শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ০৬:৪৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
ইন্দোনেশিয়ার পর্যটন দ্বীপ বালিতে ফেরি ডুবে ৫ জনের মৃত্যু, বহু নিখোঁজ বড় অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে দেশ, এখনই নিয়ন্ত্রণ জরুরি স্ত্রীর কিডনিতে জীবন ফিরে পেয়ে পরকীয়ায় জড়ালেন স্বামী! চকবাজারে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আহত শিক্ষার্থীর মৃত্যু দৌলতপুরে তুচ্ছ ঘটনায় প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত : আটক-১ মনিরামপুরে ফ্যাসিষ্ট মাদকবিক্রেতা সন্ত্রাসীরা কোন প্রকার ছাড় পাবেনা মনিরামপুরে শিক্ষককের ১৫ দিনব্যাপী আইসিটি প্রশিক্ষনের সমাপনী অনুষ্ঠান পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় চৌগাছা পৌরসভায় বৃক্ষ রোপন কর্মসূচি জুমার নামাজ পড়তে না পারলে করণীয় ‘গরুর মাংস খান রণবীর’, ভারতজুড়ে বির্তকে-সমালোচনার ঝড়

ইসলামে যেভাবে রোজার প্রবর্তন হয়

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০২৫
  • ৩৪ Time View

ডেস্ক নিউজ : আরবি সাওম ও সিয়াম শব্দের অনুবাদ হিসেবে রোজা ব্যবহার হয়ে থাকে। রোজা ফারসি থেকে বাংলায় এসেছে। পবিত্র কোরআনে সাওম শব্দটি এক জায়গায় (সুরা : মারইয়াম, আয়াত : ২৬) আর সিয়াম শব্দটি ৯ জায়গায়

[সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৩, ১৮৭ (দুইবার), ১৯৬ (দুইবার); সুরা : নিসা, আয়াত : ৯২; সুরা : মায়িদা,

আয়াত : ৮৯, ৯৫; সুরা : মুজাদালা, আয়াত : ৪] ব্যবহার হয়েছে। বিভিন্ন হাদিসে শব্দ দুটির প্রচুর ব্যবহার রয়েছে। সাওম ও সিয়ামের মূল অক্ষর একই।
ইসলামী পরিভাষায় সাওম বা সিয়াম হলো, সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পানাহার ও যৌনাচার থেকে বিরত থাকা। যুগে যুগে রোজার বিধান ছিল এবং ইসলামেও এ বিধান প্রবর্তন হয়েছে।    

ইসলাম-পূর্ব যুগে রোজা : ইসলাম-পূর্ব সব যুগেই রোজার বিধান ছিল।

আলী (রা.) ও হাসান বসরি (রহ.) থেকে বর্ণিত আছে যে আদম (আ.)-এর যুগ থেকে শুরু করে সব উম্মতের ওপরই রোজা ফরজ ছিল। (ইজুহুল মিশকাত, দ্বিতীয়-খণ্ড,  পৃষ্ঠা-৬৫৬)

মুুসা (আ.)-এর রোজা প্রসঙ্গে কোরআন মজিদে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘স্মরণ করো, মুসার জন্য আমি ৩০ রাত নির্ধারিত করি এবং আরো ১০ দ্বারা তা পূর্ণ করি, এভাবে তার প্রতিপালকের  নির্ধারিত সময় ৪০ রাতে পূর্ণ হয়।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৪২)

মুুসা (আ.) তাওরাতপ্রাপ্তির জন্য প্রথমে ৩০ দিন, পরে আরো ১০ দিন বাড়িয়ে মোট ৪০ দিন রোজাসহ ইতিকাফ অবস্থায় ধ্যানমগ্ন থেকে ছিলেন।

ইহুদিদের আশুরার রোজা প্রসঙ্গে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় আগমন করে দেখলেন যে ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা পালন করে। তিনি তাদের এদিনের রোজার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেন। তারা বলল, এদিনে মুসা (আ.) ফেরাউনের ওপর বিজয় লাভ করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা (মুসলমানরা) মুসা (আ.)-এর অধিক নিকটবর্তী।

কাজেই তোমরাও রোজা পালন করো। (সুনান আদ-দারিমি, হাদিস : ১৭৫৯)
দাউদ (আ.)-এর রোজা সম্পর্কে হাদিস বর্ণিত হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন আল-আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বলেন, তুমি কি সব সময় রোজা রাখো আর রাতভর নামাজ আদায় করে থাকো? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলেন, এরূপ করলে তোমার চোখ বসে যাবে এবং শরীর দুর্বল হয়ে যাবে। যে বছরজুড়ে রোজা রাখল সে যেন রোজাই রাখল না। আর তুমি প্রতি মাসে তিন দিন করে রোজা রাখো, তাই বছরজুড়ে রোজা রাখা বা বছরজুড়ে রোজা রাখার মতো। তিনি বলেন, আমি এর চেয়ে বেশি সামর্থ্য রাখি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তাহলে তুমি দাউদ (আ.)-এর রোজা রাখো। তিনি এক দিন রোজা রাখতেন আর এক দিন রোজা ছেড়ে দিতেন। তিনি শত্রুর সম্মুখীন হলে পালায়ন করতেন না।
(বুখারি, হাদিস : ১৮৭৮)

ইসলাম-পূর্ব যুগের সামগ্রিক রোজা বিষয়ে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমাদের জন্য রোজার বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদের দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৩)

ইসলামে রোজার প্রবর্তন : ইসলাম-পূর্ব সব যুগে রোজার বিধান থাকলেও সেসব শর্ত, প্রকৃতি ও ধারাবাহিকতায় ইসলামে রোজা ফরজ হয়নি; বরং ইসলামে রোজা স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। আত্মিক, নৈতিক ও চারিত্রিক কল্যাণের আধার। রহমত, বরকত ও মাগফিরাত দ্বারা সমৃদ্ধ। স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যে ভরপুর মাসব্যাপী এই রোজা দ্বিতীয় হিজরিতে ফরজ করা হয়। রাসুল (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার দ্বিতীয় বছরে শাবান মাসের শেষ দশকে রমজানের রোজা আদায়ের নির্দেশনা সংবলিত সুরা বাকারার ১৮৩-১৮৫ আয়াত অবতীর্ণ হয়। অবশ্য রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা (১০ মহররম) এবং আইয়ামে বিজ তথা চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজা ফরজ ছিল। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর সেসব রোজার বিধান নফলে পরিণত হয়েছে। মুয়াজ ইবন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নামাজ তিন ধাপে পরিবর্তিত হয়েছে এবং রোজাও তিন ধাপে পরিবর্তিত হয়েছে। রোজার তিন ধাপের তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

প্রথম ধাপ : রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি মাসে তিন দিন (আইয়ামে বিজ তথা চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজা) এবং আশুরার রোজা (১০ মহররম) পালন করতেন।

দ্বিতীয় ধাপ : এরপর অবতীর্ণ হয়—(হে মুমিনরা! তোমাদের জন্য রোজার বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদের দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো। রোজা নির্দিষ্ট কয়েক দিনের। তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পুরো করে নিতে হবে। তা যাদের অতিশয় কষ্ট দেয় তাদের কর্তব্য, এর পরিবর্তে ফিদয়া—একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করা। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সত্ কাজ করে তবে তা তার পক্ষে অধিক কল্যাণকর। আর রোজা পালন করাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণপ্রসূ যদি তোমরা জানতে)।

(সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৩-১৮৪)

তখন যে চায় রোজা রাখে আর যে চায় রোজা না রেখে এর পরিবর্তে ফিদয়া—একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করে। এভাবে এক বছর যায়।

তৃতীয় ধাপ : এর পর অবতীর্ণ হয়, ‘রমজান মাস, এতে মানুষের দিশারি এবং সত্ পথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী রূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে রোজা পালন করে। আর কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পুরো করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ তা চান এবং যা তোমাদের জন্য ক্লেশকর তা চান না। এ জন্য যে তোমরা সংখ্যা পূর্ণ করবে এবং তোমাদের সত্ পথে পরিচালিত করার কারণে তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করবে এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৫)

তার পর থেকে রমজান মাস উপস্থিত হলে রোজার আবশ্যকতা প্রমাণিত হয়। আর মুসাফিরদের জন্য কাজা আদায় এবং রোজা আদায়ের সামর্থ্য নেই—এমন বৃদ্ধদের জন্য ফিদয়া প্রদানের সুযোগ অব্যাহত থাকে। (আবু দাউদ,  হাদিস : ৫০৭)

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

কিউএনবি/অনিমা/১১ মার্চ ২০২৫,/বিকাল ৫:২৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit