জালাল আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : বামপন্থী ছাত্র সংগঠন ‘সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট’ এর চার দশক পুর্তি উপলক্ষে এক ছাত্র সমাবেশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলায় অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তারা ‘জ্ঞান, বিজ্ঞান এবং মনুষ্যত্ব ধ্বংসের জাতীয় শিক্ষাক্রম—২০২১’ বাতিলের দাবিতে ও ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান। আজ ২৩ জানুয়ারী সোমবার দুপুরে সংগঠনের সভাপতি সালমান সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে ও দপ্তর সম্পাদক অরূপ দাস শ্যামের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ (মার্কসবাদী) দলের প্রধান সমন্বয়ক কমরেড মাসুদ রানা, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি সাদিকুল ইসলাম সাদিক।
সমাবেশের শুরুতেই মহান নভেম্বর বিপ্লবের রুপকার মহামতি লেনিনের মৃত্যু শতবর্ষের অস্থায়ী বেদিতে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পন করেন বাসদ (মার্কসবাদী)’র সমন্বয়ক কমরেড মাসুদ রানা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ সহ সংগঠনের বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃবৃন্দ। ছাত্র সমাবেশে কমরেড মাসুদ রানা বলেন,”আমরা আওয়ামীলীগের অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে বসবাস করছি। গত ৭ জানুয়ারি যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেনি।
সরকার গায়ের জোরে তাদের মতামত জনগণের উপর চাপিয়ে দিয়ে দেশে একটা ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছে, যা জগদ্দল পাথরের মত আমাদের উপর চেপে বসেছে। অনুরূপ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্রলীগ তাদের দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত করে রেখেছে। এ থেকে মুক্ত হতে হলে ছাত্রদের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা প্রয়োজন। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে নিশ্চয়ই ছাত্ররা এগিয়ে আসবে এই প্রত্যাশা করছি এবং বিশ্বের ইতিহাসে একটা শোষণ বঞ্চনাহীন সমাজ ব্যবস্থা লেলিন ১৯১৭ সালে যেমন রাশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন সেরকম সমাজব্যবস্থা বাংলাদেশেও প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, “আজ বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদী পুঁজিবাদী দেশগুলো যুদ্ধ বাধাচ্ছে, গাজায় ইসরায়েল বর্বর হামলা চালাচ্ছে, ইউক্রেনে রাশিয়া হামলা করছে। পুরো পৃথিবীকে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো লুটপাট করছে। বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। আমেরিকা-ভারত-চীন—রাশিয়া তাদের স্ব স্ব স্বার্থে বাংলাদেশকে ব্যবহার করতে চাইছে। আর বাংলাদেশ একটা অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো তাদের স্বার্থ হাসিল করছে। আমরা ছাত্রদের আহ্বান জানাই দেশে দেশে সাম্রাজ্যবাদী পুঁজিবাদী দেশগুলোর আগ্রাসন এবং দেশে পুঁজিপতি শ্রেণীর দল আওয়ামী লীগের অগণতান্ত্রিক শাসন এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার।
রাফিকুজ্জামান ফরিদ তার বক্তব্যে বলেন,”সরকার একটা অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জাতীয় শিক্ষাক্রম—২০২১ চালু করেছে। আমরা এই শিক্ষাক্রম বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।কারণ এই শিক্ষাক্রমে বিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্বকে খর্ব করা হয়েছে, শিক্ষার সার্বজনীন অধিকার থেকে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হবে, ঝরে পড়ার হার বাড়বে, শিক্ষা সংস্কৃতি মনুষ্যত্ব ধ্বংস করবে। তিনি অবিলম্বে এই শিক্ষাক্রম বাতিল করে ছাত্র—শিক্ষক—অভিভাবক—বুদ্ধিজী
সভাপতি সালমান সিদ্দিকী তার বক্তব্যে বলেন, “মানুষ যত কম জানবে, তত শাসক শ্রেণীর ভালো। কারণ শাসকরা জানে জনগণের অজ্ঞতাই শাসকশ্রেণির ক্ষমতার উৎস। শিক্ষার্থীরা যেন নৈতিকতা—মনুষ্যত্ব নিয়ে দাঁড়াতে না পারে, তার জন্য তাদের নৈতিক মেরুদণ্ডকে ভেঙ্গে দেয়ার নানান আয়োজন আমাদের সমাজে চলছে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট শাসক শ্রেণীর এই চক্রান্তকে রুখে দেবে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট শুধুমাত্র শিক্ষার আন্দোলন করে না, শিক্ষা সংস্কৃতি মনুষ্যত্ব রক্ষার সংগ্রাম একই সাথে করে।” তিনি সামনের দিনের সেই লড়াই—সংগ্রামে ছাত্রদের অংশগ্রহণের আহবান জানান।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল কলাভবন, ব্যবসায়ে অনুষদ, মধুর ক্যান্টিন, লাইব্রেরি, টিএসসি হয়ে অপরাজেয় বাংলার সামনে এসে শেষ হয়।
কিউএনবি/আয়শা/২৩ জানুয়ারী ২০২৪,/রাত ১০:৪৫