মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫, ০৯:৫২ পূর্বাহ্ন

উৎসবে কেন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়?

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ১৫ জুন, ২০২৪
  • ৮৭ Time View

ডেস্ক নিউজ : মাঠের ক্রিকেট রোমাঞ্চকর ভঙ্গিতে চলছে হাট-বাজারে। আলু হাফ সেঞ্চুরি করেছে আগেই। কিছু কিছু সবজি সেঞ্চুরি করেছে। ডিম দেড় সেঞ্চুরি আর মরিচ ডাবল সেঞ্চুরি। মাছ-মাংসের দাপটে স্কোর বোর্ড লাফিয়ে চলেছে। অন্যদিকে, প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ ‘ক্লিন বোল্ড আডট’ হচ্ছে সাধারণ নাগরিকগণ। সাম্প্রতিক সময়ে দ্রব্যমূল্য কিছুদিন পর পরই বেড়ে চলছে। একবার বাড়লে সেটা আর কমছে না। বাজার ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাই যেন কর্তৃপক্ষের নেই। বলা হয়, সিন্ডিকেটের হাতের মুঠো বন্দি বাজারের কর্তৃত্ব। সবাই যেন তাদের হাতে অসহায় ও জিম্মি।

বিশেষ করে, উৎসব উপলক্ষ্যে মূল্যবৃদ্ধি অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। রোজার আগে আগে, ঈদের সময়ে, কোরবানির সময়ে দাম বাড়ানো যেন দস্তুর। সব ধরনের পণ্যে কমবেশি দাম বাড়লেও কিছু কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে সীমাহীন মূল্যবৃদ্ধির মতো ঘটনাও ঘটে। যেমন, রোজার আগে পেয়াজ আর কোরবানির আগে মশলা মাত্রাছাড়া দামে কিনতে বাধ্য হয় সাধারণ মানুষ। মনে হয়, এই অনাচার, অত্যাচার, জুলুম ও বাড়াবাড়ির কবল থেকে আম-জনতার নিস্তার নেই।

এসব কারণেই কিছু সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে যে, অনেক মধ্যবিত্তের মানুষ নিম্ন আয়ের কাতারে নেমে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকেই নিরুপায় হয়ে পরিবার-পরিজন-সন্তানদের গ্রামে রেখে আসতেও বাধ্য হচ্ছেন। কারণ জীবনযাত্রার ব্যয় ও আনুসাঙ্গিক খরচ যে হারে বাড়ছে, বেতন ও আয় সে হারে বাড়ছে না। ফলে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের বিন্যাস ভেঙে যাচ্ছে। অনেকেই হতাশ হয়ে পড়ছেন। অনেকে ঘুষ, দুর্নীতি, অপরাধ, অপকর্মের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছেন।

এভাবেই আর্থিক সমস্যার কারণে শুধু অর্থনীতিতেই নয়, সামাজিক সমস্যার বিস্তারও ঘটছে। যার কুফল বহুমাত্রিক ও ভয়াবহ। অনেক সময় আর্থিক ও সামাজিক অবক্ষয় ও ধস এতোটাই প্রবল আর মারাত্মক হয় যে, রাজনীতি সেটা সামাল দিতে পারে না। এমনকি, রাজনৈতিক অর্জনও তলিয়ে যায় অর্থনীতিক চাপ ও সামাজিক স্থিতিহীনতার অভাবে। অতএব, বাজার ব্যবস্থা তথা মানুষের আর্থিক ও সামাজিক জীবনকে স্থিতিশীল রাখা রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের সামনে এক গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জকে এড়িয়ে গিয়ে নয়, মোকাবিলা ও নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে দমন করাই রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। আর এতেই নিহিত রয়েছে তাদের সাফল্য।

কাগজেকলমে বাজার ব্যবস্থা ও পণ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধে দায়িত্ব পালনের জন্য নানা রকমের সংস্থা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা আছে। সেসব বেতনভুক্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ সজাগ হলে পরিস্থিতি এতো ভয়াবহ হতো না এবং সব কিছুর জন্য রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষকে উত্তর দিতে হতো না। প্রতিটি পর্যায়ে জবাবদিহিতা ও দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত হলে সকল প্রশ্ন মন্ত্রীর সামনে উত্থাপিত হওয়ারও সুযোগ হ্রাস পেতো।

সকল পর্যায়ে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দায়িত্বশীলতা না থাকায় দফায় দফায় কেন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়, তার সঠিক কারণ ও সদুত্তর কেউ দিতে পারে না। বিশেষত নানা উৎসবের আবহে দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় না। বছর বছর রোজা, ঈদে দাম বাড়লেও এহেন মূল্যবৃদ্ধির কারণ চিহ্নিত হয় না। অথচ প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে এবং সরকারের নানা সংস্থায় গবেষণার ব্যবস্থা আছে। তাদের পক্ষ থেকে এজন্য উপযুক্ত কারণগুলোকে চিহ্নিত করে উপস্থাপনও করা হয় না। হলে সবাই তা জানতে পারতো এবং সেসব কারণগুলোকে সমাধানের পথে এগিয়েও নিয়ে যেতে পারতো।

বাস্তবে তেমনটি হচ্ছে না। দাম বাড়লে হৈচৈ ও কিছু চিৎকার হয়। কাজের কাজ কিছুই হয় না। একটি দুটি কারণকে সমাধানে এনে বিশেষ উপলক্ষ্যে দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধির প্রবণতাও ক্রমশ কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অত্যাচার সহ্য করেই মানুষ আর্থিক ও সামাজিক জীবনে পিছিয়ে পড়ছে। যার চাপ এক পর্যায়ে প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের জন্য বিরাট ঝুঁকির কারণ হচ্ছে।

‘বারো মাসের তের পার্বণের দেশ বাংলাদেশ‘ সম্পর্কে পৌরনীতি ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের বইগুলোতে যে বিহ্বলতা ও আবেগ লিপিবদ্ধ রয়েছে, বাস্তবে সেটা আংশিক সত্যে পরিণত হচ্ছে দিনে দিনে। প্রকৃত সত্য উদ্ধৃত করতে ‘পার্বণে উৎসবে বাংলাদেশে দ্রব্য মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ ঘটনা‘ মর্মে বাক্যটিও জুড়ে দিতে হবে। সেই সঙ্গে চলে আসবে আর্থিক, সামাজিক বিপর্যয় ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার কথাও। এসব প্রসঙ্গ দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির চিত্রকে ম্লান করবে, যা মোটেও কাম্য নয়। ফলে উৎসবে কেন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায় সেটা খতিয়ে দেখে সমাধানের পথে অগ্রসর হওয়াই সংশ্লিষ্টদের জরুরি কর্তব্য।

 

কিউএনবি/আয়শা/১৫ জুন ২০২৪,/রাত ৮:৩৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

June 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit