রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:২৩ অপরাহ্ন

ভয়, চাপ সামলে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু বাংলাদেশের

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ৮ জুন, ২০২৪
  • ৪৬ Time View

স্পোর্টস ডেস্ক : ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে টানা তিন বলে ছক্কা হাঁকালেন তাওহীদ হৃদয়। গ্যালারি থেকে ভেসে এলো উচ্ছ্বাস। বাংলাদেশের ম্যাচটা তখন প্রায় মুঠোয়। কিন্তু এরপরও কত চাপ! মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১৯তম ওভারের শেষ বলে গিয়ে যখন দুই রান নিলেন, জয় নিশ্চিত হলো তখন।  

কিন্তু এর আগে চিন্তার ভাঁজ পড়ে গেল অনেক। তবে জয়ের পর থাকলো স্বস্তিও। গত কয়েক সপ্তাহ হার, নানামুখী সমালোচনায় বাংলাদেশের পিঠ ঠেকে গিয়েছিল দেয়ালে। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ জিতে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা পাওয়া নাজমুল হোসেন শান্তর দলের কাছ থেকে। শনিবার ডালাসে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ২ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। শুরুতে ব্যাট করে ৯ উইকেট হারিয়ে ১২৪ রান করে শ্রীলঙ্কা। ওই রান তাড়া করতে নেমে এক ওভার হাতে রেখে জয় পায় বাংলাদেশ।  

টস জিতে ফিল্ডিং বেছে নেওয়ার পর প্রথম ওভারে তানজিম হাসান সাকিবের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। দ্বিতীয় বল থেকে বাউন্ডারি হাঁকান পাথুম নিশাঙ্কা, ওই ওভার থেকে আসে পাঁচ রান। দ্বিতীয় ওভারে সাকিব আল হাসান এসে ৮ রান দেন, তাতে অবশ্য ছিল ওভারথ্রোতে আসা চারের অবদান।  

ইনজুরি কাটিয়ে ফেরা তাসকিন আহমেদ আসেন তৃতীয় ওভারে। শুরুতে ছন্দটা একদমই খুঁজে পাচ্ছিলেন না তিনি। প্রথম দুই বলেই তাকে চার মারেন কুশল মেন্ডিস। কিন্তু তৃতীয় বলেই বাংলাদেশ পেয়ে যায় উইকেটের দেখা। শট খেলা নিয়ে দ্বিধায় থাকা কুশল মেন্ডিসের ব্যাট ছুঁয়ে অফ স্টাম্পের বাইরের বলে আঘাত হানে স্টাম্পে। ৮ বলে ১০ রান করে ফেরেন তিনি। ওই ওভারে আরও এক বাউন্ডারি হজম করা তাসকিন ১২ রান দেন।  

চতুর্থ ওভারে আবার তাসকিনকে ফেরানো হয়। এক ছক্কা খেলেও সাত রানের বেশি দেননি তিনি। পঞ্চম ওভার করতে এসে সাকিব আল হাসান দিশেহারা হয়ে পড়েন। এক ওভারেই তার বল চারবার বাউন্ডারির বাইরে পাঠান নিশাঙ্কা। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে গিয়ে মোস্তাফিজুর রহমানকে বোলিংয়ে আনেন শান্ত।  

প্রথম বলেই উইকেট এনে দেন মোস্তাফিজ। ৫ বলে ৪ রান করা কামিন্দু মেন্ডিস মিড অফে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। তবুও অবশ্য বাউন্ডারি হাঁকানো থামেনি লঙ্কানদের। পাওয়ার প্লে শেষে ২ উইকেট হারিয়ে ৫৩ রান করে শ্রীলঙ্কা।  

পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পর রান তোলার গতি কিছুটা কমে আসে তাদের। এর মধ্যেও পাথুম নিশাঙ্কা সাবলীলই ছিলেন। কিন্তু তাকে ফিরিয়ে দেন মোস্তাফিজুর রহমান। অষ্টম ওভারের চতুর্থ বলে মোস্তাফিজকে বাউন্ডারি হাঁকিয়েছিলেন নিশাঙ্কা, পরের বলেই ক্যাচ তুলে দেন কাভারে দাঁড়ানো শান্তর হাতে। ২৭ বলে ৭টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪৭ রান করেন নিশাঙ্কা।  

তার বিদায়ের পর রানের গতি আরও কমে আসে। চারিথ আসালাঙ্কা ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভার জুটিতে ৩২ বলে স্রেফ একটি বাউন্ডারি আসে। তাদের দুজনের ৩০ রানের জুটি ভেঙে দেন রিশাদ হোসেন। শ্রীলঙ্কার ইনিংসে শেষ আঘাতটাও আসে তার হাত ধরে।

১৫তম ওভারের প্রথম বলেই তাকে তুলে মারতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে দাঁড়ানো সাকিবের হাতে ক্যাচ দেন আসালাঙ্কা। শুরুতে ছেড়ে দিলেও দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় ২১ বলে ১৯ রান করা ব্যাটারের ক্যাচ নেন সাকিব। এরপর ব্যাটিংয়ে আসা হাসারাঙ্গার জন্য স্লিপ নিয়ে আসেন শান্ত। ওখানেই মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলে ক্যাচ তুলে দেন হাসারাঙ্গা। ওই ওভারে স্রেফ ৩ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন রিশাদ।  

নিজের পরের ওভারের এসেও প্রথম বলেই উইকেট তুলে নেন রিশাদ। তার টার্ন করা বলে সামান্য এগিয়ে আসেন ধনঞ্জয়া। মূহূর্তের মধ্যেই ২৬ বলে ২১ রান করা ধনঞ্জয়ার স্টাম্প ভেঙে দেন লিটন। এরপর তাসকিন ফেরান শানাকাকে, ১৮তম ওভারে ৩ রান দেন তিনি। পরের ওভারে মোস্তাফিজ দুই রান দিয়ে ৩ বলে শূন্য রানে ফেরান থিকসেনাকে।

শেষ ওভারে এক বাউন্ডারিত ৭ রান হজম করলেও তানজিম হাসান সাকিব ফেরান অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকে। বাংলাদেশের সব বোলারই দারুণ করেছেন। তবে এর মধ্যে রিশাদ হোসেন ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন। সমান ওভারে স্রেফ ১৭ রান দিয়ে মোস্তাফিজুর রহমানও ৩ উইকেট পান। দুই উইকেট পাওয়া তাসকিন ৪ ওভারে ২৫ রান দেন। ৩ ওভারে ৩০ রান দিয়ে উইকেটশূন্য ছিলেন সাকিব। তানজিম ৪ ওভারে ২৪ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন।  

১২৫ রান তাড়ায় নেমে তৃতীয় বলেই প্রথম উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। ধনঞ্জয়া ডি সিলভার বলে মিড অনে সহজ ক্যাচ দিয়ে দুই বলে শূন্য রানে ফেরেন সৌম্য সরকার। তিন রান নিতে পারে বাংলাদেশ প্রথম ওভার থেকে। পরেরটিতে গিয়ে হারায় আরও এক উইকেট।

এবার নুয়ান থুসারার বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরত যান তানজিদ হাসান তামিম। ৬ বলে ৩ রান করেন তিনি। দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়া বাংলাদেশকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও লিটন দাস। দুজন সিঙ্গেলস নিয়ে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন।  

কিন্তু হুট করেই ছন্দপতন ঘটে নাজমুল হোসেন শান্ত ফিরলে। নুয়ান থুসারার বলে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। লিটনের সঙ্গে ২২ বলে ২২ রানের জুটি ভেঙে যায় তাতে। পাওয়ার প্লেতে শ্রীলঙ্কার ঠিক বিপরীত অবস্থা হয় বাংলাদেশের। বাউন্ডারি আসে স্রেফ দুটি, ইনিংসের প্রথম বাউন্ডারিই এসেছিল পঞ্চম ওভারে গিয়ে। ছয় ওভারে ৩ উইকেটে বাংলাদেশ করে ৩৪ রান।

উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া বাংলাদেশের হয়ে এরপর হাল ধরেন তাওহীদ হৃদয়, লিটন দাসের সঙ্গী হন তিনি। সিঙ্গেলস নিয়ে রানের গতিকে সচল রাখেন তারা। মাঝেমধ্যে আসছিল বাউন্ডারিও।  

তাওহীদ হৃদয় আউট হন ১৫তম ওভারে হাসারাঙ্গার বলে। কিন্তু ওই ওভারের প্রথম তিন বলেই ম্যাচ একদম কাছে নিয়ে আসেন তিনি। হাসারাঙ্গার ওভারে হাঁকান হ্যাটট্রিক ছক্কা! স্লগ সুইপ প্রথম, দ্বিতীয়টিও তাই, তৃতীয় ছক্কা আসে কাভারের উপর দিয়ে। পরের বলে অবশ্য এলবিডব্লিউ হয়ে যান হৃদয়। কিন্তু ততক্ষণে ২০ বলে ১ চার ও ৪ ছক্কায় ৪০ রান করে কাজটা করে দিয়ে গেছেন তিনি।  

কিন্তু এরপর বাংলাদেশ আরও একবার পড়ে যায় ভীষণ চাপে। উইকেটে সেট হওয়া লিটন দাসকে ফেরান হাসারাঙ্গা। ৩৮ বলে ৩৬ রান করে তিনি এলবিডব্লিউ হন। এরপর সাকিব আল হাসানও পাথিরানার বাউন্সারে মাহেশ থিকসেনার দুর্দান্ত ক্যাচের শিকার হন। ১৪ বলে স্রেফ ৮ রান করেন তিনি।  

হুট করেই বদলে যেতে থাকে ম্যাচের মোড়। রান খুব বেশি না হলেও, বাংলাদেশ পড়ে যায় চাপে। সেটি যেন পাহাড়সম হয়ে যায় নুয়ান থুসারার করা ১৮তম ওভারে এসে। রিশাদ হোসেন প্রথমে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বোল্ড হন ৩ বলে ১ রান করে। ঠিক তার পরের বলেই এলবিডব্লিউ হয়ে যান তাসকিন।  

শেষ দুই ওভারে ১২ রান দরকার হলেও বাংলাদেশের হাতে তখন কেবল দুই উইকেট। শ্রীলঙ্কার জন্যও অবশ্য পথটা কঠিন ছিল। ১৯তম ওভারে গিয়ে প্রথমবার বোলিংয়ে আসেন দাসুন শানাকা। প্রথম বলেই তার করা ফুলটসে ছক্কা হাঁকিয়ে দেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।  

পরের বলে তিনি সিঙ্গেলস নেন। তানজিম হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দৃঢ়তায় শেষ ওভারে যাওয়ার আগেই ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ। ১৩ বলে ১৬ রান করে শেষ অবধি অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।  

 

কিউএনবি/আয়শা/০৮ জুন ২০২৪,/দুপুর ১২:২১

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

September 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit