সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৫৭ অপরাহ্ন

জুমাতুল বিদার গুরুত্ব ও করণীয়

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৭৯ Time View

ডেস্ক নিউজ : ইসলামে জুমাতুল বিদার গুরুত্ব অপরিসীম। জুমাতুল বিদা পবিত্র রমজানুল মোবারকের আখেরি জুমাকে বলা হয়। একদিকে যেমন জুমার ফজিলত পুরো সপ্তাহের মধ্যে সব দিনের সবচাইতে বেশি, তদ্রুপভাবে রমজান মোবারক ১২টি মাসের মধ্যে সবচাইতে বেশি ফজিলতপূর্ণ। অতএব রমজানুল মোবারকের সর্বশেষ জুমা অত্যন্ত ফজিলত ও গুরুত্ব বহন করে। কেননা জুমাতুল বিদার মাধ্যমে আমরা রহমত বরকত মাগফিরাতে ভরপুর পবিত্র রমজান মোবারককে আমরা বিদায় জানাতে যাচ্ছি। সামনের ১১টি মাসের মধ্যে আর রমজানকে পাব না। এমন কি আমার জীবনে আর রমজান শরিফ নসিব না-ও হতে পারে। তাই রমজান মোবারককে বিদায় জানাতে গিয়ে আমাদের আফসোসের সঙ্গে একটু ভাবতে হবে। এখান থেকে আমাদের পাথেয় সংগ্রহ করে সামনের জীবনে আমাদের ইসলামের আলোয় আলোকিত করে অন্ধকারকে জয় করে সব পাপাচার থেকে নিজেকে রক্ষা করে ইমান আমলকে হেফাজত করে সামনে অগ্রসর হওয়ার শপথ গ্রহণ করতে হবে। রমজানুল মোবারক আমাদের কোরআন তেলাওয়াত, সিয়াম, কিয়াম, সাহরি, ইফতারি, দানশীলতা, ধৈর্য, পরোপকার, ইমান, বিশ্বাস ও তাকওয়া প্রশিক্ষণ দিয়েছে। রমজান শেষে আমরা কি এগুলোকেও বিদায় করে দেব এবং পুনরায় পাপাচারে লিপ্ত হব? নাকি সামনের ১১টি মাস আমরা নিজের মধ্যে এই প্রশিক্ষণকে লালন-পালন করব। যদি বিদায় করে দেই, তাহলে আমরা অকৃতজ্ঞ ও বিশ্বাসঘাতক বলে বিবেচিত হব। কেননা পবিত্র রমজানুল মোবারক আমাদের জন্য অনেক বড় নেয়ামত, এই নিয়ামতকে ভালোবেসে গ্রহণ করতে হবে। সযতেœ ধারণ করতে হবে ও লালন করতে হবে। কোরআন তিলাওয়াত ছাড়বেন না। কত কষ্ট করে সারা মাস তারাবিতে কোরআন শুনলেন, যদি বুঝতে পারতেন তাহলে শোনার আনন্দ তৃপ্তি ও সওয়াব আরও অনেক গুণ বেশি হতো। কোরআনের নূরে হৃদয় আলোকিত হতো। অতএব আমাদের নিয়ত করতে হবে, আগামী রমজানের আগে পূর্ণ কোরআন অর্থসহ পড়া, কেননা রমজান মোবারকে লাইলাতুল কদরে কোরআন নাজিল হয়েছে, তাই তো লাইলাতুল কদরের এক রাত হাজার মাস অর্থাৎ ৮৪ বছরের এবাদতের চাইতে উত্তম বলা হয়েছে। অতএব সারা বছর কোরআন তিলাওয়াত করতে হবে। যারা কোরআন শরিফ পড়তে অক্ষম, তারা বয়স্ক কোরআন শিক্ষা ক্লাসে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে মহান রব্বুল আলামিনের কালামুল্লাহ শরিফ সহিহ শুদ্ধ করার চেষ্টা করে যেতে হবে। মহল্লার প্রতিটি মসজিদে বয়স্ক কোরআন শিক্ষা ক্লাস চালুর ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা হাদিসের মধ্যে আসছে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি; যিনি কোরআন মাজিদ শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়। অন্য হাদিসে এসেছে, কোরআন শরিফ তিলাওয়াত সর্বোত্তম ইবাদত। অতএব সারা বছর সকাল বিকাল অল্প করে হলেও কোরআন তিলাওয়াত করতে হবে এবং বিশেষ করে ফজিলতপূর্ণ আমলি সুরা এবং আয়াতগুলো নিয়মিত তিলাওয়াত করতে হবে। সুরা ইয়াসিন, সুরা ওয়াকিয়া, সুরা মুলক, সুরা ইখলাস, সুরাতুল ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সুরা হাশরের শেষ আয়াত ইত্যাদি। এমনিভাবে রমজান মোবারকের বিশেষ শিক্ষা রোজা রাখা, সারা বছর নফল রোজাগুলো আদায় করতে হবে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহর সন্তুষ্টি, রহমত, বরকত ও রুহানিয়াত অর্জনের জন্য নফল সিয়াম অতুলনীয় ইবাদত। প্রতি মাসে তিন দিন, বিশেষত প্রতি আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে সিয়াম পালন করা। প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার দিন এবং জিলহজ মাসের প্রথম নয় দিন, বিশেষত আরাফার দিন ও আশুরার দিনসহ আগে পরের যে কোনো আরও একদিন সিয়াম পালন করার অসীম ফজিলত ও সওয়াবের কথা বিভিন্ন হাদিসে পাওয়া যায়। রমজানের পরেই শাওয়াল মাস। পয়লা শাওয়াল আমরা ঈদুল ফিতর আদায় করি। ঈদের পর দিন থেকে পরবর্তী ২৮/২৯ দিনের মধ্যে ছয়টি রোজা একত্রে বা ভিন্ন ভিন্নভাবে আদায় করে নেওয়ার কথা হাদিসে রয়েছে। প্রিয় নবী (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসের সিয়াম পালন করবে, এরপর শাওয়াল মাসে ছয়টি সিয়াম পালন করবে, তার সারা বছর সিয়াম পালন করার মতো হবে (মুসলিম)। সেই সঙ্গে রমজান মোবারকের পরে প্রতি রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা, দান-সদকা করা, নিজেকে পাক ও পবিত্র রাখা, সব গুনাহ থেকে নিজেকে রক্ষা করা, দীন, ধর্ম ও কল্যাণকর কাজে সর্বাগ্রে সাধ্যমতো অংশগ্রহণ করা। বিশ্ব মুসলিমের জন্য রহমত বরকত মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকা। সর্ব রকম অকল্যাণ ও গুনাহর কাজ থেকে নিজেকে রক্ষা করা। হিংসা-বিদ্বেষ, দুশমনি, সমালোচনা, গিবত এসব কবিরা গুনাহ থেকে নিজেকে রক্ষা করা। মিথ্যা কথা বলা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া, মিথ্যা কসম খাওয়া, উত্তরাধিকার থেকে হকদারকে বঞ্চিত করা, আত্মীয়তার বন্ধন নষ্ট করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, বিচারে পক্ষপাতিত্ব করা ও অবিচার করা, ব্যবসায় ওজনে কম দেওয়া, অধিক মুনাফার আশায় মাল স্টক করে চড়া দামে বিক্রি করা, ধোঁকা দেওয়া, কারও মান-সম্মান সম্পদ নষ্ট করা, অহংকার ও তাকাব্বুরি করা, সুদ ঘুষসহ যাবতীয় অন্যায় অবিচার ও অশ্লীলতা থেকে নিজের ইমান আমলকে রক্ষা করে, আল্লাহপাকের ওপর ইয়াকিন বিশ্বাসের সঙ্গে দুনিয়ায় মুসাফিরের মতো জীবনযাপন করে হায়াতে জিন্দেগির শেষ পর্যন্ত উপস্থিত হওয়া।

লেখক : ইমাম ও খতিব, কাওলার বাজার জামে মসজিদ, দক্ষিণ খান, ঢাকা।

কিউএনবি/অনিমা/০৫ এপ্রিল ২০২৪,/দুপুর ১২:৩৬

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

September 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit