্পানির শেয়ারও মার্কিন বাজারে ধাক্কা খেয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্রাজিলের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। এই শুল্ক পূর্বের ১০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে বলে ট্রাম্প জানিয়েছেন।
এর আগে লুলা ট্রাম্পের সমালোচনা করেছিলেন যখন ট্রাম্প রিও ডি জেনেইরোতে ব্রিকস সম্মেলনের সময় ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর ওপর অতিরিক্ত ১০% শুল্কের হুমকি দিয়েছিলেন। লুলা বলেছিলেন, ‘বিশ্ব বদলে গেছে, আমরা কোনো সম্রাট চাই না। আমরা সার্বভৌম দেশ।’
বলসোনারো ‘উইচ হান্ট’ বিতর্ক
বুধবার যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রাজিলের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যায় যখন ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলসোনারোর পক্ষে মার্কিন বিবৃতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে তলব করে। প্রায় একই সময়ে ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘ব্রাজিল আমাদের জন্য ভালো কিছু করেনি,’ এবং শুল্ক ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও অতীত ইতিহাসের ভিত্তিতে’ নির্ধারিত হবে।
ট্রাম্প বলসোনারোকে ‘উইচ হান্ট’-এর শিকার বলেও মন্তব্য করেন। এই ধরনের মন্তব্য তিনি ইসরাইলের নেতানিয়াহু এবং ফ্রান্সের মারিন লে পেনের ক্ষেত্রেও করেছেন। ব্রাজিলে মার্কিন দূতাবাসও এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘জাইর বলসোনারো, তার পরিবার এবং সমর্থকদের রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করা ব্রাজিলের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের প্রতি অসম্মানজনক।’
ট্রাম্প তার চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমস গ্রিয়ারকে ব্রাজিলের ডিজিটাল বাণিজ্যে ‘অন্যায্য চর্চা’র তদন্তের নির্দেশ দেন এবং ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টের ‘সেন্সরশিপ’ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন।
খাদ্য রপ্তানির ওপর প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্রে খাদ্যদ্রব্যের দামে এই শুল্কের প্রভাব পড়তে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে খাওয়া কফির এক তৃতীয়াংশ আসে ব্রাজিল থেকে। মার্কিন বাজারে বার্ষিক প্রায় ৮০ লাখ ব্যাগ কফি রপ্তানি করে ব্রাজিল। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া কমলার রসের অর্ধেকের বেশি আসে ব্রাজিল থেকে, যেখানে এই খাতে বিশ্ব বাণিজ্যের ৮০ শতাংশই ব্রাজিলের দখলে।
ব্রাজিলের সাইট্রাসবিআর-এর নির্বাহী পরিচালক ইবিয়াপাবা নেত্টো বলেন, ‘এই পদক্ষেপ কেবল ব্রাজিল নয়, যুক্তরাষ্ট্রের কমলার রস শিল্পকে প্রভাবিত করবে, যেখানে হাজার হাজার মানুষ কাজ করে এবং যাদের প্রধান সরবরাহকারী ব্রাজিল।’
কিউএনবি/আয়শা//১০ জুলাই ২০২৫,/বিকাল ৩:১২