সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২১ পূর্বাহ্ন

ছারপোকা আছে কিনা বুঝবেন কীভাবে, বাঁচার উপায় কী?

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৩০ Time View

লাইফ ষ্টাইল ডেস্ক : ছোট্ট একটা পোকা, বেশিরভাগ সময় দৃষ্টির আড়ালেই থাকে, সেই ছারপোকাই যে কতোটা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে তা টের পেয়েছেন তারাই, যারা এ পোকার যন্ত্রণায় ভুক্তভোগী হয়েছেন। আমাদের দেশে বেশ পরিচিত এই ছারপোকা। ঘরবাড়ি, এমনিকি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছারপোকা নিয়ে নানা গল্পও বেশ প্রচলিত।

এই ছারপোকার বিষয়ে তাই বহুল আলোচিত কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যাক।

ছারপোকা দেখতে কেমন?

ছারপোকা আকারে খুবই ছোট ও ডিম্বাকৃতির, পরিপূর্ণ অবস্থায় এটি লম্বায় সর্বোচ্চ পাঁচ মিলিমিটার (একটা চালের চেয়েও ছোট) হয়ে থাকে। এদের পাখা থাকে না এবং ছয়টি করে পা থাকে। ছারপোকা দেখতে সাধারণত কালচে লাল, হলুদ বা বাদামি রংয়ের হয়।

এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা সবখানেই ছারপোকার দেখা মেলে। একটা দীর্ঘসময় পর্যন্ত ছারপোকাকে শুধু উন্নয়নশীল দেশগুলোর সমস্যা হিসেবে দেখা হলেও সাম্প্রতিককালে এটি ব্যাপকভাবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে ছারপোকার ৯০টির বেশি প্রজাতি রয়েছে।

তবে ব্রিটিশ পেস্ট কন্ট্রোল অ্যাসসোসিয়েশন বলছে, এর মধ্যে যেটা সবচেয়ে পরিচিত বা বেশি দেখা যায় (সিমেক্স লেকটুলারিয়াস) সেটি মানুষের বসবাসের উপযোগী পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে।

ছারপোকা কোথায় থাকে?

ছারপোকার ইংরেজি ‘বেডবাগ’ শুনে মনে হতে পারে শুধুমাত্র বিছানাতেই বুঝি এদের অস্তিত্ব। কিন্তু বিছানা-তোশক ছাড়াও জামা-কাপড়, ফার্নিচার, খাটের ফ্রেম, দেয়ালে ঝুলানো ওয়ালপেপার সবখানেই তাদের দেখা মিলতে পারে।

ছারপোকা নিজেদের আবাস হিসেবে বেছে নেয় মানুষ যেখানে ঘুমায়, তার আশেপাশের জায়গা। দিনের আলোতে তারা ম্যাট্রেস, তোশক, টেবিল, ড্রয়ার, ওয়ালপেপার ও খাটের আশেপাশে থাকা যে কোনো বস্তু, যেখানেই একটু ফাঁকা পায় নিজেদের লুকিয়ে রাখে। এজন্য তাদের শুধু একটা ক্রেডিট কার্ড ঢুকানোর মতো জায়গা পেলেই হয়।

রাতের বেলা একেকটা ছারপোকা ১০০ ফুট পর্যন্ত চলাচল করতে সক্ষম, তবে তারা সাধারণত মানুষ যেখানে ঘুমায় তার আট ফুটের মধ্যে থাকতেই পছন্দ করে।

ছারপোকা আছে কিনা বুঝবো কীভাবে?

এটা বোঝার সবচেয়ে সহজ উপায় কামড়ের দাগ খোঁজা। ছারপোকার কামড় সাধারণত এক সমান্তরালে বা একই জায়গায় একাধিক হয়ে থাকে।
ফর্সা ত্বকের ক্ষেত্রে এই কামড়ের জায়গাটা লাল দেখাবে, কিন্তু কালো বা বাদামি ত্বকের ক্ষেত্রে দাগটা বেগুনি হতে পারে এবং অনেক সময় খালি চোখে ধরাও পড়ে না। বেশিরভাগ মানুষই ছারপোকার কামড় বুঝতে পারে না, হয়তো কয়েক দিন পর অনেকগুলো কামড়ের দাগ দেখে বুঝতে পারে।

আরেকটা দিকেও নজর রাখতে হবে, তা হল বিছানায় কোথাও রক্তের ফোঁটা লেগে আছে কিনা; অনেক সময় ছারপোকা চাপা পড়ে মারা গেলে তার রক্ত লেগে থাকে। এছাড়া বিছানা বা ফার্নিচারে অনেক সময় বাদামি দাগও থাকতে পারে, সেটা হল তাদের অবশিষ্ট খাদ্যকণার দাগ।

ব্রিটিশ পেস্ট কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের নাটালি বুনগে বলেন, ভ্রমণ করার সময় ছারপোকার দিকে খেয়াল রাখাটা সবচেয়ে জরুরী কারণ এক্ষেত্রে প্রতিরোধ হল প্রতিকারের চেয়ে ভালো পন্থা।

তিনি বলছেন, আপনি যদি মনে করেন যে এমন জায়গায় আছেন যেখানে অনেক ছারপোকা, খবরে দেখাচ্ছে, তাহলে সবচেয়ে ভালো উপায় হল আপনার সাথে থাকা সমস্ত কিছুতে নজর বুলানো। ছারপোকা হয়তো আপনার স্যূটকেসেই থাকতে পারে। আমরা বেশিরভাগ সময় সাথে থাকা ব্যাগ বা লাগেজ মাটিতে কিংবা বিছানায় রাখি, ওখানে ছারপোকা যাওয়া সবচেয়ে সহজ।

ছারপোকা কামড়ালে কী হয়?

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা সিডিসি বলছে, ছারপোকা সাধারণত কোনো রোগ ছড়ায় না। তবে এটি অনেক সময় বিরক্তিকর হয়ে পড়ে কারণ আপনার ঘুমের সমস্যা হতে পারে এটির কারণে।

তবে ছারপোকার কামড়ের প্রতিক্রিয়া একেক মানুষের একেক রকম হয়ে থাকে। কারো কারো ক্ষেত্রে জায়গাটা খুব চুলকায় বা জ্বালা পোড়া করে, আবার কেউ কিছু টেরই পায় না। তবে ছারপোকার কামড় অনেক সময় অন্য একটা চর্মরোগ ডেকে আনতে পারে। যদিও এটি থেকে মারাত্মক অ্যালার্জির ঘটনা খুবই বিরল।

সবমিলে ছারপোকা মানুষের জন্য খুব হুমকির কিছু নয়; তবে যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে এবং যদি কামড় থেকে অতিরিক্ত চুলকানি হয়, তাদের ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

ছারপোকা কামড়ালে কী করণীয়?
সাধারণত ছারপোকার কামড়ের প্রভাব সপ্তাহ খানেকের মধ্যে নিজ থেকেই চলে যায়। নির্দিষ্ট সময় পর কামড়ের দাগও আর দেখা যায় না, চুলকানিও অনুভূত হয় না। তবে কিছু মৌলিক বিষয় মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে থাকে যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ।

এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

১. ঠান্ডা কিছু যেমন; ভেজা কাপড় কামড়ের জায়গাতে দেয়া
২.আক্রান্ত জায়গা পরিষ্কার রাখা
৩.আক্রান্ত জায়গা না চুলকানো
৪.অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করা

ছারপোকা থেকে মুক্তির উপায়

এটা অনেক সময় কঠিন। তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে ছারপোকার অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।

যেমন, যেসব কাপড়ে ও জায়গায় ছারপোকা আছে মনে হবে, সেসব জামা-কাপড়, বিছানার চাদর গরম পানিতে ধোয়া এবং অন্তত তিরিশ মিনিট গরম বাতাসে শুকানো। এসব জামা-কাপড় বা বিছানার চাদর প্লাস্টিকে মুড়িয়ে তিন থেকে চারদিন ফ্রিজে রেখে দেওয়া।

নিয়মিত ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখা, যদিও পরিচ্ছন্ন জায়গাতেও ছারপোকার অস্তিত্ব থাকে, কিন্তু নিয়মিত পরিষ্কার করলে ছারপোকার অস্তিত্ব সহজে মিলবে। ব্যবহৃত ফার্নিচার কিনলে সেটা ঘরে তোলার আগে ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখা।

ব্রিটিশ পেস্ট কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের নাটালি বুনগে বলছেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ঘরে ছারপোকা থাকলে সেটা নিয়ে লজ্জ্বিত না হয়ে প্রতিকার করা। তারা আমাদের রক্ত খেয়েই বেঁচে থাকে, তারা আমাদের পছন্দ করে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে পোকা-মাকড় নিরোধক কোম্পানিগুলোর সহায়তাও নেওয়া যেতে পারে।

কিউএনবি/অনিমা/০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪,/সকাল ১১:৫৬

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2024
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit