শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১২:১২ পূর্বাহ্ন

ফজিলতপূর্ণ মাস রজব

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৮৯ Time View

ডেস্ক নিউজ : ‘রজব’ শব্দের অর্থ সম্মানিত। জাহেলিয়াতের যুগে আরবরা এ মাসকে অন্য মাসের তুলনায় অধিক সম্মান করত। এজন্য তারা এ মাসের নাম রেখেছিল ‘রজব’। ইসলাম আগমনের পর বছরের ১২ মাসের মধ্য থেকে রজবসহ চারটি মাসকে ‘আশহুরে হুরুম’ তথা সম্মানিত মাস ঘোষণা করা হয়। রজব হলো লাইলাতুল মেরাজের মাস, তাবুক যুদ্ধের মাস এবং রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জামাতা চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.)-এর জন্ম মাস। রজব মাস থেকে শুরু হয় রোজার প্রস্তুতি।

রজব মাসে অনুষ্ঠিত হয়েছিল তাবুকে রসুল (সা.)-এর জীবনের শেষ যুদ্ধ। এ যুদ্ধ রোম সম্রাটের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়। রোম সম্রাটের প্রতিনিধি সিরিয়ার গভর্নরের বিরুদ্ধে অষ্টম হিজরিতে পরিচালিত মুতা অভিযানে রোমানরা পিছুটান দেয়। তাবুকের যুদ্ধ মুসলমানদের নিজেদের শক্তির ওপর আস্থা স্থাপনে সহায়ক হয়।

কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে- ‘নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর কাছে গণনায় মাস ১২টি, তন্মধ্যে চারটি (সম্মানিত হওয়ার কারণে) নিষিদ্ধ মাস, এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। (সুরা তওবা, আয়াত : ৩৬)। নিষিদ্ধ ও সম্মানিত মাসগুলোর মধ্যে রজব একটি। হজরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, প্রিয়নবী (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ যেদিন আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন সেদিন যেভাবে সময় নির্ধারিত ছিল তা ফিরে এসেছে। ১২ মাসে এক বছর। এর মধ্যে চার মাস নিষিদ্ধ ও সম্মানিত। তিন মাস পরপর জিলকদ, জিলহজ ও মহররম এবং অপর মাস হলো মুজার গোত্র যাকে রজব মাস বলে জানে। যা জমাদিউস সানি ও শাবানের মধ্যবর্তী মাস।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস নম্বর ৪৩৮৫; মুসলিম শরিফ, হাদিস নম্বর ১৬৭৯)। ইমাম আবুবকর জাসসাস (রহ.) বলেন, ‘এসব মাসে ইবাদতের প্রতি যত্নবান হলে, বাকি মাসগুলোয় ইবাদত করা সহজ হয়। আর এ মাসগুলোতে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকলে অন্য মাসেও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা সহজ হয়। (আহকামুল কোরআন, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৬৩)। মুসলিম শক্তির প্রভাব আরব এবং আরবের বাইরেও বিস্তৃত হয়।

রমজানের আগমনি বার্তা নিয়ে আসে এ মাস। বর্ণিত আছে, রজব এলে রসুল (সা.) এ দোয়া পড়তেন, আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রমাদান। অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবানে বরকত দান করুন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিন। মুসনাদে আহমাদ।

রজব মাসে মেরাজের ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছিল। এ মাসের ইবাদত-বন্দেগি অধিক সওয়াবের দাবি রাখে। তেমনি এ মাসে গুনাহের অপরাধ ও ভয়াবহতাও অধিক। সুতরাং এ মাসে ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি নফল ইবাদতের প্রতি বিশেষভাবে মনোনিবেশ করা এবং সব ধরনের পাপাচার থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা আবশ্যক। তবে স্মরণ রাখা উচিত, শরিয়তের পক্ষ থেকে এ মাসের জন্য বিশেষ কোনো নামাজ, বিশেষ কোনো রোজা বা বিশেষ পদ্ধতির কোনো আমলের হুকুম দেওয়া হয়নি। তাই বিভিন্ন বই-পুস্তকে রজব উপলক্ষে বিশেষ নামাজ ও রোজার যেসব কথা পাওয়া যায় তার কোনো ভিত্তি নেই। যেমন সালাতুর রাগায়েব (রজবের প্রথম জুমার রাতে মাগরিব ও এশার মাঝে আদায়কৃত ১২ রাকাতবিশিষ্ট বিশেষ নামাজ), ২৭ তারিখের রোজা ইত্যাদি। এ ধরনের মনগড়া আমল দ্বারা রজবের ফজিলত লাভ সম্ভব নয়। বরং অন্যান্য মাসে পালনীয় ফরজ ও নফল নামাজ, যেমন তাহাজ্জুদ, ইশরাক ও চাশত ইত্যাদি নফল রোজা, তেলাওয়াত তাসবিহ-তাহলিল, দরুদ ও ইস্তেগফার ইত্যাদি ইবাদত যথাযথ পালনের মাধ্যমেই রজবের বরকত ও ফজিলত লাভ সম্ভব। এ মাসের ২৬ তারিখ রাতে আল্লাহতায়ালা রসুল (সা.)-কে মেরাজের মাধ্যমে তাঁর দিদার দিয়েছেন। তাই এ মাস এত মর্যাদাপূর্ণ। তাছাড়া পবিত্র হাদিসের কিতাবগুলোতে ও রজব মাসে রসুল (সা.)-এর অধিক নফল ইবাদতের বর্ণনা পাওয়া যায়। এ থেকেও রজব মাসের বিশেষত্ব প্রমাণিত হয়। গুনাহের গন্ধে কলুষিত অন্তর আত্মাকে পবিত্র তওবার মাধ্যমে ধুয়েমুছে পরিষ্কার করে নিতে হবে এ রজব মাসেই। হজরত আবু বকর বলখি (রহ.) বলেন, ‘রজব ফসল রোপণের মাস, শাবান ফসলে পানি সেচ দেওয়ার মাস আর রমজান হলো ফসল তোলার মাস।’ তিনি আরও বলেন, ‘রজব মাস ঠান্ডা বাতাসের মতো, শাবান মাস মেঘমালার মতো। আর রমজান মাস হলো বৃষ্টির মতো’- (লাতায়েফুল মা’আরেফ-১৪৩)।

জাহেলি যুগে রজবে মুশরিকদের মধ্যে স্বীয় প্রতিমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু জবাইয়ের একটি রেওয়াজ ছিল। রসুল (সা.) এ শিরকি প্রথার মূলোৎপাটন করেন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

কিউএনবি/অনিমা/০৯ জানুয়ারী ২০২৫,/রাত ১০:০৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit