মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:৫১ অপরাহ্ন

গল্পটা ‘দক্ষিণ এশিয়ার পপ রানি’ নাজিয়ার

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৪৩ Time View

বিনোদন ডেস্ক : আশির দশকে বড় হওয়া প্রজন্মের কাছে তার গানের ছিল আলাদা আকর্ষণ। তার কণ্ঠের মাদকতা ‘ডিস্কো দিওয়ানে’ করে তুলেছিল সবাইকে। নিজের সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার পপ-রানি বলে পরিচিত ছিলেন তিনি। বলছি- পাকিস্তানের পপ গায়িকা নাজিয়া হাসানের কথা।

ব্যক্তিগত জীবনে যন্ত্রণায় আকণ্ঠ ডুবে থেকে জমজমাট পারফরম্যান্স উপহার দিতেন নাজিয়া। ফুসফুসে কর্কট রোগের সংক্রমণ থেকে কোনও অংশে কম ছিল না জীবনসঙ্গীর থেকে পাওয়া আঘাত।

নাজিয়ার জন্ম পাকিস্তানের করাচিতে ১৯৬৫ সালের ৩ এপ্রিল। তার বাবা বসির হাসান ছিলেন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, আর মা মুনিজা বসির সমাজকর্মী। ভাই জোহেব এবং জারার সঙ্গে নাজিরার শৈশব ও কৈশোরের বড় অংশ কেটেছিল লন্ডনে।   

সেখানকার রিচমন্ড আমেরিকান ইউনিভার্সিটি থেকে বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও ইকোনমিক্সে স্নাতক ও পরে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের ডিগ্রিও লাভ করেন নাজিয়া।

সত্তরের দশক থেকেই নাজিয়া পাকিস্তান টিভিতে শিশুশিল্পী হিসেবে পারফর্ম করতেন। তবে পেশাদার শিল্পী হিসেবে যাত্রা শুরু ১৫ বছর বয়সে। তার কণ্ঠে মুগ্ধ ফিরোজ খান তাকে সুযোগ দেন ‘কুরবানি’ সিনেমাতে। নাজিয়া ছিলেন সিনেমার মূল কণ্ঠশিল্পী। তার কণ্ঠে ‘আপ জ্যায়সা কোই’ তুমুল জনপ্রিয় হয়।  

মাদকতায় ভরা হাস্কি ভয়েস আর নিজস্ব ঘরানা শ্রোতাদের হৃদয়ে ঝড় তুলে। ফলে দ্রুত সময়ে ভারতের প্রথম সারির জনপ্রিয় শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম হয়ে ওঠেন পাকিস্তানি নাজিয়া।  

‘আপ জ্যায়সা কোই’ গানের সুরকার ছিলেন বিড্ডু আপ্পাইয়াহ। লন্ডনবাসী ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিড্ডুর সঙ্গে নাজিয়ার যুগলবন্দি ছিল সুপারহিট। ভারতীয় বিনোদন দুনিয়ায় নাজিয়া ছিলেন প্রথম প্লেব্যাক শিল্পী, যিনি মিউজিক অ্যালবাম করেছিলেন। ১৯৮১ সালে মুক্তি পায় নাজিয়ার প্রথম মিউজিক অ্যালবাম ‘ডিস্কো দিওয়ানে’। ভারত ও পাকিস্তানে বিক্রির সব রেকর্ড ভেঙেচুরে দেয় এই অ্যালবাম। এমনকি, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, লাতিন আমেরিকা এবং রাশিয়াতেও বিক্রির তালিকার সবার ওপরে ছিল ‘ডিস্কো দিওয়ানে’।  

নাজিয়ার দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘স্টার/বুম বুম’ মুক্তি পায় ১৯৮২ সালে। অ্যালবামের সাউন্ডট্র্যাক ব্যবহৃত হয়েছিল ‘স্টার’ সিনেমাতে। কুমার গৌরব ও রতি অগ্নিহোত্রী অভিনীত সিনেমাটি বক্স অফিসে সাফল্য না পেলেও শ্রোতাদের মনের আরও কাছাকাছি চলে আসে নাজিয়ার গান।  

সাফল্য ও জনপ্রিয়তার ধারা নাজিয়া ধরে রেখেছিলেন তার তৃতীয় অ্যালবাম ‘ইয়াং তরং’ এবং চতুর্থ অ্যালবাম ‘হটলাইন’-এর ক্ষেত্রেও। পাকিস্তান টেলিভিশনেও বহু জনপ্রিয় শোয়ে ভাই জোহেবের সঙ্গে কাজ করেছেন নাজিয়া। তার দেখানো পথে অনেক শিল্পীই নিজের জায়গা করে নিয়েছিলেন পপ গানের দুনিয়ায়।  

১৯৯১ সালে প্রকাশিত হয় নাজিয়ার পঞ্চম অর্থাৎ শেষ মিউজিক অ্যালবাম ‘ক্যামেরা ক্যামেরা’। এটি প্রকাশের আগে জোহেব জানিয়ে দিয়েছিলেন, এটাই তাদের শেষ অ্যালবাম। আগের অ্যালবামগুলোর মতো তেমন জনপ্রিয় হয়নি ‘ক্যামেরা ক্যামেরা’।  

১৯৯৫ সালে বিড্ডুর সুর করা ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ গানটির অফার ফিরিয়ে দেন নাজিয়া। কারণ তার মনে হয়েছিল এতে পাকিস্তানবাসীর ভাবাবেগে আঘাত লাগতে পারে। পরে এই গানটি আইকনিক হয়ে ওঠে আলিশা চিনয়ের কণ্ঠে। শুধু এই গানই নয়। তার আগে সপ্রতিভ ও সুন্দরী নাজিয়া ফিরিয়ে দেন অভিনয়ের সুযোগও।

আশির ও নব্বইয়ের দশকের শুরুতে নাজিয়া ছিলেন ভারত ও পাকিস্তানের জনপ্রিয় পপ শিল্পী। কিন্তু খ্যাতির শীর্ষে থাকতে থাকতেই শোবিজ দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। চলে যান অকাল-অবসরে।  

ব্যক্তিগত জীবনকে আরও বেশি সময় দেবেন বলে মঞ্চ থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন নাজিয়া। কিন্তু একইসঙ্গে জীবনের পর্দা থেকেও তার বিদায়ের পর্ব ঘনিয়ে এসেছিল।

১৯৯৫ সালে তার বিয়ে হয় পাকিস্তানি ব্যবসায়ী মির্জা ইশতিয়াক বেগের সঙ্গে। তার কিছুদিন আগেই নাজিয়ার মারণরোগে আক্রান্ত হয়। ২০০০ সালের ১৩ আগস্ট ক্যান্সারের কাছে হার মানেন নাজিয়া। পাড়ি জমান অনন্ত যাত্রায়।  

মৃত্যুর দশদিন আগে বিবাহবিচ্ছেদ চূড়ান্ত হয় নাজিয়ার। তিনি কোনওদিন প্রকাশ্যে আনতে চাননি পারিবারিক বিবাদ। তবে তার ঘনিষ্ঠজনরা জানতেন, বিবাহিত জীবনে নাজিয়া ছিলেন অসুখী। ১৯৯৭ সালে জন্ম হয় নাজিয়ার একমাত্র ছেলে আরেজের। নাজিয়া চেয়েছিলেন, ছেলে যেন কোনওমতেই তার বাবা মির্জা ইশতিয়াকের কাছে বড় না হয়। তাই মৃ্ত্যুর আগে জোর করে চূড়ান্ত করেছিলেন বিবাহবিচ্ছেদ।  

নাজিয়ার পরিজনদের অভিযোগ, তাকে তিলে তিলে মানসিক যন্ত্রণায় দিয়েছিলেন মির্জা ইশতিয়াক। তিনি নাকি বলতেন, জীবন্ত নাজিয়ার থেকে মৃত নাজিয়াই তার কাছে বেশি প্রিয়।

মাত্র ৩৫ বছর বয়সে নাজিয়া তার মায়ের সামনেই মারা যান লন্ডনের এক হাসপাতালে। লন্ডনের হেনডনের সমাধিক্ষেত্রে ঘুমিয়ে আছেন দক্ষিণ এশিয়ার পপ গানের রানি। তার চিরসবুজ গান ছাড়াও নাজিয়া বেঁচে আছেন ‘নাজিয়া হাসান ফাউন্ডেশন’র মধ্যে। পথশিশুদের জন্য কাজ করে এই সংস্থাটি।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/২৩ ডিসেম্বর ২০২৪,/বিকাল ৩:৪৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

September 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit