আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা নেয়ার আগেই গ্রিনল্যান্ড দ্বীপ কিনে নেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প হইচই ফেলে দিয়েছেন। হবু এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট আগের মেয়াদেও দ্বীপটি কব্জাগত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।
ট্রাম্প পুত্র ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়রের গ্রিনল্যান্ড সফর ঘিরে কৌতূহল ও সন্দেহ আরও তীব্র হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, ট্রাম্প এবার দ্বীপটিকে করায়াত্ত করতে তার সর্বশক্তি কাজে লাগাবেন। যদিও গ্রিনল্যান্ড কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়েছে, দ্বীপটি কোনোভাবেই বিক্রয়যোগ্য নয়।
ট্রাম্প জুনিয়র অবশ্য এই সফরকে আনন্দভ্রমণ হিসেবেই প্রচার করছেন। এখন প্রশ্ন উঠছে, ট্রাম্পের চোখে গ্রিনল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এতো গুরুত্বপূর্ণ কেনো?
সেই প্রশ্নের জবাবও অনেকটা সহজ। ভূরাজনৈতিক অবস্থান আমেরিকার জন্য গ্রিনল্যান্ডকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। গ্রিনল্যান্ড হলো বিশ্বের সর্ববৃহৎ দ্বীপ। জনসংখ্যা ৫৬ হাজারের কিছু বেশি। ডেনমার্কের একসময়ের উপনিবেশ এ দ্বীপ এখন দেশটির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। দ্বীপটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মাঝখানে। গ্রিনল্যান্ডের রাজধানী নুক। শহরটি যত না ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনের কাছে, তার চেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের নিকটে।
গবেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই গ্রিনল্যান্ডের মালিকানাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়। বিশেষ করে রাশিয়া থেকে হামলা ঠেকানোর ক্ষেত্রে।
ট্রাম্পের আগে প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জনসন ১৮৬৭ সালে যখন আলাস্কা কেনেন, তখন গ্রিনল্যান্ড কেনার বিষয়ও বিবেচনা করছিলেন তিনি। আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যানের প্রশাসন দ্বীপটি কিনতে ডেনমার্ককে ১০ কোটি মার্কিন ডলার দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
১৯৫১ সালে প্রতিরক্ষা চুক্তির অধীন গ্রিনল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিমে একটি বিমানঘাঁটি গড়ে যুক্তরাষ্ট্র। এ ঘাঁটি বর্তমানে ‘পিটুফিক স্পেশ বেস’ নামে পরিচিত। এটি মস্কো ও নিউইয়র্কের মাঝামাঝি অবস্থিত। আর তা মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর সর্ব-উত্তরের ঘাঁটি। এটি ক্ষেপণাস্ত্র সতর্কব্যবস্থা সজ্জিত।
ট্রাম্পের কাছে গ্রিনল্যান্ড আরও আকর্ষণীয় হওয়ার কারণ হতে পারে দ্বীপটির প্রাকৃতিক সম্পদের মজুত। এ দ্বীপের প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে রয়েছে তেল ও গ্যাস। আরও আছে পৃথিবীর বিরল কিছু ধাতু, যেগুলোর বৈদ্যুতিক গাড়ি ও বায়ুকলের পাশাপাশি সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদনে উচ্চ চাহিদা রয়েছে।
গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলছে এবং আর্কটিকের তাপমাত্রা দ্রুত বাড়ছে। এটি গ্রিনল্যান্ডকে জলবায়ু সংকটের প্রধান শিকার হওয়া দেশ ও এলাকাগুলোর সামনের সারিতে নিয়ে আসছে। কিন্তু জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে গ্রিনল্যান্ডের ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন ঘটলে তাতে অর্থনৈতিক সুবিধা দেখছেন কেউ কেউ। আর্কটিকে বরফ গলতে থাকায় সেখানে নতুন নতুন জাহাজ চলাচলের পথ উন্মুক্ত হচ্ছে। ২০২৪ সালের আগপর্যন্ত দশকজুড়ে এ অঞ্চলে জাহাজের চলাচল বেড়েছে ৩৭ শতাংশ। আর্কটিক কাউন্সিলের মতে, জাহাজের চলাচল এতটা বেড়ে যাওয়ার আংশিক কারণ বরফ গলে যাওয়া।
কিউএনবি/অনিমা/০৯ জানুয়ারী ২০২৫,/বিকাল ৩:০০