রবিবার, ২২ জুন ২০২৫, ০৩:০২ অপরাহ্ন

ব্যাংক রেজ্যুলেশন অ্যাক্ট কার্যকরের পরিকল্পনা সরকারের

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০২৫
  • ৮৯ Time View

ডেস্ক নিউজ : বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এ লক্ষ্যে চলতি বছরের শেষ নাগাদ ব্যাংক রেজ্যুলেশন অ্যাক্ট কার্যকর করার পরিকল্পনা করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বাংলাদেশ বর্তমানে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির আওতায় রয়েছে। এ কর্মসূচির শর্তানুযায়ী, ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্বাস্থ্য সুরক্ষিত করতে এবং দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল করতে খেলাপি ঋণ উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে হবে।

গত বছর সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক এনপিএল শ্রেণিবদ্ধ করার সময়সীমা নয় মাস থেকে কমিয়ে ছয় মাস করেছিল, যার ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যায়। গত ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৪৫ ট্রিলিয়ন টাকা (২৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৮৪০ ডলার), যা সেপ্টেম্বরের ২ দশমিক ৮৪ ট্রিলিয়ন টাকার তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি। এটি বাংলাদেশের মোট বকেয়া ঋণ ১৭ দশমিক ১১ ট্রিলিয়ন টাকার প্রায় ২০ শতাংশ।

ঢাকার ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে. মুজেরি দেশের ব্যাংকিং খাতের অবস্থাকে ‘ভয়াবহ’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাত এখন খাদের কিনারায়। সরকারের উচিত ছিল অনেক আগেই জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া, যেমন দুর্বল কিছু ব্যাংক বন্ধ করে দেওয়া, যাদের টিকে থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ. মনসুর সম্প্রতি বলেছেন, এপ্রিলে মানদণ্ড কঠোর হওয়ার পর আগামী কোয়ার্টারে এনপিএল দ্রুত বাড়তে দেখা যাবে। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, অতীতে বড় ও প্রভাবশালী ঋণগ্রহীতাদের সাহায্য করতে বিভিন্নভাবে খেলাপি ঋণ গোপন করা হতো। এখন সেই ‘খারাপ প্রথা’ বন্ধ হওয়ায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, নতুন মানদণ্ড চালু হলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ মোট বকেয়া ঋণের প্রায় ৩০ শতাংশ হতে পারে। গত জুন পর্যন্ত দেশের ব্যাংকিং খাতে সমস্যাগ্রস্ত সম্পদের মোট মূল্য ছিল ৬ দশমিক ৭৫ ট্রিলিয়ন টাকা।

গত বছর, কিছু ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার অবনতি ঘটায় সেগুলোকে একীভূত করার পদক্ষেপ নিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বেশ কয়েকটি সংগ্রামরত ব্যাংক শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত হওয়ার চুক্তি করেছিল। তবে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অপসারণের পর এ উদ্যোগটি মুখ থুবড়ে পড়ে। কর্তৃপক্ষ বলছে, আগের সরকারের রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীরা কিছু ব্যাংক লুটপাট করেছেন। বাংলাদেশের নতুন নেতৃত্ব এখন ব্যাংকগুলোর জন্য সহায়তা দিচ্ছে, তবে কর্তৃপক্ষ মনে করে যে সংগ্রামরত ব্যাংকগুলোর টিকে থাকার জন্য একীভূত হওয়া প্রয়োজন।

একীভূতকরণ প্রক্রিয়া সহজ করতে ঢাকা ব্যাংক রেজ্যুলেশন অ্যাক্ট প্রস্তুত করছে, যা আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাংক রেজ্যুলিউশন অধ্যাদেশ নামে পরিচিত। এই আইনে একীভূতকরণ, পুনঃপূজায়ন, ব্রিজ ব্যাংক, অস্থায়ী মালিকানা এবং ব্যাংক বন্ধ করার মতো বিধান থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর মনসুর বলেন, আমরা দুর্বল ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণের চেষ্টা করব, তাদের জন্য নতুন বিনিয়োগকারী আনব এবং তাদের পুনর্গঠন করব। 

দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশে এখনও ব্যাংক বন্ধ করার জন্য কোনো আইন নেই। মনসুর বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছয়টি ব্যাংকের সম্পদ গুণগত মান পর্যালোচনা করছে এবং শীঘ্রই অন্যান্য ব্যাংকের জন্য একই প্রক্রিয়া শুরু করবে। এরপর আমরা ব্যাংক রেজ্যুলেশন অ্যাক্ট অনুযায়ী ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠনের পদক্ষেপ নেব। এই আইনের উদ্দেশ্য হলো আর্থিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, পেমেন্ট, ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্ট সিস্টেমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা, ব্যাংক জমা সুরক্ষিত করা, সরকারি আর্থিক সহায়তা কমিয়ে সরকারি তহবিল সংরক্ষণ করা, সম্পদের মূল্য ধ্বংস এড়ানো ও ঋণদাতাদের ক্ষতি কমানো। এ ছাড়া, আর্থিক ব্যবস্থায় জনগণের আস্থা বজায় রাখাও এ আইনের লক্ষ্য।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, অতীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তিন মাস বা তার বেশি সময় ধরে বকেয়া থাকা ঋণকে খেলাপি হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করত। তবে, ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করতে এবং কোভিড-১৯ ও অন্যান্য অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব কমাতে এই নিয়ম শিথিল করা হয়েছিল। তিনি বলেন, এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক আন্তর্জাতিক সেরা অনুশীলনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আবারও এই নিয়ম কঠোর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১৩ মার্চ ২০২৫,/বিকাল ৫:৪৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

June 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit