এ আয়াতে সরাসরি দিনারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। দিনার হলো পুরনো স্বর্ণমুদ্রা। বাইজেন্টিনীয় স্বর্ণমুদ্রা দিনারিয়াস থেকে আরবি মুদ্রা দিনারের উৎপত্তি বলে মুদ্রা বিশেষজ্ঞরা মনে করে থাকেন। এর বহুবচন হলো দানানির। সাধারণত ৪.২৫ গ্রাম স্বর্ণে এক দিনার হয়।
ডেস্ক নিউজ : অতীতের কিছু ঘটনা বর্ণনাকালে পবিত্র কোরআনের কয়েক স্থানে মুদ্রার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআন নাজিল হওয়ার সময় আরবে কী মুদ্রা চালু ছিল—এ সম্পর্কে আমরা কিছু তথ্য সরাসরি কোরআন থেকে জানতে পারি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আহলে কিতাবের মধ্যে কেউ কেউ এমন আছে যে, যদি তাদের নিকট স্বর্ণের স্তূপ গচ্ছিত রাখো, তবে তোমাকে তা ফেরত দেবে, পক্ষান্তরে তাদের কেউ কেউ এমন যে একটি দিনারও যদি তাদের নিকট গচ্ছিত রাখো, তার পেছনে লেগে না থাকলে সে তোমাকে তা ফেরত দেবে না, এটা এ জন্য যে তারা বলে, নিরক্ষরদের প্রতি আমাদের কোনো দায়-দায়িত্ব নেই, বস্তুত তারা জেনেশুনে আল্লাহর সম্পর্কে মিথ্যা বলে।’ (সুরা : আলে-ইমরান, আয়াত : ৭৫)
এ আয়াতে সরাসরি দিনারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। দিনার হলো পুরনো স্বর্ণমুদ্রা। বাইজেন্টিনীয় স্বর্ণমুদ্রা দিনারিয়াস থেকে আরবি মুদ্রা দিনারের উৎপত্তি বলে মুদ্রা বিশেষজ্ঞরা মনে করে থাকেন। এর বহুবচন হলো দানানির। সাধারণত ৪.২৫ গ্রাম স্বর্ণে এক দিনার হয়।
সুরা ইউসুফ পবিত্র কোরআনের ১২তম সুরা। এ সুরার ২০ নম্বর আয়াতে দিরহামের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা (ভাইয়েরা বা কাফেলার লোকেরা) তাকে [ইউসুফ (আ.)] স্বল্প মূল্যে—মাত্র কয়টি দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করে দিল, তারা ছিল তাকে তুচ্ছ জ্ঞানকারী!’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ২০)
এর মাধ্যমে পবিত্র কোরআনে সরাসরি ‘দিরহাম’ নামক মুদ্রার উল্লেখ পাওয়া গেল। দিরহাম হলো রৌপ্যমুদ্রা। সাধারণত তিন গ্রাম রুপা দিয়ে এক দিরহাম তৈরি করা হয়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সাম্রাজ্যে রুপার পরিমাণে হেরফের হয়েছিল, তাই দিরহামের একাধিক মান প্রচলিত। উসমানি খিলাফতে এক দিরহাম ৩.২০৭ গ্রাম রুপা দিয়ে তৈরি করা হতো। উমর (রা.)-এর সময় ১৮ হিজরি তথা ৬৩৯ ঈসায়ি সালে প্রথম ১৪ কিরাত পরিমাপের দিরহাম প্রবর্তন করার ইতিহাস পাওয়া যায়।
সুরা কাহফে সাতজন যুবকের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। তাদের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে প্রসঙ্গক্রমে মুদ্রার বিষয় এসেছে। সেই সাতজন যুবক একটি গুহায় আশ্রয় নিয়েছিল। আসহাবে কাহফ জাগার পর সমকালীন সমাজে তাদের যে সমস্যা দেখা দেয় তার একটি ছিল বাজারে মুদ্রা অচল সাব্যস্ত হওয়া। গুহাবাসী লোকেরা গুহায় আশ্রয় নেওয়ার সময়কালের মুদ্রা নিয়েই ঘুমিয়ে ছিল। জাগ্রত হওয়ার পর যখন একজন সে মুদ্রা নিয়ে বাজারে গেল, তখন লোকেরা এ মুদ্রা প্রাচীন ও অচল সাব্যস্ত করে। সজ্ঞানে এ মুদ্রা নিয়ে বাজারে আসায় লোকজন তাদের সন্দেহ করে। মুদ্রা বহনকারী লোকটিও ঠিক তখন বুঝতে পারে যে গুহায় তারা দীর্ঘ সময় কাটিয়েছে। এভাবে তারা তাদের গুহায় অবস্থানের সময় সম্পর্কেও ধারণা করতে সক্ষম হয়।
আল কোরআনের সুরা কাহফের এ ঘটনা থেকে সুপ্রাচীন কাল থেকে মুদ্রা ব্যবহারের উদাহরণ পাওয়া গেল। একই সঙ্গে এক সময়ের মুদ্রা অন্য সময়ে অচল হয়ে যাওয়ার ঐতিহ্যটিও যে অতি প্রাচীন তা-ও জানা গেল। সুরা কাহফের এ আয়াতে যে মুদ্রার কথা বলা হয়েছে তার নাম ‘ওয়ারাক’। প্রাচীন আরবে রৌপ্যমুদ্রা বলতে ওয়ারাককে বোঝাত। ফলে বোঝা গেল গুহাবাসীরা যে মুদ্রা দিয়ে বাজারে লোক পাঠিয়েছিল তা ছিল সম্ভবত প্রাচীন রৌপ্যমুদ্রা।
কিউএনবি/আয়শা/০১ অক্টোবর ২০২৩,/রাত ৮:৫৫