বাদল আহাম্মদ খান ,ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি : উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শেষ পর্যন্ত ‘ঐক্যের প্রার্থী’ দিয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপজেলা আওয়ামী লীগ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনের সংসদ সদস্য ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের আমন্ত্রণে ঢাকায় তাঁর গুলশানের কার্যালয়ে গিয়ে নেতা-কর্মীরা চেয়ারম্যান পদে ঐক্যের প্রার্থী হিসেবে মো. মুরাদ হোসেনকে সমর্থন দেন। তবে ভাইস চেয়ারম্যান পদটি উন্মুক্ত থাকবে বলে রবিবার রাতের আলোচনায় উঠে আসে। অবশ্য ঐক্যের প্রার্থী করেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে আওয়ামী লীগ। কেননা, দলের ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক প্রার্থী শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকার আভাস পাওয়া গেছে। আবার ঐক্য প্রক্রিয়ার বাইরের একাধিক প্রার্থীও মাঠে থাকছেন বলে এক প্রকার নিশ্চিত হওয়া গেছে। ‘দুর্বল প্রার্থী’ বাছাই হওয়ায় অনেক নেতা-কর্মীও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে কাজ করবেন বলে অনেকের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে।
আখাউড়া উপজেলা পরিষদের ভোট আগামী ২১ মে। চেয়ারম্যান পদে মোট ছয়জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, যাদের সবার মনোনয়ন পত্র বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তারা হলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কাশেম ভুইয়া , সাবেক চেয়ারম্যান শেখ বোরহান উদ্দিন আহমেদ, উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক মো. মনির হোসেন, ধরখার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আরিফুল হক বাছির, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারন সম্পাদক গোলাম সামদানী ফেরদৌস ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মো. মুরাদ হোসেন। এর মধ্যে মনির হোসেন শুরু থেকেই ঐক্য প্রক্রিয়ায় ছিলেন না। শেখ বোরহান উদ্দিন স্থানীয়ভাবে হওয়া আওয়ামী লীগের ঐক্য প্রক্রিয়ার সভা ও আওয়ামী লীগের সিনিয়র বেশ কয়েকজন নেতার পৃথক সভাতেই উপস্থিত ছিলেন।
নেতা-কর্মীরা জানান, দলের ঐক্য ধরে রাখতে আইনমন্ত্রী শীর্ষ নেতাদেরকে ঢাকায় ডেকে পাঠান। রবিবার রাতে তিনি গুলশান কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। ওই আলোচনায় স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে তিনি কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিবেন না। সবাই মিলে যে সিদ্ধান্ত নিবেন সেটাতেই তিনি একমত পোষণ করবেন। দলে যেন কোনো বিরোধ সৃষ্টি না হয় সেই লক্ষ্যে তিনি সবাইকে ডেকেছেন। পরে নেতা-কর্মীরা আধাঘন্টার মতো আলোচনা করে চেয়ারম্যান পদে মো. মুরাদ হোসেনকে সমর্থন দিয়ে তার পক্ষে কাজ করবেন বলে মন্ত্রীকে অবহিত করেন।
তবে শেখ মো. বোরহান উদ্দিন, মো. মনির হোসেন ও আরিফুল হক বাছিরের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তারা নির্বাচন করবেন এটা প্রায় নিশ্চিত। গোলাম সামদানী ফেরদৌসও ভোটে মাঠে শেষ পর্যন্ত থাকবেন বলে আভাস পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের ঐক্যের প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে। রবিবার রাতের সভায় উপস্থিত আখাউড়া পৌর যুব লীগের সভাপতি মো. মনির খান বলেন, ‘সভায় চেয়ারম্যান পদের জন্য অনেকে আরিফুল হক বাছিরের কথা বলেছেন, অনেকে মুরাদ হোসেনের কথা বলেছেন। বক্তারা প্রার্থীদের পক্ষে বিপক্ষে না কথা বলেন। শেষ পর্যন্ত মুরাদ হোসেনকে সমর্থন দিতে বলা হয়। তবে মন্ত্রী মহোদয় সরাসরি কারো বিষয়ে কিছু বলেননি। আর ভাইস চেয়ারম্যানের বিষয়টি উন্মুক্ত রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়। এ নিয়ে ফেসবুকে একজনের পক্ষে যা লেখা হচ্ছে সেটা মোটেও সত্য নয়।’
এ বিষয়ে আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক মো. মনির হোসেন বাবুল বলেন, ‘মন্ত্রী মহোদয় আমাদেরকে বলেছেন যে দলের ঐক্যের স্বার্থে আমরা আলোচনা করে একজন প্রার্থী ঠিক করতে। সেই অনুযায়ি মুরাদ হোসেনকে সমর্থন দেওয়া হয়। মন্ত্রী মহোদয় আমাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।কথা হলে আরিফুল হক বাছির সোমবার সকালে বলেন, ‘আমি এখনো ঢাকায় আছি। এলাকায় ফিরে জনগনের সঙ্গে কথা বলে আমার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিবো। এলাকার মানুষ যেহেতু আমাকে চাচ্ছে তাই আমার নির্বাচন করার সম্ভাবনা অনেক বেশি।’
উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শেখ বোরহান উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি আগে থেকেই আভাস পাচ্ছিলাম বর্তমান চেয়ারম্যান নির্বাচন নাও করতে পারেন। এক্ষেত্রে একটা ইউনিয়ন ও দুইটা পৌরসভার মানুষ দলমত নির্বিশেষে আমার হয়ে কাজ করবে। আর দীর্ঘদিন রাজনীতি করা এবং জনপ্রতিনিধি থাকার সুবাদে বাকি তিন ইউনিয়নের মানুষের সঙ্গে আমার সখ্যতা আছে বিধায় তারাও আমাকে সমর্থন দিবে বলে আশা করি। সব মিলিয়ে আমি নির্বাচন করবো একটা নিশ্চিত এবং আমার জয়লাভেরও একটা বেশ ভালো সুযোগ আছে।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী চৌধুরী বলেন, ‘আমরা মুরাদ হোসেনকে সমর্থন দিয়েছি। মন্ত্রী মহোদয় আমাদের সিদ্ধান্তে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান প্রার্থী বোরহান উদ্দিন আমাদের সভায় এলেও একক প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্তের কাগজে স্বাক্ষর করেননি। শুনেছি ওনি নির্বাচন করবেন। আর মুরাদ হোসেনকে বলেছি সে যেভাবেই হোক বাছিরকে (আরিফুল হক) ম্যানেজ করে এসে সবাইকে নিয়ে মাঠে নামতে।’
সভায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এম.পি স্পষ্ট করে বলে দেন যে, ‘দলের সভানেত্রী বলেছেন নির্বাচন উন্মুক্ত। এখানে কোনো দলীয় প্রতীক থাকবে না। সাধারন সম্পাদক বলেছেন মন্ত্রী এমপিরা যেন এতে নাক না গলায়। আমি এর বাইরে না। বাইরে গিয়ে বলতে পারবেন না যে আমি এটা বলে দিছি। আমার কথা হলো আপনারা দলের ঐক্যের স্বার্থে কিছু করলে আমি এর সঙ্গে একমত। আপনারা আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন।’ দলীয় নেতা-কর্মীরা আলোচনা করে মুরাদ হোসেনের নাম প্রস্তাব করলে মন্ত্রী দলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কাজ করতে বলেন।
কিউএনবি/অনিমা/৩০ এপ্রিল ২০২৪,/সকাল ১০:৫৩