মো. সাইদুল আনাম, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সরকারি অনুমোদনহীন অবৈধ সব ইটভাঁটিতে প্রশাসনের পরিচালিত অভিযানের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতি। তবে তাদের বিক্ষোভ সমাবেশের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপজেলার সচেতন মহল ও পরিবেশবিদগণ। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলা পরিষদ চত্বরে অনুমোদনহীন ইটভাঁটির মালিক ও শ্রমিকরা বিক্ষোভ সমাবেশ করে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট স্মারকলিপি দেন তারা। এ সময় তারা তাদের ইটভাঁটিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, জরিমানা ও ইটভাঁটি ভাঙচুর বন্ধের দাবি জানান। বিক্ষোভ সমাবেশ চলাকালে বিক্ষোভকারীরা প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরণের স্লোগান দেন ও প্লাকার্ড প্রদর্শন করেন।দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিস ও ইটভাঁটি মালিকদের দেওয়া তথ্যে জানাগেছে, দৌলতপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ২৬টি ইটভাঁটি রয়েছে। এরমধ্যে মাত্র ১টি ইটভাঁটির পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে। বাঁকী ২৫টি ইটভাঁটি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এসব ইটভাঁটিতে প্রতি বছর ১ লাখ টনেরও বেশি জ¦ালানি হিসেবে কাঠ পোড়ানো হয়, যার বাজার মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকারও বেশী।
অভিযোগ রয়েছে, অনুমোদনহীন এসব ইটভাঁটিতে ইট তৈরীর জন্য ফসলি জমির উর্বর মাটি কেটে ব্যবহার করা হয়। ফলে কৃষি খাত মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে ও খাদ্য উৎপাদনেও ঘাটতি দেখা দিচ্ছে । পাশাপাশি প্রতিবছরই কমছে তিনফসলি বা আবাদি জমির পরিমাণ। এছাড়া, এসব ইটভাঁটির বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও বায়ুদূষণের ফলে ইটভাঁটির শ্রমিকদের পাশাপাশি আশপাশের সাধারণ মানুষও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে।পরিবেশবিদ গৌতম কুমার রায় এর মতে অবৈধ ইটভাঁটির কারনে হুমকীর মুখে পড়েছে এ অঞ্চলের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র। আর এর জন্য প্রশাসনের সদিচ্ছাকেই দায়ী করছেন তিনি।ইটভাঁটিতে প্রশাসনের অভিযান বন্ধে ইটভাঁটি মালিক ও শ্রমিকদের বিক্ষোভের বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা ইটভাঁটি মালিক সমিতির সভাপতি মো. ফজলুর রহমান বলেন, আমাদের ভাঁটা বন্ধ থাকলে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যাবো, ব্যাংকের ঋন পরিশোধ করতে পারবো না। এদিকে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে যাচ্ছে, তারা কোন কাজ পাচ্ছে না। সেজন্য আমরা মানববন্ধন করে ইউএনও বরাবর স্বারক লিপি প্রদান করেছি।
এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, ইটভাঁটি মালিক সমিতির লোকজন আজ (মঙ্গলবার) একটা মানববন্ধন করে আমার কাছে স্মারকলি দিয়েছে, আমি সেটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। উপর থেকে যেভাবে নির্দেশ আসবে আমি সেভাবে কাজ করব।সর্বপরি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও ফসলি জমি রক্ষার্থে অবৈধ এসব ইটভাঁটি বন্ধে প্রয়োজন জরুরী পদক্ষেপ নেয়া। নইলে পরিবেশ বিপন্ন হওয়ার পাশাপাশি সংকটে পড়বে কৃষিজমি। ফলে খাদ্য উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিবে।
কিউএনবি/অনিমা/০৪ মার্চ ২০২৫,/সন্ধ্যা ৭:০৪