বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:২৭ অপরাহ্ন

জ্যোতিষীকে হাত দেখানো কি জায়েজ?

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৪৮ Time View

ডেস্ক নিউজ : জ্যোতিষ শাস্ত্র জাদুবিদ্যার অন্তর্ভুক্ত। গণক বা জ্যোতিষীর কাছে গিয়ে ভাগ্য নির্ণয় করা, তাদের হাত দেখানো, তাদের থেকে ভবিষ্যতের বিপদাপদ কিংবা সফলতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নিষিদ্ধ। কারণ ভবিষ্যতের খবর আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত কেউ জানে না। অন্য কারো পক্ষে তা জানা সম্ভবও না। 

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই কিয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। তিনিই বৃষ্টিবর্ষণ করেন। গর্ভাশয়ে যা থাকে, তা তিনি জানেন। কেউ জানে না আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন দেশে সে মৃত্যুবরণ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে অবহিত।’ (সুরা লুকমান, আয়াত: ৩৪) ভবিষ্যৎ অদৃশ্য। অদৃশ্যের খবর আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘বলুন (হে নবি), আকাশ ও পৃথিবীতে আল্লাহ ছাড়া কেউ অদৃশ্যের খবর জানে না। তারা জানে না যে, তারা কখন পুনরুজ্জীবিত হবে।’ (সুরা নামল, আয়াত: ৬৫) 

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তার কাছেই অদৃশ্য জগতের চাবি রয়েছে। এগুলো তিনি ব্যতীত কেউ জানে না। জলে ও স্থলে যা রয়েছে, তিনিই জানেন। কোনো পাতা ঝরে না; কিন্তু তিনি তা জানেন।’ (সুরা আনআম, আয়াত: ৫৯)

জ্যোতিষীর ভবিষ্যদ্বাণী: কখনো জ্যোতিষীদের কথাকে সত্য বলে মনে হয়, এর বাস্তবতা আসলে কী, এটাও মহানবী (সা.) বলে দিয়েছেন। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, ‘লোকেরা একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) কে জ্যোতিষীদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। তিনি বললেন, তারা যা বলে তা কিছুই (বাস্তব) নয়। লোকেরা পুনরায় বলল, হে আল্লাহর রাসুল! তারা কখনো কখনো আমাদের কাছে এমনকিছু বলে, যা সত্য হয়ে যায়। 

তিনি বললেন, এটা সত্য কথা, যা শয়তান (আসমানের ফেরেশতাদের কথা থেকে) চুরি করে নিয়ে আসে এবং তা তাদের দোসরদের (জ্যোতিষীদের) কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলে দেয়। এরপর জ্যোতিষী এটার সঙ্গে একশ মিথ্যা মিশ্রিত করে মানুষের কাছে বর্ণনা করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭৫৬১) 

অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ফেরেশতাগণ মেঘমালার আড়ালে অবতরণ করেন এবং আকাশের ফায়সালা নিয়ে পরস্পর আলোচনা করেন। এসময় শয়তান আড়ি পেতে তা শুনে ফেলে এবং জ্যোতিষীর কাছে তা পৌঁছে দেয়। অতঃপর তারা সেই কথার সঙ্গে শত মিথ্যা মিশ্রিত করে মানুষের কাছে বর্ণনা করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩২১০) 

এ হাদিস থেকে বুঝা যায়, মানুষের জীবন-মরণ, ভাগ্য, জীবিকা প্রভৃতি সম্পর্কে যখন আকাশে ফায়সালা হয়, তখন ফেরেশতারা সেগুলো শুনে দুনিয়ায় নিযুক্ত ফেরেশতাদের সঙ্গে আলোচনা করে। 

শয়তান সেখানে কান পেতে কিছু শুনে এসে জ্যোতিষীর কাছে বলে দেয়। আর জ্যোতিষীরা এগুলোর সঙ্গে অগণিত মিথ্যা মিশ্রিত করে মানুষের কাছে বর্ণনা করে। যার ফলে তাদের কিছু ভবিষ্যদ্বাণী সত্য বলে মনে হয়। 

হাত দেখানোর পরিণাম: জ্যোতিষীর কাছে গিয়ে অতীত কিংবা ভবিষ্যতের খবরাখবর জিজ্ঞেস করে তা বিশ্বাস করলে চল্লিশ দিন নামাজ কবুল হবে না মর্মে হাদিস বর্ণিত হয়েছে। 

হজরত হাফসা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ’যে ব্যক্তি গণক বা জ্যোতিষীর কাছে যায়, তাকে কোনো কথা জিজ্ঞেস করে, তার চল্লিশ দিনের নামাজ কবুল হবে না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২২৩০) এখানে নামাজ কবুল না হওয়ার অর্থ তার প্রতিদান পাবে না। অবশ্য বান্দার উপর থেকে এর ফরজ দায়িত্ব আদায় হয়ে যাবে। তবে প্রতিদান বা নেকি না পেলে নামাজ পড়ার সার্থকতা কোথায়! 

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি গণকের কাছে যাবে, সে যা বলে তা সত্য বলে বিশ্বাস করবে, যে ব্যক্তি ঋতুবর্তী অবস্থায় আপন স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করবে কিংবা স্ত্রীর গুহ্যদ্বারে সহবাস করবে, সে মুহাম্মদের আনীত শরিয়তের অন্তর্ভুক্ত থাকবে না।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস: ১৩৫) 

জ্যোতিষীর কাছে যাওয়া, ঋতুস্রাব চলাকালীন সহবাস করা কিংবা পায়ুপথে সহবাস করা হারাম ও কবিরা গুনাহ। এ থেকে বেঁচে থাকা অবশ্য কর্তব্য। এসব অপকর্ম করলে তওবা জরুরি, নতুবা ইমানহারা হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। 

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জ্যোতিষ শাস্ত্রের এমন কোনো বিষয় শিখবে, যা আল্লাহ তায়ালা নিষেধ করেছেন, তাহলে সে জাদুবিদ্যারই একটা অংশ শিখল। জ্যোতিষী তো গণকই। আর গণক হলো জাদুকর এবং জাদুকর হলো কাফের।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৭২৬) 

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সব ধরনের ইমান ধ্বংসকারী গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকার তওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১৬ জানুয়ারী ২০২৫,/রাত ৮:৪০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit