বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ০৯:৪৬ পূর্বাহ্ন

মহররম ও আশুরার তাৎপর্য-মর্যাদা

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ২ জুলাই, ২০২৫
  • ১১ Time View

ডেস্ক নিউজ : মহররম। হিজরি বর্ষের প্রথম মাস। পৃথিবীর শুরু থেকেই মহান আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা ১২। এই ১২ মাসের মধ্যে কোরআন মাজিদের ভাষায় মহররম মাসটি সম্মানিত চার মাসের অন্যতম। ইরশাদ হয়েছে, ‘প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কাছে আল্লাহর কিতাবে (অর্থাৎ লওহে মাহফুজে) মাসের সংখ্যা ১২টি, সেই দিন থেকে, যেদিন আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন। এর মধ্যে চারটি মাস মর্যাদাপূর্ণ। এটাই সহজসরল দীনের দাবি (সুরা তওবা-৩৬)।

কোরআনের ভাষায় সম্মানিত চারটি মাস হচ্ছে-জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু বাকরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত : নবী করিম (সা.) বলেন, আল্লাহ যেদিন আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন, সেদিন থেকে সময় যেভাবে আবর্তিত হচ্ছিল আজও তা সেভাবে আবর্তিত হচ্ছে। ১২ মাসে এক বছর। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। জুল-কা’দাহ, জুল-হিজ্জাহ ও মহররম। তিনটি মাস পরস্পর রয়েছে। আর একটি মাস হলো রজব-ই-মুজারা যা জুমাদা ও শাবান মাসের মাঝে অবস্থিত (সহিহ বুখারি-৩১৯৭)।

মহররম আল্লাহর মাস। রমজানের পরে মহররমের রোজা আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, রমজানের পরে সর্বোত্তম রোজা হচ্ছে আল্লাহর মাস মহররমের রোজা। আর ফরজ সালাতের পরে শ্রেষ্ঠ সালাত হচ্ছে রাতের সালাত বা তাহাজ্জুদের সালাত (সহিহ মুসলিম-২৭৪৫)। মহররমের অতিগুরুত্বপূর্ণ একটি আমল হচ্ছে ১০ তারিখের রোজা। ইসলামের পরিভাষায় যাকে ‘আশুরার রোজা’ বলা হয়। রসুল (সা.) গুরুত্বের সঙ্গে আশুরার দিনে রোজা রাখতেন। এই আশুরার দিনে আল্লাহ বনি ইসরায়েলকে ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি দেন। তাই বনি ইসরায়েলের নবী হজরত মুসা কলিমুল্লাহ (আ.) আশুরার দিনে আল্লাহর শোকর আদায় করে রোজা রাখতেন। মুসা (আ.)-এর অনুসরণে রসুল (সা.) নিজেও রোজা রাখতেন এবং তাঁর উম্মতকেও নির্দেশনা দিতেন।

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসুল (সা.) মদিনায় আগমন করে দেখতে পেলেন, ইহুদিরা ‘আশুরার দিনে সওম (রোজা) পালন করে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন : কী ব্যাপার? (তোমরা এই দিনে সওম পালন কর কেন?) তারা বলল, এ অতি উত্তম দিন, এই দিনে আল্লাহ বনি ইসরায়েলকে তাদের শত্রুর কবল থেকে নাজাত দান করেন। ফলে এই দিনে হজরত মুসা (আ.) সওম পালন করেন। আল্লাহর রসুল (সা.) বললেন : আমি তোমাদের অপেক্ষা মুসার অধিক নিকটবর্তী, এরপর তিনি এই দিনে সওম পালন করেন এবং সওম পালনের নির্দেশ দেন (সহিহ বুখারি-২০০৪)।

আশুরার রোজা রসুল (সা.)-এর প্রিয় আমলগুলোর অন্যতম। তিনি এই রোজাটি গুরুত্ব দিয়ে রাখতেন এবং পরিত্যাগ করতেন না। হাফসা (রা.) থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, চারটি আমল নবী করিম (সা.) কখনো পরিত্যাগ করতেন না। আশুরার দিনের রোজা, জিলহজ মাসের ৯ দিনের রোজা, প্রত্যেক মাসে তিন দিনের রোজা এবং ফজরের দুই রাকাত সুন্নাত (সুনানে নাসায়ি)। আশুরার রোজা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি আমল। গুনাহ মোচনে এই আমলটির রয়েছে বিশেষ ভূমিকা। হজরত আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.)-কে আশুরার রোজার ফজিলত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আল্লাহর দরবারে আমি আশাবাদী, আশুরার রোজার অসিলায় তিনি পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন (সহিহ মুসলিম-১১৬২)।

আশুরার রোজা যথার্থ ফল বয়ে আনতে একটি ব্যতিক্রমী পন্থা অবলম্বন করতে হয়। আর তা হচ্ছে, আশুরার রোজার সঙ্গে আগে কিংবা পরে আরেক দিন মিলিয়ে রাখা। অর্থাৎ ৯ এবং ১০ মহররম বা ১০ এবং ১১ মহররম-এই দুই দিন একসঙ্গে রোজা। এই ব্যতিক্রমী পন্থা কেন অবলম্বন করতে হয়? কারণ রসুল (সা.) এমন নির্দেশনাই দিয়েছেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, তোমরা আশুরার রোজা রাখার ক্ষেত্রে ইহুদিদের সঙ্গে বৈপরীত্য অবলম্বন কর। এক দিন আগে কিংবা পরে মিলিয়ে রোজাটা রাখ (সহিহ ইবনে খুজায়মা-২০৯৫)।

তবে ৯-১০ মহররম এই দুই দিন রোজা রাখাটাই নবীজি (সা.)-এর পছন্দ ছিল। ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) ইরশাদ করেন, যদি আমি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে ৯ মহররম মিলিয়ে রোজা রাখব। (কিন্তু পরবর্তী বছর আশুরা আসার আগেই তাঁর ইন্তেকাল হয়ে যায় (সহিহ মুসলিম ২৫৫৭)। আসুন, আল্লাহর মাস মহররমের তাৎপর্য অনুধাবন করি। আশুরার রোজা রেখে আল্লাহর ক্ষমা ও দয়া লাভের অনিন্দ্যসুন্দর সুরভিত জীবন লাভে এগিয়ে যাই।

লেখক : খতিব, আউচপাড়া জামে মসজিদ টঙ্গী, গাজীপুর

কিউএনবি/অনিমা/০২ জুলাই ২০২৫,/সকাল ৭:৪৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit