রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:০৯ অপরাহ্ন

যেসব কারণে জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন মর্যাদাপূর্ণ

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ৮ জুন, ২০২৪
  • ৭২ Time View

ডেস্ক নিউজ : মহান আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। মানুষকে ছোট্ট একটি হায়াত বা জীবন দিয়েছেন। আর জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই মূল্যবান। এই জীবনের কতককে আল্লাহ কতকের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।

মুফাসসিরদের মতে, এখানে ফজর বলতে বিশেষভাবে জিলহজের ১০ তারিখের ফজর বোঝানো হয়েছে। আর যে ১০ রাতের শপথ করা হয়েছে, তা হলো জিলহজের প্রথম ১০ রাত। এই রাতসমূহকে আল্লাহ তাআলা বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন। এর প্রত্যেক রাতেই ইবাদত-বন্দেগি করলে অনেক বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। এসব দিনের শপথ করার মধ্যে এর বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলতের কথা ফুটে ওঠে।

১০ দিনের শ্রেষ্ঠত্বের কারণ

এই দশকের বিশেষ মর্যাদা হওয়ার কারণ হচ্ছে, এ সময়ে বিশেষ কিছু ইবাদতের সম্মিলন ঘটে, যা বছরের অন্য কোনো সময়ে আদায় করা সম্ভব নয়। হজ ও কোরবানি, আরাফা দিবস—এসব মিলিয়ে এ দিনগুলোর রয়েছে বিশেষ ফজিলত। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এমন কোনো দিন নেই যে দিনসমূহের সৎকাজ আল্লাহ তাআলার নিকট জিলহজ মাসের এই ১০ দিনের সৎকাজ অপেক্ষা বেশি প্রিয়। সাহাবারা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ তাআলার পথে জিহাদ করাও কি (এত প্রিয়) নয়? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আল্লাহ তাআলার পথে জিহাদও তার চেয়ে বেশি প্রিয় নয়। তবে জান-মাল নিয়ে যদি কোনো লোক আল্লাহ তাআলার পথে জিহাদে বের হয় এবং এ দুটির কোনোটিই নিয়ে যদি সে আর ফিরে না আসতে পারে তার কথা (অর্থাৎ সে শহীদের মর্যাদা) ভিন্ন। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৭৫৭)

আল্লামা হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন, জিলহজের এই ১০ দিনের বৈশিষ্ট্যের কারণ হলো এ সময় শরিয়তের মৌলিক কিছু ইবাদতের সম্মিলন ঘটে। শরিয়তের প্রধান ইবাদত হলো নামাজ, রোজা, সদকা ও হজ। এ ধরনের সমাবেশ বছরের অন্য সময় পাওয়া যায় না। (ফাতহুল বারি, আসকালানি : ২/৪৬০)

১০ দিনের বিশেষ কিছু আমল

সামর্থ্যবানদের জন্য হজ ও কোরবানি ছাড়া এ মাসে আছে বিশেষ কিছু আমল। যার মাধ্যমে সে রাঙিয়ে নিতে পারে নিজের জীবন। যারা হজ আদায় করবে তা নির্ধারিত স্থান থেকে হজের বিধানাবলি পূরণ করবে। এ ছাড়া অন্যরা এসব আমল বেশি বেশি করবে।

ভালো আমল করা

প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য হলো জিলহজ মাসের প্রথম দশকের রাত্রি ও দিনগুলোকে গনিমত মনে করা। এই সময়গুলো ইবাদত ও নেক আমলে পার করা। পুরোটা সময় আল্লাহ তাআলার আনুগত্য ও নৈকট্য অর্জনের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করা। একটি আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, আমরা রমজানের শেষ দশকে উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে আমল করি। কিন্তু জিলহজের এই ফজিলতপূর্ণ দিনগুলোতে অলস ও উদাসীন থাকি। অথচ এই দিনগুলো রমজানের দিনগুলোর চেয়ে বেশি মর্যাদাপূর্ণ ও উত্তম। অন্যান্য সময়ের তুলনায় এ সময় ভালো আমলের প্রতি অধিক মনোযোগী হওয়া, বিশেষ করে যারা হজ ও ওমরাহ করতে পারছে না, তাদের এ সময়ে বেশি বেশি জিকির, তিলাওয়াত, দরুদ পড়া, সদকার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করা। তাওবা-ইস্তেগফার ও বেশি বেশি নফল ইবাদতে এই মহামান্বিত সময়ে নিজেকে নিয়োজিত রাখা।

