ডেস্ক নিউজ : জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই পদ্মা নদীর কিছু অংশ, গড়াই নদীর দু’পাড়, কালীগঙ্গা নদী, সাগরখালী ও হিসসা নদী দখল করে গড়ে উঠছে পাকা-আধাপাকা বসতবাড়ি, কলকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে শুষ্ক সময়ে নদীগুলো একদিকে চারণভূমিতে পরিণত হয়, অপরদিকে বর্ষা মৌসুমে প্লাবিত হয়ে দুর্ভোগ বাড়ে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুসারে, কুষ্টিয়ার ওপর দিয়ে ৬টি নদীর প্রবাহ রয়েছে। পদ্মা নদী দৌলতপুর থেকে শুরু করে খোকসা উপজেলার মাঝপাড়া পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার, পদ্মার প্রধান শাখা গড়াই নদী ৫০ কিলোমিটার, গড়াই নদীর শাখা নদী কালিগঙ্গা ছেউড়িয়া থেকে ৩৫ কিলোমিটার, সাগরখালী নদী ভেড়ামারা থেকে ১৫ কিলোমিটার, হিসসা নদী ১০ কিলোমিটার কুমার নদ ১২৪ কিলোমিটার প্রবহমান রয়েছে। ৬টি নদীর দুপাড়সহ নদীর ভিতরে বিভিন্ন স্থানে দখল হয়ে গেছে। যারাই ক্ষমতায় আসছেন তাদের সহযোগিতায় স্থানীয়রা এসব দখলদারিত্ব করে চলেছেন।
১৯৭১ সালের পর থেকে কুষ্টিয়া জেলায় শুরু হয় নদী দখলের প্রতিযোগিতা। নদী দখল হওয়া এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে পদ্মা ও গড়াই নদীর দুপাড়ে কুষ্টিয়া তালবাড়ি শহরসংলগ্ন রেইনউক বাঁধ ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকা, বড়বাজার ঘোড়ারঘাট এলাকা, গড়াই নদীর প্রায় ১০০ বিঘার ওপর সীমানা প্রাচীর দেয়া হচ্ছে। শ্মশান ঘাটে এলাকা, মীর মশাররফ হোসেন সেতুসংলগ্ন এলাকা, কয়া বাজার ও কুমারখালী শহররক্ষা বাঁধ। খোকসা উপজেলাতেও চলছে নদী দখলের মহোৎসব। হুমকির মধ্যে রয়েছে ‘কুমারখালী শহর রক্ষা বাঁধ।’
এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সামনেই চলছে নদী দখল উৎসব। রেইনউক বাঁধ ও জিকে খেয়াঘাটসংলগ্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে কয়েকশ পাকা ও আধাপাকা বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। খেয়াঘাটের ঠিক পাশেই স্থাপনা নির্মাণের ইটের প্রাচীর দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে বেশ কিছু নদীর জায়গা। এ দিকে বড় বাজার ঘোড়াঘাটসংলগ্ন এলাকায় নদী দখলের চিত্র এমন যেন পৈত্রিক জায়গায় স্থাপনা নির্মাণ করছেন দখলদাররা। ঘোড়াঘাটসংলগ্ন বেড়িবাঁধ এলাকায় নদীর জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে প্রায় অর্ধ সহস্রাধিক বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন জানান, এখানে একটু ঘর তোলার জায়গার জন্য তাকে গুণতে হয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা। টাকা নেয়া ওই বিশেষ মহলটি তাকে জমির মালিকানার কাগজও দেবে বলে জানিয়েছে। সেতুসংলগ্ন এলাকায় নদী তীরবর্তী এলাকা দখল করে গড়ে উঠেছে ঘন-জনবসতি। অন্যদিকে দখলের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে কুমারখালী শহররক্ষা বাঁধ। শহরকে রক্ষা করার জন্য নির্মিত বাঁধটি দেখলে বোঝার উপায় নেই এটি একটি বাঁধ। বাঁধটির দু’পাশ দখল করে গড়ে উঠেছে ঘনবসতি।
গড়াই নদীর ভিতরে মঙ্গলবাড়িয়া, কুমারখালীর যদুবয়রা এলাকায় প্রায় ৫টি ভাটা। খোকসার জানিপুরে দুটি ভাটা তৈরি হয়েছে। এরা নদীর পলিসহ মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। খোকসা উপজেলার নদী দখলের চিত্রও একই। সেখানেও গড়াই নদীর জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়িসহ নানা স্থাপনা।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. রাশিদুর রহমান জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড ২৭৬ দখলদারের তালিকা প্রস্তুত করেছে। কালিগঙ্গার মত একই অবস্থা কুমার, মাথা ভাঙ্গা, হিসসা নদীর। নদীতে বাঁধ দেয়ার কারণে মৃতপ্রায় স্রোত প্রবাহ। দখলের কারণে সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে জীব ও বৈচিত্র্য। নানাভাবে দখলদারের কবলে পড়লেও উদ্ধারে তৎপর নেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের।
অপর দিকে গঙ্গা কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের মূল সেচ খালও ৫৮০ দখলদারের কবলে পড়ে সরু হয়ে গেছে। জিকে খালের মধ্যেই গড় তুলেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। নদী ও খালের অবৈধ দখল মুক্ত করার দাবি স্থানীয় সাধারণ মানুষ ও পরিবেশবিদদের। সরকারি বরাদ্দ পেলেই তালিকা ধরে দখলমুক্ত করা হবে নদীগুলো বলে জানান কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. রাশিদুর রহমান।
কিউএনবি/আয়শা/৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫,/বিকাল ৫:৩৪