আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআনে বলেন,
ہَلۡ یَنۡظُرُوۡنَ اِلَّاۤ اَنۡ تَاۡتِیَہُمُ الۡمَلٰٓئِکَۃُ اَوۡ یَاۡتِیَ رَبُّکَ اَوۡ یَاۡتِیَ بَعۡضُ اٰیٰتِ رَبِّکَ ؕ یَوۡمَ یَاۡتِیۡ بَعۡضُ اٰیٰتِ رَبِّکَ لَا یَنۡفَعُ نَفۡسًا اِیۡمَانُہَا لَمۡ تَکُنۡ اٰمَنَتۡ مِنۡ قَبۡلُ اَوۡ کَسَبَتۡ فِیۡۤ اِیۡمَانِہَا خَیۡرًا ؕ قُلِ انۡتَظِرُوۡۤا اِنَّا مُنۡتَظِرُوۡنَ
অর্থ: তারা কি (ঈমান আনার জন্য) কেবল এরই অপেক্ষা করছে যে, তাদের কাছে ফিরিশতা আসবে বা তোমার প্রতিপালক নিজে আসবেন অথবা তোমার প্রতিপালকের কিছু নিদর্শন আসবে? (অথচ) যে দিন তোমার প্রতিপালকের কোনও নিদর্শন এসে যাবে, সে দিন এমন ব্যক্তির ঈমান তার কোন কাজে আসবে না, যে ব্যক্তি পূর্বে ঈমান আনেনি কিংবা নিজ ঈমানের সাথে কোন সৎকর্ম অর্জন করেনি। (সুতরাং তাদেরকে) বলে দাও, তোমরা অপেক্ষা কর, আমরাও অপেক্ষায় আছি।
অর্থাৎ সর্বশেষ নবী ও সর্বশেষ কিতাব এসে গেছে, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বোঝানো-সমঝানো ও পথনির্দেশ করার চূড়ান্ত হয়ে গেছে। এখন আর ঈমান না আনার পক্ষে কোন অজুহাত বাকি নেই। তা সত্ত্বেও যারা ঈমান আনছে না তারা হয়ত তিনটি বিষয়ের কোনও একটির অপেক্ষায় আছে, যা ঘটার পর তারা ঈমান আনবে।
হয়ত তাদের প্রাণসংহার ও শাস্তিদান করার জন্য ফিরিশতা এসে যাবে। কিয়ামতের ময়দানে বিচারের জন্য আল্লাহ তাআলা স্বয়ং হাজির হয়ে যাবেন অথবা দুনিয়ায় তাদেরকে শাস্তিদানের জন্য তার হুকুম এসে যাবে এবং কিয়ামতের বড় আলামত প্রকাশ পাবে অর্থাৎ পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় হবে। কোরআন-হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী এ সকল অবস্থায় ঈমান গ্রহণযোগ্য নয়। যেমন পরের বাক্যে বলা হয়েছে, যেদিন কিয়ামতের বড় আলামত প্রকাশ পাবে, সেদিন কারও ঈমান আনয়ন কোন কাজে আসবে না।
এর দ্বারা কিয়ামতের সর্বশেষ নিদর্শনকে বোঝানো হয়েছে, যার পর ঈমান গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা গ্রহণযোগ্য কেবল সেই ঈমানই, যা ঈমান বিল-গায়ব হয়, অর্থাৎ অদৃশ্য বিষয়ে কেবল দলীল-প্রমাণের ভিত্তিতে বিশ্বাস করা হয়। কোনও জিনিস চোখে দেখে ঈমান আনলে পরীক্ষার সেই উদ্দেশ্য পূর্ণ হয় না, যার জন্য দুনিয়া সৃষ্টি করা হয়েছে।
আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা জিজ্ঞাসা করছেন, অবিশ্বাসীরা কী শুধুই ফেরেশতাদের আগমনের অপেক্ষায় আছে, কিংবা আল্লাহ তাআলা নিজে আসবেন অথবা কিয়ামতের নিদর্শন প্রকাশ পাবে? কিয়ামতের সময়ের বড় আলামত প্রকাশিত হওয়ার পর ঈমান আনা কিংবা তৎপূর্বে আমল না করা ঈমানের কোনও মূল্য থাকবে না।
আয়াতটির তাফসির অনুসারে, কোরআন ও রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে হিদায়াতের চূড়ান্ত বার্তা পৌঁছানো হয়ে গেছে। এখন যারা এই বার্তা প্রত্যাখ্যান করছে, তাদের জন্য আর কোনো অজুহাত অবশিষ্ট নেই। তাদের ঈমান তখনই কাজে আসবে, যখন তা পরীক্ষার সময় অর্থাৎ গায়বের উপর বিশ্বাসের ভিত্তিতে হবে।
তাফসির আরও জানাচ্ছে, কিয়ামতের আলামতের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়। এই বড় নিদর্শন প্রকাশ পাওয়ার পর ঈমান আনা অর্থহীন হবে, কারণ তখন সবকিছুই পরিষ্কার হয়ে যাবে।
এ আয়াত ও তাফসির আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ঈমান আনয়ন ও সৎকর্মের জন্য আমাদের এই জীবনই একমাত্র সুযোগ। কিয়ামতের নিদর্শন প্রকাশ পাওয়ার পর আর কিছুই আমাদের কাজে আসবে না। তাই সময় থাকতে আমাদের উচিত আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা, তার দেওয়া বিধান মেনে চলা এবং সৎকর্মে আত্মনিয়োগ করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সঠিক পথে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।