বেশি পরিমাণে তাকবির বলা

এই ১০ দিনে বেশি পরিমাণে আল্লাহর জিকিরে নিজেকে ব্যতিব্যস্ত রাখা, বিশেষ করে তাকবির বলা। আমাদের মধ্যে এই আমলটি প্রায় ছুটে গেছে। তাই এদিনগুলোতে তাকবিরের প্রতি গুরুত্বারোপ করা চাই। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যাতে তারা তাদের জন্য স্থাপিত কল্যাণসমূহ প্রত্যক্ষ করে এবং নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে সেই সব পশুতে, যা তিনি তাদের দিয়েছেন। সুতরাং (হে মুসলিমগণ!) সেই পশুগুলো থেকে তোমরা নিজেরাও খাও এবং দুস্থ, অভাবগ্রস্তকেও খাওয়াও।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ২৮)

ইবনে ওমর ও আবু হোরায়রা (রা.)-এর আমল ছিল—এই ১০ দিন তাকবির বলতে বলতে বাজারের দিকে যেতেন এবং তাঁদের তাকবিরের সঙ্গে অন্যরাও তাকবির বলত। (সহিহ বোখারি, হাদিস : ৯৬৯)

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলার নিকট জিলহজের প্রথম দশকের আমলের চেয়ে বেশি প্রিয় আর কোনো আমল নেই। সুতরাং তোমরা এ সময়ে অধিক পরিমাণে তাকবির (আল্লাহু আকবার), তাহলিল (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ) এবং তাহমিদ (আলহামদু লিল্লাহ) পাঠ করো। (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩৭৫৮)

রোজা রাখা

এই সময়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল হচ্ছে জিলহজের প্রথম ৯ দিন আল্লাহর জন্য রোজা রাখা। আহমদ ইবনে ইয়াহইয়া (রহ.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.)-এর কোনো স্ত্রী থেকে বর্ণিত যে রাসুল (সা.) জিলহজ মাসের ৯ দিন, আশুরার দিন এবং প্রত্যেক মাসের তিন দিন রোজা পালন করতেন। মাসের প্রথম সোমবার এবং দুই বৃহস্পতিবার। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২৪১৭)

বিশেষ করে আরাফার দিনের রোজার বিশেষ ফজিলত আলাদাভাবে এসেছে। আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি আল্লাহ তাআলার নিকট আরাফাতের দিনের রোজা সম্পর্কে আশা করি যে তিনি এর মাধ্যমে পূর্ববর্তী এক বছর এবং পরবর্তী এক বছরের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৭৪৯)

দ্বিনের ওপর অবিচলতার দোয়া

এই ১০ দিন বেশি পরিমাণে আল্লাহর কাছে দোয়া করা, বিশেষত দোয়া কবুলের সময় দোয়ার প্রতি খুব গুরুত্ব প্রদান করা। আল্লাহ যে দ্বিনের ওপর অবিচল রাখে সে জন্য দোয়া করা। দোয়া এমনভাবে করা পানিতে ডুবার সময় বাঁচার জন্য লোকেরা যেমন মরিয়া হয়ে সাহায্য চায়, তেমনি আল্লাহর কাছে সেভাবে চাওয়া।

নখ, চুল না কাটা

এ ১০ দিনের আরেকটি আমল হচ্ছে জিলহজের চাঁঁদ ওঠার পর নখ, চুল, শরীরের অবাঞ্ছিত লোম ইত্যাদি কর্তন না করা। বরং কোরবানি দেওয়ার পর এগুলো পরিষ্কার করবে। এই আমল সবার জন্য প্রযোজ্য, চাই সে কোরবানি করুক বা না করুক। আমাদের মধ্যে অনেক এমন রয়েছে, যারা কোরবানি দেয় না, তারা এই আমলটি করে না। এটি ভুল। বরং নখ, চুল না কাটার বিধান সবার জন্য প্রজোয্য। সে কোরবানি করুক বা না করুক। ঈসা ইবনে হিলাল আস-সাদাফি হজরত আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস (রা) থেকে বর্ণনা করেন, একবার রাসুলুল্লাহ এক ব্যক্তিকে বললেন, ইয়াওমুল আজহাকে ঈদের দিন করার জন্য আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা এ উম্মতের জন্য এই দিন ঈদে পরিণত করেছেন। তাই তুমি তোমার চুল ও নখ কাটবে, তোমার গোঁফ ছোট করবে এবং তোমার নাভির নিচের পশম মুড়ে ফেলবে। আল্লাহর নিকট এটাই তোমার পূর্ণ কোরবান।(তহাবি শরিফ, হাদিস : ৬১৭২)

আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/০৮ জুন ২০২৪,/বিকাল ৩:০৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

September 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit